জাতিসংঘের পার্মানেন্ট ফোরামে আইটেম ৬-উপর জেএসএস প্রতিনিধির বক্তব্য

0
101

হিল ভয়েস, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি মনোজিত চাকমা জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক পার্মানেন্ট ফোরামের ২৩তম অধিবেশনে এজেন্ডা আইটেম ৬: অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কর্তৃক বিবেচনাধীন ইস্যু, আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনের আউটকাম ডকুমেন্ট এবং জরুরী বিষয়সমূহসহ পার্মানেন্ট ফোরামের ভবিষ্যত কার্যক্রম”-এর উপর বক্তব্য রাখেন।

জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি তার বক্তব্যে বলেন, পার্মানেন্ট ফোরাম এ যাবত্‌ নানা বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ গ্রহণ করেছে। আমি জানি না, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে এযাবত ইকোসক কি পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন ২০১১ সালে পার্মানেন্ট ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে নিয়োগের পূর্বে সেনাবাহিনীর মানবাধিকার রিপোর্ট যাচাই করার সুপারিশ গ্রহণ করেছিল। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে ইকোসক কি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল আমার তা জানা নেই। এ ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পার্মানেন্ট ফোরাম কি কোন ফলোআপ কার্যক্রম হাতে নিয়ে থাকে?

উল্লেখ্য যে, যদিও পার্মানেন্ট ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত সেই সুপারিশ নিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরঞ্চ বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া থেকে ধীরে ধীরে সরে এসেছে এবং বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক সামরিকায়নের পথ গ্রহণ করেছে এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সামরিক উপায়ে ফ্যাসীবাদী কায়দায় সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বের মতো বর্তমানে আদিবাসী জুম্মদের ‘জীবন আমাদের নয়’-এর পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনীর অত্যাচার-উত্‌পীড়নের বিরুদ্ধে জুম্ম জনগণ কর্তৃক প্রতিবাদ করলে সেনাবাহিনী বলে থাকে যে, “দেশ আমার মাটি আমার”। তার অর্থ হচ্ছে সেনাবাহিনীর মতে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি এখন আর জুম্মদের নয়।

পরিশেষে জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি মনোজিত চাকমা পার্মানেন্ট ফোরাম কর্তৃক গৃহীত সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য ইকোসক কি পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদ্বির চালাতে পার্মানেন্ট ফোরামের প্রতি আমি আহ্বান জানান।

পার্মানেন্ট ফোরামের ২৩তম অধিবেশন গত ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী ২৬ এপ্রিল শেষ হতে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে প্রীতি বি চাকমা, চঞ্চনা চাকমা ও মনোজিত চাকমা এই অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের আদিবাসীদের প্রতিনিধি হিসেবে মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, চন্দ্রা ত্রিপুরা, উটিং মারমা, টনি চিরান, তৈসা ত্রিপুরা, রাজকুমারী আয়েত্রি রায়, আর্যশ্রী চাকমা প্রমুখ অংশগ্রহণ করছেন।

বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মশিউর রহমান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা ছাড়াও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফিল্ড ইন্টালিজেন্স (ডিজিএফআই), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন।

উল্লেখ্য যে, প্রতি বছরের নায় এ বছর ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আদিবাসী প্রতিনিধিদের উপর কড়া নজরদারি রেখেছিলেন।