মানবাধিকার কমিশনের সাথে ঐক্য পরিষদের বৈঠক: পাঁচ দফা প্রস্তাবনাসহ এক স্মারকলিপি পেশ

0
276

হিল ভয়েস, ১২ অক্টোবর ২০২৩, ঢাকা: রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজারস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ-এর সাথে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বৈঠকে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের কাছে পাঁচ দফা প্রস্তাবনাসহ এক স্মারকলিপি পেশ করেছে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত।

আজ ১২ অক্টোবর ২০২৩, বিকেল ৩টায় কমিশনের ঢাকার কাওরান বাজারস্থ কার্যালয়ে উক্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে পূর্ণকালীন সদস্য (ফুলটাইম মেম্বার) সাবেক সচিব মো. সেলিম রেজাসহ কমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ঐক্য পরিষদের পক্ষে নির্মল রোজারিও, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, রঞ্জন কর্মকার, মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব ও ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ূয়াও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

এসময় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সারাদেশে নির্বাচনের পূর্বাপর ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষায় কমিশন সর্বতোভাবে সচেষ্ট। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে একটি দিক নির্দেশনামূলক রূপরেখার খসড়া কমিশন ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে যা চূড়ান্ত করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে গোটা দেশ ও জাতি এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরা হবে।

ছবি: মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের কাছে পাঁচ দফা প্রস্তাবনাসহ স্মারকলিপি পেশ করছে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের স্মারকলিপিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরাজিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গভীর শঙ্কার ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং বলা হয়, সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও অতীতে এদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত আড়াই কোটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্যে তা’ মোটেই সুখকর ছিল না। একদিকে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে তাদের যথাযথ অংশীদারিত্ব-প্রতিনিধিত্ব থাকে না, অন্যদিকে নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না। নির্বাচনে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক স্বার্থে পবিত্র ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে ও উষ্কানীমূলক বক্তব্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে নির্বাচনী প্রচারণায় যদৃচ্ছভাবে ব্যবহার করে।

উক্ত স্মারকলিপিতে স্বার্থান্বেষী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি কর্তৃক আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে দেশের নানান জায়গায় মঠ-মন্দিরে ও উপাসনালয়ে হামলা, মূর্তি ভাংচুর ইত্যাদি অব্যাহত থাকার বিষয়টি কমিশনকে অবহিত করে নিদারুণ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

আরো পড়ুন

নির্বাচন কমিশনের সাথে ঐক্য পরিষদের বৈঠক, স্মারকলিপি পেশ

ঐক্য পরিষদ স্মারকলিপিতে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে- (১) নির্বাচনের পূর্বাপর বিশেষ করে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নির্বাচনী এলাকাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ স্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করে এতে বিশেষ নজরদারী ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন, সাংবাদিক, আইনজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করা এবং উক্ত মনিটরিং সেল থেকে নিয়মিত রিপোর্ট নির্বাচনের পূর্বাপর নির্বাচনকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন কমিশনে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা (২) নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত উপদ্রুত এলাকা সফর করে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংস রিপোর্ট প্রণয়ন, ঘটনার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার জন্যে প্রশাসনকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া, প্রশাসনের মধ্যে কারো এসব ঘটনার ব্যাপারে নির্লিপ্ততা, গাফিলতি ও পক্ষপাতিত্ব দেখা দিলে বা অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তাদেরকেও বিচার ও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরী ভিত্তিতে সুপারিশ করা (৩) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ, শিশুদের নিরাপত্তায় গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সকল আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচনের প্রার্থীসহ প্রার্থীর সমর্থক সকলকে সম্যকভাবে লিখিতভাবে অবহিত করা (৪) নির্বাচনী প্রচারণায় সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বিবৃতি ও মিথ্যা গুজব প্রচার নিষিদ্ধের জন্যে কমিশনের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা। যদি কোনো প্রার্থী বা কোনো দল নির্বাচনে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে তবে তার শাস্তির বিধান রাখার ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নেয়া  ও (৫) সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভিকটিমদের আইনী সহায়তা প্রদানে মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবীদের সাথে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সকল সদস্যেরও প্রয়োজনে সহায়তা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া।