‘সাঁওতালদের শিক্ষক নেই, তবে মাতৃভাষায় বই আছে’

0
523

হিল ভয়েস ডেস্ক, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বাংলাদেশ:  প্রধান প্রধান নৃগোষ্ঠীর ভাষার পাঠ্যবই প্রণয়ন করে দেওয়া হয়েছে তাদের শিক্ষার্থীদের হাতে। কিন্তু সেসব ভাষার পাঠ দানে নিযুক্ত হয়নি কোনো শিক্ষক।

বহুবিধ আগ্রাসনে, সারা বিশ্বে অস্তিত্বের সংকটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা। তাই তাদের ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষায় ২০১৯ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। কিন্তু, ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী সালাম, বরকত, রফিক, সফিকের দেশে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে কেমন আছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা?

বাঙালির একুশে এখন বিশ্বজনীন। তাই সব বিপন্ন মাতৃভাষা রক্ষার দায় অনেকটা বাঙালিরও এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলধারার সঙ্গে মিশে যেতে যেতে নিজের ভাষা-সংস্কৃতিকে পরিবারের ছোট্ট পরিমণ্ডলে হলেও পুষে রাখার সুপ্ত বাসনা সাঁওতাল পল্লীর কিশোরী কাজুরী হামব্রমের। প্রধান প্রধান নৃগোষ্ঠীর ভাষার পাঠ্যবই প্রণয়ন করে দেওয়া হয়েছে তাদের শিক্ষার্থীদের হাতে। কিন্তু সেসব ভাষার পাঠ দানে নিযুক্ত হয়নি কোন শিক্ষক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, পাঁচ দশক আগেও ৩৭টি ক্ষুদ্র-জাতিগোষ্ঠীর ৬০ হাজারের বেশি পরিবারের বসবাস ছিলো বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে। নানা সংকটে, আগ্রাসনে ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়। এখন এ অঞ্চলে সংখ্যা নেমে এসেছে কুড়ি হাজারের নিচে। বিলুপ্ত হয়েছে ৮টি ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠী। বেরোবির অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘তাদের যে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তা অপর্যাপ্ত। তাদের পড়ানোর জন্য শিক্ষক নেই।’

গাইবান্ধার আদিবাসী সাঁওতালদের জীবনমান ও শিক্ষার উন্নয়নে জেলা প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার অসহায়-অবহেলিত আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল একাধিকবার সরেজমিন সাঁওতাল পল্লিগুলো পরিদর্শন করে এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সাঁওতালদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত মাদারপুর সাঁওতাল পল্লির শ্যামল মঙ্গল রমেশ স্মৃতি বিদ্যানিকেতনের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তদুপরি বিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ বিদ্যানিকেতনটিতে সাঁওতাল ছাত্রছাত্রীদের তাদের নিজস্ব সানতালী ভাষায় শিক্ষাদান করা হয়। বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক প্রিসিলা মুরমুর কাছে এ আর্থিক সহায়তার বরাদ্দপত্র ও চেক হন্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল সাঁওতালদের বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, জমি আছে ঘর নেই অথবা জরাজীর্ণ বাড়িঘরের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের পাশে থাকার লক্ষ্য নিয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজনকে সব কল্যাণমূলক ও সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।