ভূমিপুত্র আলফ্রেড সরেন হত্যা ও বিচারহীনতার ২০ বছর: সমতল আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা নিরসনে পৃথক ভূমি কমিশন চাই*

0
965

              খোকন সুইটেন মুরমু**            

ক. ভূমিকা
আমরা আজ সমবেত হয়েছি ভূমিপুত্র আলফ্রেড সরেন হত্যা ও বিচারহীনতার ২০ বছর পূর্তিতে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে। আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলতে প্রথমেই চলে আসে ভূমির উপর অধিকার। আদিবাসী সমাজে ভূমিই হল প্রদান সম্পদ। আদিবাসীরা ঐতিহাসিকভাবে ভূমির সামাজিক মালিকানায় অভ্যস্থ। ভূমি ও সম্পদের ব্যাক্তিগত মালিকানার চাপ আদিবাসীদের উপর প্রশ্নহীনভাবে চাপিয়েছে রাষ্ট্র। ভূমি চিহ্নিতকরণের জন্য দলিল দস্তাবেজের মত কাগজ ও নথি সংরক্ষণের অভ্যাসও অধিকাংশ আদিবাসী এলাকায় কোনো সাধারন চল হয়ে দাঁড়ায়নি। ভূমিকেন্দ্রিক আদিবাসীদের পারস্পরিক দার্শনিক ভিত্তি যা বরাবর ভূমির সচলতা এবং পরিবর্তনশীলতার প্রতি সম্মান জানায় এবং ভূমিকে জীবনের এক অমর অস্তিত্ব মনে করে। কিন্তু রাষ্ট্র বা বাঙালি বা বনবিভাগের ভূমির প্রতি বিশ্বাস ও দর্শনের সাথে আদিবাসী এই ভূমি দর্শনের রয়েছে বিস্তর ফারাক। আর ভূমির প্রতি এই দর্শনগত বিরোধের সুযোগকে কাজে লাগিয়েই সংঘবদ্ধগোষ্ঠী আদিবাসীদের ভূমিহীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে ভূমিকে কেন্দ্র করে ভূমিদস্যূরা আজ তান্ডব-লীলায় মেতেছে। প্রতিনিয়ত আদিবাসীরা ভূমিদস্যূ কর্তৃক হত্যা, ধর্ষণ, মানসিক নির্যাতন, মিথ্যা মামলার হয়রানি, বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ, লুন্ঠন ও গুপ্ত হত্যার শিকার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা এ ধরনের মারাত্বক অপরাধ করেও পার পেয়ে যান। স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হবার পরও রাষ্ট্র প্রান্তিক মানুষের জীবন-মানের সুরক্ষা আজও নিশ্চিত করতে পারেনি। ভূমিপুত্র আলফ্রেড সরেন হত্যা ২০ বছর পরেও বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য আজ আমাদের বিচার চাইতে হচ্ছে। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে? সমতল আদিবাসীদের গণ-সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের, ‘সমতল আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা নিরসনে পৃথক ভূমি কমিশ চাই’ দাবিটি তাই আজ যোক্তিক।

খ. ভূমিপুত্র আলফ্রেড সরেন হত্যা ও বিচারহীনতার ২০ বছর
১৮ আগস্ট ২০০০। ‘নিজ জমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও হামলার সুষ্ঠ বিচারের দাবি’ নিয়ে ভীমপুরের আদিবাসীরা সকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ মহাদেবপুর থানা কমিটির কর্মসূচী অনুযায়ি ন-হাটার মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশে যাবার প্রস্তুতি নিতেছিল। আদিবাসীদের নিজস্ব ভূমি অধিকার, শত্রু সম্পত্তি ও খাস জমির ব্যপারে আদিবাসীদের সচেতন করা এবং নিজ ভূমিতে অধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ করার কাজে নিবেদিত তরুন এক যুবক সমাবেশে আদিবাসীদের নিয়ে যাবার উদ্যোগ গ্রহন করেছিল। ইতিমধ্যে যুবকটি সমতল আদিবাসীদের গণ-সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং ভীমপুরে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিই আলফ্রেড সরেন। ২০০০ সালের ১৮ আগস্ট নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে ভূমিদুস্যূ শিতেস-হাতেম গং কর্তৃক নৃশ্যংশভাবে খুন হন আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন।

