মৌলভীবাজারে আবারও আদিবাসী খাসিয়াদের ৩ হাজার পানগাছ কর্তন এবং হামলার চেষ্টা

0
307

হিল ভয়েস, ১০ মে ২০২৩, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আল্লাদাত চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির আদিবাসী খাসিয়াদের ৪টি পানজুমের ৩ হাজার পানগাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং আদিবাসী খাসিয়াদের ওপর হামলার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার পর গত সোমবার রাতে ভুক্তভোগী অলমি প:তাম আল্লাদাত চা-বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন, পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদের নাম ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে বড়লেখা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগে বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির হেডম্যান অলমি প:তাম বলেন, উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বেরেঙ্গা পানপুঞ্জিতে ব্রিটিশ আমল থেকে ৬০টি খাসিয়া পরিবারের প্রায় ৫০০ জন মানুষ বসবাস করছেন। বংশ পরম্পরায় তারা পানজুম ও সুপারি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত সোমবার সকাল আনুমানিক ৬টার দিকে আল্লাদাত চা-বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে বাগানের পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদসহ কয়েকজন লোক বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির দক্ষিণ পাশের খাসিয়াদের লাগানো ৪টি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলে। বিষয়টি দেখে খাসিয়ারা বাগানের লোকজনকে বাধা দিতে গেলে তারা তাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় বাধা দিতে গেলে বাগানের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেছে। যে কারণে ভয়ে তারা প্রতিবাদ করেননি। পরে পুঞ্জির লোকজন ছুটে এলে বাগানের লোকজন চলে যায়। সে সময় তারা খসিয়াদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে তাদের বেরেঙ্গা পানপুঞ্জি থেকে উচ্ছেদ করবে বলেও হুমকি দিয়েছে। এতে তারা আতঙ্কে রয়েছেন।

অলমি আরো বলেন, ‘আমাদের গাছ কেটে ফেলায় ও অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করায় আমরা এখন আতঙ্কে আছি।’

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জজকোর্টের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সুবিমল লিন্ডকিরি বলেন, ‘পুঞ্জির খাসি ও মান্দি জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক আছে। তাদের ঐতিহ্যগত থাকার অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। রাষ্ট্র একক কোনো জাতি, ধর্ম ও গোষ্ঠীর না। বহুত্ববাদী যে ঐতিহ্য আছে, সেটাকে ধরে রাখতে হবে। বারবার গাছ কেটে, মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিপদে ফেলে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না। যারা পান গাছ কেটেছে, তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদে যেন পানজুম করা যায়, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।’

উল্লেখ্য যে, এযাবত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় আদিবাসী খাসিয়া ও গারোদের উপর এই ধরনের মোট ছয়টি ঘটনা ঘটেছে। নিচে তা উল্লেখ করা হলো:-

গত ৪ আগস্ট ২০২০, কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের সিঙ্গুর পুঞ্জিতে স্থানীয় বাঙালি ফখরুল গংরা কর্তৃক রাতের আধারে খাসিয়াদের তিনটি পানের জুমে প্রায় ৮ শতাধিক পান গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা কর্তন।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, স্থানীয় বাঙালি মুসলিম ভূমিদস্যু কর্তৃক কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে কাটাবাড়ি পানপুঞ্জির পানজুমে হামলা, পানজুম জবরদখল ও পান লুটপাট।

গত ২৬ মে ও ৩০ মে ২০২১ পর পর দুটি ঘটনায় ঘটেবড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে বহিরাগত দুর্বৃত্তদের কর্তৃক আদিবাসী খাসি জনগণের তিনটি পানজুম বেদখল এবং অন্তত এক হাজার পান গাছ কেটে দেয়া হয়েছে।

গত ১৪ জানুয়ারী ২০২২,বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বনাখলাপুঞ্জির একটি পান জুমের প্রায় ৪০০ পানগাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ৬-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, কুলাউড়ার মুরইছড়া খাসিয়া পুঞ্জির একটি পানজুমে দুর্বৃত্তদের দ্বারা অন্তত ১৫০টি পানগাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

গত ২৪ আগস্ট ২০২১, কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বেলুয়া খাসিয়া পুঞ্জিতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ২৫ একর জমির পানজুমের ২৮০০ পানগাছ হারিয়ে এখন নিস্ব পাঁচ খাসিয়া ও গারো পরিবার। এতে তাদের প্রায় ১৮ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।