লংগদুতে জুম্মর রেকর্ডভুক্ত জায়গায় বসতবাড়ি নির্মাণে বিজিবি কম্যান্ডারের বাধা

0
250

হিল ভয়েস, ১২ মে ২০২৩, রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলার ৪নং বগাচতর ইউনিয়নে ৯নং মারিশ্যাচর মৌজার চিবেরেগা গ্রামে জুম্মর নামে রেকর্ডভুক্ত (বন্দোবস্তীকৃত) জায়গায় অসহায় এক জুম্ম নারী বসতবাড়ি নির্মাণ করতে গেলে লংগদুর ৩৭ বিজিবি রাজনগর জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল শাহ মোঃ শাকিল আলম (পিএসসি) বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী বিজিবি কম্যান্ডারের এই বাধা প্রদানকে ‘অযৌক্তিক’, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ বলে আখ্যায়িত করেন।

ভুক্তভোগী নারীর নাম চম্পা চাকমা (৪৫)। তিনি গ্রামের ভূমিহীন ও স্বামী পরিত্যক্ত অসহায় এক নারী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লংগদুর ৯নং মারিশ্যাচর মৌজায় চিবেরেগা গ্রামে পুনং চান চাকমা, পিতা- ধঙ্গ চাকমা এর নিজ নামে হোল্ডিং নং আর-১৪ এর আওতায় ২.০০ (দুই) একর পাহাড় ভূমি বন্দোবস্তী রয়েছে।

পুনং চান চাকমা ইতোমধ্যে উক্ত জায়গা থেকে এলাকার শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে ০.৬০ (ষাট শতক) একর জায়গা ‘চিবেরেগা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ এর নামে দান করেন। অবশিষ্ট ১.৪০ (এক একর ও চল্লিশ শতক) একর জায়গা স্থিতি রয়েছে।

পুনং চান চাকমা সম্প্রতি তার অবশিষ্ট জায়গার একটা অংশে চম্পা চাকমাকে সাময়িকভাবে বসবাস করার জন্য বসতবাড়ি নির্মাণ করার অনুমতি দেন। জায়গার মালিকের সম্মতিক্রমে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় চম্পা চাকমা সম্প্রতি বসতবাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

এক পর্যায়ে বাড়িটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে গেলে পার্শ্ববর্তী চাল্যাতুলি বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মোঃ আনোয়ার সেখানে এসে ‘জোন কমান্ডারের আদেশ’ এর কথা বলে বাড়িটি নির্মাণের বাধা প্রদান করেন এবং জোন কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

ইতিমধ্যে এবিষয়ে স্থানীয় গ্রাম প্রধান বিনয় প্রসাদ কার্বারী বেশ কয়েকবার জোন কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করে জায়গার যাবতীয় বৈধ কাগজ পত্রাদি প্রদান করলে জোন কম্যান্ডার পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান।

কিন্তু প্রায় দু’মাস যাবৎ অপেক্ষা করার পরও কোন ধরনের সমাধান না পেয়ে আজ ১২ মে ২০২৩ সকাল ১০টার দিকে বিনয় প্রসাদ কার্বারী ও ৯নং মারিশ্যাচর মৌজার হেডম্যান সুনির্মল চাকমা সম্মতি নিয়ে জোন কমান্ডারের সাথে সাক্ষাত করতে যান। এসময় তারা উক্ত অসহায় নারীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট বগাচতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্রসহ অন্যান্য বৈধ পত্রাদি জোন কম্যান্ডারের নিকট জমা দেন এবং বিষয়টি সুবিবেচনার জন্য জোন কমান্ডারকে আবারো অনুরোধ জানান।

কিন্তু জোন কমান্ডার তাদের কোনো কথা কর্ণপাত না করে সরাসরি বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে আবারো নিষেধ করেন এবং উল্টো এক সপ্তাহের মধ্যে ভূমি অফিসের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জায়গাটি পরিমাপ ও পরিচিহ্নিত করার কথা বলেন।

জায়গার বন্দোবস্তীর উপযুক্ত দলিলপত্রাদি থাকার পরেও কী কারণে কোন উদ্দেশ্যে জোন কম্যান্ডারের এই বসতবাড়ি নির্মাণে বাধা প্রদান করছেন তা এলাকাবাসীর বোধগম্য নয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী এক গ্রামবাসী জানান।

উল্লেখ্য যে, কিছুদিন আগেও চিবেরেগা এলাকার সচেতন শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যোগে চাকমা বর্ণমালা ও মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে স্বনামখ্যাত ‘নোয়ারাম চাঙমা সাহিত্য সংসদ’ এর একটি শাখা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেটা নির্মাণেও বাধা প্রদান করেন উক্ত জোন কম্যান্ডার।

আরো পড়ুন

লংগদুতে নোয়ারাম সাহিত্য সংসদের কার্যালয় নির্মাণে বিজিবির বাধা