গণতান্ত্রিক উপায়ে দাবি দাওয়া আন্দোলনকে রোধ করার জণ্য ষড়যন্ত্রকারী শিতেস-হাতেম গং হামলার জন্যে সমাবেশে যাবার এই সময়টিকে বেছে নিয়েছিল। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত শতাধিক বাঙালি দুষ্কৃতিকারি অর্তকিত হামলা চালায় ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে। আদিবাসীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের জিনিষপত্র ভাংচুর, গবাদি পশু লুন্ঠন, নারীদের শ্লীলতাহানি এবং বাড়ী ঘরে আগুন লাগানো হয়। নিজ ঘরে লুকানো আদিবাসী নারী-পুরুষ ও শিশুরা আগুন থেকে রেহাই পাবার জন্যে ঘর থেকে বের হতেই সন্ত্রাসীরা তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এই হামলার মূল টার্গেট আলফ্রেড সরেন একটা চালিতে লুকানোর চেষ্ঠা করলে সন্ত্রাসীরা তাকে টেনে বের করে দেশীয় অস্ত্র দা, বল্লম, রামদা-সুড়কি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। আলফ্রেড সরেনের মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর সন্ত্রাসীরা আদিবাসীদের গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিয়ে এলাকা পরিত্যাগ করেন। ভীমপুর গ্রাম থেকে নিকটবর্তী মহাদেবপুর থানা ১০ মিনিটের পথ হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন আলফ্রেড নিহত হবার চার ঘন্টা পর।

ভীমপুরের ইতিহাস
আদিবাসীদের ভোগ দখলকৃত ৯৫ একর জমিকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়বাহাদুর ও জমিদার বিমলেন্দু রায়বাহাদুরের নওগাঁ মহাদেবপুর থানার ৫টি মৌজা যথাক্রমে ভীমপুর, শিকারপুর, চক দাসড়া, দাসড়া ও বামনছাতার মোট ১৭৮৬ বিঘা জমি জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর পরিত্যক্ত ছিল। ১৯৬৫ সালে জমিদারদের ভারতে আশ্রয় নেবার কারনে জমি শত্রু সম্পত্তি আইনে সরকারের খাস খতিয়ানে রেকডভূক্ত হয়। সেই পরিত্যক্ত জমিতে ১৯৮৯ সালে সাঁওতাল আদিবাসীদের ২০ টি পরিবার রাজশাহী জেলার তানোর অঞ্চল থেকে এসে ভীমপুরের পরিত্যাক্ত খাস জমিতে বসতি গড়েন। কিছু পরিবার পরবর্তীতে অন্যত্র চলে গেলেও বাকি ১১ টি পরিবার এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

আদিবাসী পরিবারগুলোর বসতি স্থাপনের ব্যপারে ভীমপুরের প্রভাবশালী জোতদার শিতেস ভট্টাচার্য ওরফে গদাই লস্কর এবং সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাতেম আলীর সমর্থন ছিল। বাঙালি প্রতিবেশীদের খাস জমিতে আদিবাসী বসতি নিয়ে তেমন আপত্তি ছিল না। শিতেস-হাতেম গং এর সাথে আদিবাসীদের সর্ম্পকের অবনতি ঘটে যখন আশেপাশের পরিত্যাক্ত জমিতে আদিবাসীরা চাষাবাদ শুরু করেন। শিতেস-হাতেম গং প্রত্যেক আদিবাসী পরিবারের কাছে চাষাবাদের জন্যে মৌসুমী ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমান শষ্যের তোলা দাবি করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, এই খাস জমি রেকর্ডের সময় প্রত্যেক আদিবাসী পরিবারকে তারা ১.৬৬ একর করে রেকর্ড করে দিবেন। আদিবাসীরা জমি-জমার ব্যপারে অজ্ঞ হওয়ায় ও প্রতিশ্রুতির কথা মাথায় রেখে শিতেস-হাতেম গং এর তোলা দেওয়া শুরু করেন।

১৯৯৯ সালে ধান কাটার পর আদিবাসীরা আলফ্রেড সরেনের নেতৃত্বে শিতেস-হাতেম গং এর তোলা দেওয়া বন্ধ করে দেন। জমিতে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে তারা কোর্ট-কাচারিতে যাওয়া শুরু করেন। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রামে তাদের অংশগ্রহন জোরালো করতে শুরু করেন। শিতেস-হাতেম গং নিজেদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার কারনে ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে কয়েক দফা সশস্ত্র হামলা চালান।রেবেকা সরেন, নিহত আলফ্রেড সরেনের ছোট বোন ঘটনার দিন বাদী হয়ে শিতেস ভট্টাচার্য ওরফে গদাই লস্করকে প্রধান আসামী করে ৯১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলা নং- ৪২০/২০০০, তাং-১৮/০৮/২০০০। মামলাটি বর্তমানে হাইকোর্টে চলমান। ২০০১ সালে এ মামলায় আসামী লতিফ, খোকন, চয়ন ও উমর গ্রেপ্তার হলেও ৫ মাস জেল খাটার পর জামিনে তারা মুক্ত হন। এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারি শিতেস ভট্টাচার্য ওরফে গদাই লস্কর এবং হাতেম আলীকে প্রশাসন আজও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেন নি। প্রভাবশালী হত্যাকারীরা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আজও তৎপর।

