সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে সংখ্যালঘুদের ভোট দেয়া সম্ভব হবে না

0
378

হিল ভয়েস, ২০ নভেম্বর ২০২৩, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক, সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় অভিযুক্ত এমন কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দেয়ার জন্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে। সংগঠনে দপ্তর সম্পাদক মিহির রঞ্জন হাওলাদার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞাপিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সম্মেলনে বলা হয়, যদি ঐ ধরনের ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষে তাদের ভোট দেয়া সম্ভব হবে না।

বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, আজ (২০ নভেম্বর, ২০২৩) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া) মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের সকল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দল ও জোটকে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের লক্ষ্যে দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এ মর্মে আশা প্রকাশ করা হয় যে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও জোট নির্বাচনের পূর্বে তাদের ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে ৭২-র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষা ও সমঅধিকার- সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য চুক্তি, পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্যে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়নে অঙ্গীকার প্রদান করবেন। এতে আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ২০০১-২০০৬ সালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণ এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্যে তৎকালীন জেলা জজ এবং বর্তমানে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব সাহাবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশাবলী বাস্তবায়ন এবং জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে জাতীয় সংসদসহ জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায় যথাযথ অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়সমূহ অঙ্গীকার প্রদানের আশা প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ধর্র্র্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে তাদের নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানে আগ্রহের কথা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ৮ দফা প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে- (১) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের তাগিদে নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও অপরাপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যথাযথ ভূমিকা পালন; (২) ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম বাধার সম্মুখিন না হয় এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের সমান সুযোগ পায় তার জন্যে নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি; (৩) নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ। যদি কোনো প্রার্থী, কোনো দল বা জোট নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে তবে অনতিবিলম্বে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা; (৪) নির্বাচনের পূর্বাপর সময়কালে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং জননিরাপত্তা, আইন-শৃংখলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের তাগিদে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ, আনসার ইত্যাদি মোতায়েনের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি-র নিয়মিত টহলদানের ব্যবস্থা করা এবং নিয়মিত পরিস্থিতি মনিটরিং-র জন্যে একটি ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করা; (৫) নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংখ্যালঘু নিরাপত্তায় গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সকল আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচনের প্রার্থীসহ প্রার্থীর সমর্থক সকলকে সম্যকভাবে অবহিত করা এবং রেডিও, টেলিভিশনে তা জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রচার করা; (৬) সকল ধর্মীয় উপাসনালয় যথা- মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গীর্জা নির্বাচনী প্রচারকাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; (৭) ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বিবৃতি, মিথ্যা গুজব প্রচার বা এ ধরণের যাবতীয় প্রচারণা বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় ক্ষতিকর কার্য হিসেবে অপরাধ গণ্যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং একই সাথে তাৎক্ষণিকভাবে দায়ী ব্যক্তিদের প্রার্থীতা বাতিলের ব্যবস্থা করা; (৮) নির্বাচনের দু’দিন আগে থেকে পরবর্তী পনেরো দিন পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিজিবি, র‌্যাবের টহলদানের ব্যবস্থা করা।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য- রঞ্জন কর্মকার ও ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শ্রী হীরেন্দ্রনাথ সমাজদার হীরু, রবীন্দ্রনাথ বসু, অভিজিৎ ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ সাধু, চিত্তরঞ্জন সাহা, সুধাংশু কুমার গাইন ও অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।