মানবাধিকার বিষয়ে আদিবাসীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে: অনলাইন আলোচনায় বক্তারা

0
666

হিল ভয়েস, ১১ আগস্ট ২০২১, ঢাকা: বিশ্ব আদিবাসী দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে গত ১০ আগস্ট ২০২১, কাপেং ফাউন্ডেশন কর্তৃক ও নেদ্যারল্যান্ডস এ্যাম্বেসী বাংলাদেশ এর সহায়তায় “বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি” বিষয়ে অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেন, মানবাধিকার বিষয়ে আদিবাসীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমার সঞ্চালনায় এবং সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের সদস্য ও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য আরোমা দত্ত, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনএর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এবং আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, কাপেং ফাউন্ডেশন এর চেয়ারপারসন ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। এতে কী-নোট উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও পিএইচডি গবেষক অনুরাগ চাকমা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সহকারী অধ্যাপক এবং পিএইচডি গবেষক, অনুরাগ চাকমা তাঁর উপস্থাপনায় আদিবাসীদের উপর মানবাধিকার লংঘনের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন যাতে কাপেং ফাউন্ডেশনের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১৯-২০২০ সালের বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। পরিসংখ্যানে তিনি বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহ বিভিন্ন গ্রাফে উপস্থাপন করেন। তিনি বহুল আলোচিত লাকিংমে চাকমার কেস সহ আদিবাসী নারীদের উপর সহিংসতা এবং আদিবাসীদের ভূমি হারানোর কেসগুলোও আলোচনায় নিয়ে আসেন।

পরবর্তীতে তিনি মানবাধিকার রিপোর্টে উল্লেখিত কিছু সুপারিশ উল্লেখ করেন। সুপারিশসমূহ হলো- ভিক্টিমদের আইনী সহায়তা দেওয়া, আদিবাসীদের অধিকার এবং আদিবাসীদের সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, সরকারিভাবে আইন ও নীতির সংস্কার করা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, কাপেং ফাউন্ডেশন কর্র্তৃক মানবাধিকার রিপোর্টগুলো প্রতিবছরই প্রকাশ করা হয় কিন্তু এতে সরকারের কোন পদক্ষেপ দেখা যায় না। সরকার বা রাষ্ট্র আদিবাসী বান্ধব না। যার কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কোন বিচার বা আইনী পদক্ষেপ নেই।

শামসুল হুদা বলেন, আদিবাসীদের ইতিহাস আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। আদিবাসীরা এই দেশের সকল সংগ্রামের সামনের সারির মানুষ। তাই তাদের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, মানবাধিকার রিপোর্ট আদিবাসী জনসাধারণ এবং একটি রাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আদিবাসীদের প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে রিপোর্ট থাকা দরকার যাতে করে সরকার, মিডিয়া, প্রশাসন ও সমাজ অবগত থাকবে এবং লবি-এডভোকেসিতে কাজে লাগানো যাবে।

সংসদ সদস্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এর সাবেক সদস্য এরোমা দত্ত বলেন, কাপেং ফাউন্ডেশনের মানবাধিকার রিপোর্টের জন্য সাধুবাদ জানাই। তিনি কিছু পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমাদের আরও কৌশলী হতে হবে। এ রিপোর্টটি বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী মহলে শেয়ার করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ বাড়াতে হবে, আলোচনা করতে হবে এবং এভাবে সমাধানে পৌঁছাতে হবে।

শাহীন আনাম বলেন, আদিবাসীদের অস্তিত্ব হারিয়ে গেলে কীভাবে বলবো যে বাংলাদেশ একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ? প্রত্যেক আদিবাসী দিবসে একই কথা এবং একই প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্র দিয়ে থাকেন। কিন্তু আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না।

মেজবাহ কামাল বলেন, আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের লড়াইটা একা আদিবাসীদের লড়াই না, এটা আমাদের মিলিত লড়াই। এ লড়াইয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

নেদারল্যান্ড এ্যাম্বেসীর সিনিয়র পলিসি এডভাইজার রুজিন সারওয়ারও আলোচনায় অংশ নেন। পরে উন্মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেন খোকন সুইটেন মুর্মু, ইউজিন নকরেক, শান্তিবিজয় চাকমা প্রমুখ।