২০০০ সালে আলফ্রেড সরেন নিহত হবার পর তখনকার এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত আলফ্রেড সরেনের পরিবারকে ৫০,০০০ টাকা এবং ১১ টি পরিবারের প্রত্যেকে ১০,০০০ টাকা করে ২০০২ সালে ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। নিহত আলফ্রেড সরেনের ছোট ভাই মহেশ সরেন এলাকার পরিস্থিতি সর্ম্পকে বলেন, ‘বর্তমানে ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে ১৮ টি আদিবাসী পরিবারের মধ্যে ১১ টি সাঁওতাল, ২টি বর্মন, রবিদাস ১টি, মালি ১টি, হাড়ি ২টি ও ১টি বৈরাগী পরিবার বসবাস করছি। কিছু জমিতে কোর্ট আমাদেরকে চাষাবাস এবং থাকার অনুমতি দিলেও বাদবাকি জমি এলাকার প্রভাবশালী সন্ত্রাসীরাই ভোগদখল করছে। ভূমি দস্যূরা আমাদেরকে আজও গ্রাম ছাড়ার জন্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করছে।’ ২ ফেব্রুয়ারি ২০০০ সালে নওগাঁ জর্জ কোর্ট নিহত আলফ্রেড সরেনের পরিবারকে কোর্ট অর্ডার ক্ষমতা বলে ২০ একর ৯৫ শতক জমিতে নিষ্করভাবে চাষাবাস ও থাকার অনুমতি প্রদান করে। মহাদেবপুর এসিল্যান্ড অফিস জমির মধ্যে ১১ একর ৬৬ শতক জমি নিহতের পরিবারকে প্রদান করেছে। বর্তমানে বাকি জমি লিজ হিসেবে এলাকার বাঙালিদের মধ্যেই বন্টন করা হচ্ছে।

▛ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাও, রাজোয়ার, তুরি, কর্মকার, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়িয়া, গন্ড, পাটনি, বাগদি, মাহালী, মুসহর, কোলকামার, ভুঁইমালি, কোচ, তেলী, গোড়াত, চাঁই, বাইছনী, লহরা, হাড়ি, ঘাটোয়াল, দোষাদ, চাড়াল, ডহরা, ভূমিজ, আঙ্গুয়াররাজোয়াড, বেতিয়া, নুনিয়াহাড়ি, রাজবংশী, পাহাড়িয়া, ভুঁইয়া, বাগদী, রবিদাস, রাই, বেদিয়াসহ প্রায় ৩৮টি জাতিসত্তার প্রায় ১৫ লাখেরও বেশী আদিবাসী বসবাস করেন। ▜

গ. আদিবাসীদের ভূমিহীনতার একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাও, রাজোয়ার, তুরি, কর্মকার, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়িয়া, গন্ড, পাটনি, বাগদি, মাহালী, মুসহর, কোলকামার, ভুঁইমালি, কোচ, তেলী, গোড়াত, চাঁই, বাইছনী, লহরা, হাড়ি, ঘাটোয়াল, দোষাদ, চাড়াল, ডহরা, ভূমিজ, আঙ্গুয়াররাজোয়াড, বেতিয়া, নুনিয়াহাড়ি, রাজবংশী, পাহাড়িয়া, ভুঁইয়া, বাগদী, রবিদাস, রাই, বেদিয়াসহ প্রায় ৩৮টি জাতিসত্তার প্রায় ১৫ লাখেরও বেশী আদিবাসী বসবাস করেন। এই আদিবাসীদের কম বেশি সবাই ভূমি সন্ত্রাসের শিকার। আদিবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় তাদের ভূমিহীনতার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় (হোসেন, আইয়ুব; হক, চারু ও রিস্তি, রিজুয়ানা, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী) উঠে এসেছে যে, মূলধারার মানুষসৃষ্ট বিবিধ বৈরী আবহে দেশের অর্ধশতাধিক আদিবাসী নৃগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে ভূমিহীন। কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এর হার শতকরা ৫০ ভাগ, আবার কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে ৯৫ ভাগ।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত এদেশে আদিবাসীদের মধ্যে ভূমিহীনের সংখ্যা ছিল শতকরা ২০-২৫ ভাগ, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৯০ ভাগে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাঁওতাল, রাজবংশী, মাহালী, কোচ আদিবাসীদের ভেতর পরিচালিত এক সমীক্ষায় জানা গেছে, অধিকাংশ আদিবাসীরাই নিজস্ব ভূমি হারিয়েছেন। প্রায় ৪২ শতাংশের কোনো জমি ও বসতভিটা নেই। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে নব্বই শতাংশ সাঁওতালদের পূর্বে নিজেদের কৃষিজমি ছিল এবং তারা নিজের জমিতেই কৃষিকাজ করতো। তাদের মধ্যে বর্তমানে পঁচাশি শতাংশ লোকের কোনো জমি নাই।৫ 

