বান্দরবানে সাধারণ বমদের উপর নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহের বিক্ষোভ

0
88

হিল ভয়েস, ২ মে ২০২৪, ঢাকা: বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে চলমান যৌথবাহিনীর অভিযানে বম জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়নের প্রতিবাদে ও ঢালাও গ্রেফতার বন্ধের দাবিতে গতকাল ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহ।

গতকাল বুধবার (১ মে) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোর ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে আরো সংহতি জানায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

উক্ত সমাবেশে বলা হয়, গত ২ এপ্রিল বান্দরবানের দুই উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার জের ধরে ৭ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত যৌথ বাহিনী বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িতে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ সদস্যদের ধরতে গিয়ে বম জনগৌষ্ঠীর নারী, শিশু, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে ‘ গণগ্রেপ্তার, তল্লাশি, মামলা, হয়রানি’ করা হয়।

উক্ত সমাবেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, “শুধু বম নয়, সাথে ত্রিপুরা এবং মারমা জনগোষ্ঠীসহ অপরাপর জাতগোষ্ঠীগুলোকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে শাসকগোষ্ঠী। অপরাধীদের পরিবর্তে নিরপরাধীদের গ্রেপ্তার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।”

অলিক মৃ আরো বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে গর্ভবতী নারী থেকে দুধের শিশুকে পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। কীরকম অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। অথচ এই গর্ভবতী মহিলা এবং শিশু কিভাবে সন্ত্রাসী হতে পারে? আদিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে হলে পাহাড় থেকে সেনাশাসন বন্ধ করতে হবে। তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জোর দাবিও জানান।

সমাবেশে বম জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী এলাকার বাসিন্দা মিআ বম বলেন, “আমাদের এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের ওপর চরম নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার, বন্দি, উচ্ছেদ করার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি বাজার থেকে ৫ কেজির বেশি চাল ও মালামাল পরিবহনে বাধা দেয়া হচ্ছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। আমরা এসবের অবসান দাবি করছি।”

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীল বলেন, “ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা সত্য। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় যারা জড়িত, তাদেরকে প্রশাসন বিচারের আওতায় নিয়ে আসবে। কিন্তু এই ব্যাংক ডাকাতিকে কেন্দ্র করে যদি বম জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হয়, তা মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বম জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত হতে পারে না। শিশু, গর্ভবতী মাকে নির্যাতন করা হয়েছে, তারা তো ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত না।

এদিকে ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, “শাসকগোষ্ঠীর সৃষ্টি করা সস্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ এর ভুলের কারণে পুরো বম জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসীর খেতাব দেওয়া হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি উচ্ছেদের একটি ষড়যন্ত্র মাত্র।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি এন্টনি রেমা বলেন, কেএনএফ সৃষ্টির কারণ মূলত পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়ন। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এমন হত না। তাই এসব নাটক বন্ধ করে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বাংলাদেশ হিল উইমেনস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল এর নুমং প্রু মারমা ম্রো স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পায়া ম্রো বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য যে, গত ২ ও ৩ এপ্রিল পরপর রুমার সোনালী ব্যাংক শাখা এবং থানচির সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক শাখায় ডাকাতি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা অর্থ সহ ১৪টি অস্ত্র লুট করলে গত ৭ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই-এর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

আরো উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ভাগ করো শাসন করো উপনিবেশিক নীতির ভিত্তিতে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠনের ষড়যন্ত্র হিসেবে সেনাবাহিনী কর্তৃক কেএনএফ সৃষ্টি করা হয়। পরে অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ কর্তৃক ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণের তথ্য ফাঁস হলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হয় কেএনএফের সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে। এভাবে আজ কেএনএফ সেনাবাহিনীর বুমেরাং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।