সাঁওতালদের ভূমিহীনতা প্রসঙ্গে আরেকটি গবেষণায় উঠে এসেছে, বাঙালি কর্তৃক সাঁওতালদের জমি জোরপূর্বক দখল, জাল দলিল তৈরি, জমি হারানো, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, সন্ত্রাস ইত্যাদি বিষয়াবলী বাঙালি-সাঁওতাল সম্পর্কের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করেছে। উপরোক্ত তথ্য উপাত্তগুলোর বেশিরভাগই এক দশক আগের চিত্র। বর্তমানে আদিবাসীদের ভূমিহীনতার চিত্র আরো ভয়াবহ।

ঘ. পূর্ববঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন (সংশোধিত) ২০০৪
সমতলের আদিবাসীদের রক্ষাকবচ হচ্ছে ১৯৫০ সালের পূর্ববঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯৭ ধারা। ১৯৭২ সালে ৪৮ নং অধ্যাদেশের মাধ্যমে এর নাম করা হয় দ্যা বাংলাদেশ স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড ট্যানেন্সি অ্যাক্ট ১৯৫০। পরে ২০০৪ সনে ৯ নং আইনের মাধ্যমে উক্ত আইন সংশোধন করে নাম রাখা হয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ব (সংশোধিত) আইন ২০০৪। উক্ত আইনের ৯৭ ধারায় আদিবাসীদের প্রসঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে। ‘Aboriginal’  হিসেবে উক্ত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী সাঁওতাল, বানিয়াস, ভূঁইয়া, ডালু, হদী, ভূমিজ, গারো, হাজং, খাসিয়া, কোচ, মগ, কোড়া, ওরাও, দালুজ, মেচ, মুন্ডা, তুরী, খারওয়ার, মাল, সুরিয়া, পাহাইয়াস, মন্ডিয়া, গন্ডা, তুরিস আদিবাসীদের নাম। যারা এই আইনের আইনগত অধিকার ভোগ করার অধিকার রাখেন। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ (ইস্ট বেঙ্গল এ্যাক্ট নং ২৮/১৯৫১) এর বিধান অনুযায়ী আদিবাসী রায়ত কর্তৃক জমি হস্তান্তরের বিষয়ে কিছু বাধানিষেধ আরোপ করে তাদের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আইনের ৯৭ ধারা মোতাবেক আদিবাসীরা সরাসরি কোন অ-আদিবাসীর নিকট তাদের জমি বিক্রয় করতে পারবে না। কিন্তু ভূমিদস্যূরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহযোগে এই আইনকে পাশ কাটিয়ে আদিবাসীদের জমি দখল করেন।

তাছাড়াও গত ১৯ মার্চ ২০১৯ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একটি গেজেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৫০টি আদিবাসী (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু পূর্ববঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০- এ মাত্র ২৭টি জনগোষ্ঠীই উল্লেখিত সুবিধো ভোগ করছে। তাই সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের গেজেটের সাথে মিল রেখে পূর্ববঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০-এ সমতলের আদিবাসীদের নাম অর্ন্তভূক্ত করা উচিত।

ঙ. সমতলের আদিবাসীদের ভূমি অধিকার প্রসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গীকার                                      ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে বিশেষ কার্যক্রমে গ্রহণের ঘোষণা করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনে ইশতেহারে ধর্মীয় নৃতাত্ত্বিক সংখ্যলঘুদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবধিকরের লঙ্ঘন রোধ এবং তদের ভূমি, বসতভিটা, বনভূমি, জলাভূমি এবং অন্যান্য সম্পত্তির পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছিল। এ সত্বেও আদিবাসীদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভুমিকা অনেকটা নীরব এবং অনেক ক্ষেত্রে ভূমি দস্যূরা রাজনৈতিক ছত্রছায়াকে কাজে লাগিয়েই আদিবাসীদের ভূমি দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

চ. আদিবাসীদের ভূমি হারানোর কারণসমূহ
আদিবাসীদের ভূমি হারানোর পেছনে মূলত দুটি প্রধান কারণকে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ভূমির মালিকানা বা স্বত্ত্ব সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে অসচেতনতা এবং দ্বিতীয়টি হলো মূলধারার জনগোষ্ঠীর একটি অংশ ভূমিদস্যূদের দ্বারা আদিবাসীদের ভূমি দখল। এছাড়াও নি¤েœর কারণসমূহ আদিবাসীদের ভূমি হারানোর অন্যতম কারণ;
১. ভূমির মালিকানা বা এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে অসেচতনতা
২. শত্রু সম্পত্তি আইন ও অর্পিত সম্পত্তি আইনের মারপ্যাচ
৩. ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে হামলা, মামলা, নির্যাতন
৪. জমি বিক্রয় করার সময় ‘অনুমোদন ’ কেন্দ্রিক সমস্যা
৫. খাস জমি পত্তনের ক্ষেত্রে সমস্যা
৬. ভাষার সমস্যা
৭. সামাজিক বনায়ন সমস্যা
৮. ভূমিসমস্যা ও আদিবাসী নারীদের ওপর প্রভাব

ছ. সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন
সমগ্র বাংলাদেশ যখন নিরঙ্কুশ দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ (সরকারী হিসেব, ২০০৫ সাল) তখন সমতলের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ। নিরঙ্কুশ দারিদ্রের এ-হার কয়েকটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এমনকি ৮০ শতাংশের উর্দ্ধে-যাদের মধ্যে আছে সমতলের সাঁওতাল, ওরাও, পাহান, খাসি, মাহাতো এবং পাত্র। আর চরম দারিদ্রের হার সমগ্র বাংলাদেশে যখন ১৮ শতাংশ তখন তা সমতলের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ। সমতল আদিবাসীদের ভূমিহীনতা প্রক্রিয়া অত্যন্ত প্রকট। যেমন সমতলের আদিবাসী পাত্র ও পাহান খানার ৯০ শতাংশ কার্যত ভূমিহীন, এ হার সাঁওতালদের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ, আর গারো, হাজং ডালু, এবং রাখাইনদের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই ৬৬ শতাংশের বেশি। সমতলের ১০টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী গত তিরিশ বছরে মোট ভূমি হারিয়েছেন (বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজ ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ) ২০০২, ১৬৪ একর, যার বর্তমান বাজার মূল্য হবে আনুমানিক ৭,৫৪৩ কোটি টাকা (যে পরিমান অর্থ বাংলাদেশ সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৪ শতাংসের সমান)।

▋মানবাধিকার কাপেং ফাউন্ডেশনের মতে, ২০১৮ সালে সারা দেশে আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার চিত্র: হত্যার শিকার ১৩ জন, গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২০ জন, হয়রানির শিকার ৬৬ জন, সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটেছে ২টি, মিথ্যা মামলা হয়েছে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে এবং বে-আইনিভাবে ৯০টি বাড়ীঘরে তল্লাশি চালানো হয়েছে।     

মানবাধিকার কাপেং ফাউন্ডেশনের মতে, ২০১৮ সালে সারা দেশে আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার চিত্র: হত্যার শিকার ১৩ জন, গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২০ জন, হয়রানির শিকার ৬৬ জন, সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটেছে ২টি, মিথ্যা মামলা হয়েছে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে এবং বে-আইনিভাবে ৯০টি বাড়ীঘরে তল্লাশি চালানো হয়েছে। দুঃখের বিষয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধিরা টাকা ও কব্জির জোরে অপরাধ করে পার পেয়ে গেছে। প্রচলিত আদালতে তাদের কোন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি। সমতলের বেশিরভাগ আদিবাসীরাদের হামলার কারণ ভূমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদের নিমিত্তে করা হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আদিবাসীরা দিনকে দিন আরো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হবে। এ জন্য সমতল আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করলে আদিবাসীরা কিছুটা হলেও সুরাহা পাবে। অতি দারিদ্রের অভিঘাত হতে মুক্তি পাবে আদিবাসী জীবন ও জীবিক। আদিবাসী জনগণ তখণ কারো মুখাপেখি না হয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।

৮. সুপারিশসমূহ
১. সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন : সমতলের সকল অঞ্চল এবং সকল জাতির আদিবাসী নারী ও পুরুষ প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি ভূমি বিষয়ক কমিশন’ গঠন করতে হবে। ভূমি কমিশনের মাধ্যমেই স্থানীয় ভূমি বিষয়ক বিরোধ, মামলা, তথ্য নথি, দলিলপত্র সংরক্ষণ ও কর্মপ্রক্রিয়া সম্পাদন করা হবে।

২. ভূমি জরীপ : ভূমি কমিশনের মাধ্যমে সমতলের আদিবাসী অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ ভূমি জরীপ নিষ্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক বনভূমির সুস্পষ্ট সীমানা এবং আদিবাসী ভূমির আইনগত সীমানা সুষ্পষ্টভাবে নির্ধারন করতে হবে। ভূমি অধিগ্রণ ও প্রজাস্বত্ত আইনে ১৯৫০ সমতলের সকল আদিবাসীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

৩. ভূমি ফেরত ও মিথ্যা মামলা বাতিল: আদিবাসীদের বেদখলকৃত, অর্পিত শত্রু সম্মতির নামে দখলকৃত জমি, জবরদখল হওয়া সকল জমি ও ভূমি আইনগত স্বীকৃতিসহ আদিবাসীদের মাঝে ফিরিয়ে দিতে হবে। আদিবাসীদের ভূমি সংক্রান্ত আদিবাসীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা এবং বনবিভাগের মিথ্যা ও বানোয়াট মামলাসমূহ বাতিল করতে হবে। পূর্বে অধিগ্রহণকৃত জমির জন্য পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৪. আদিবাসীদের মধ্যে ভূমি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি: আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিলপত্র সংরক্ষণ, উত্তোলন প্রক্রিয়াসহ, জমি ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত তথ্যা, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯৭ ধারা, খাস জমি পত্তন ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ এর পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোও অবদান রাখতে পারে।

৫. ভূমি অফিসে হয়রানি বন্ধ: জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোকে আদিবাসী বান্ধব করার উদ্যোগ নিতে হবে। এসব স্থানে আদিবাসীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়ে সহজে কাগজপত্র তুলতে পারে সেজন্য ভূমি অফিসে বিশেষ সেবা চালু করতে হবে।

৬. খাস জমির অধিকার: স্থানীয় খাসজমিতে আদিবাসীদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ভূমিহীন আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, নারীপ্রধান পরিবার, ভূমি-কৃষি-পরিবেশ-বনভূমি ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনে শহীদ পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

৭. স্থানীয় কাঠামো শক্তিশালীকরণ: স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে ভূমিআদালত ও ভূমিপরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। ভূমি বিষয়ক স্থানীয় সরকার কাঠামোতে স্থানীয় স্ব স্ব আদিবাসী সমাজের নিজস্ব শাসন কাঠামোর প্রতিনিধি নেতৃত্বকে মর্যাদার সাথে অর্ন্তভূক্ত করতে হবে।

৮. প্রথাগত ও সামাজিক অধিকার: আদিবাসীদের সংরক্ষিত পবিত্র-প্রথাগত ভূমি-বনভূমি-জলাভূমি-জলাশয়-বৃক্ষ-দেবস্থান-মন্দির-উৎসব ও মেলা এলাকা-প্রার্থনা এলাকা স্ব স্ব আদিবাসীদের সামাজিক রীতি ও আইনের মাধ্যমে পরিচালনা-রক্ষা-বিকাশের জন্য আইনগতভাবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। আদিবাসীদের ঐতিহাসিক স্থানসমূহসহ আদিবাসীদের নিজস্ব সংরক্ষিত এলাকা কোনোভাবেই অধিগ্রহণ করা যাবে না।

৯. ভূমি প্রতিবেশ ও পরিবেশ: আদিবাসী এলাকার ভূমিতে ভূমির পরিবেশ-মাটির স্বাস্থ্য-প্রতিবেশ-প্রাণবৈচিত্র্য নষ্ট হয় এমন কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার পূর্বে আদিবাসীদের পূর্ণসম্মতি থাকতে থাকতে হবে।

১০. জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক আইনের বাস্তবায়ন: আদিবাসী অঞ্চলে জাতীয় ও আন্তজার্তিক আইন ও সনদকে মান্য করে আদিবাসীদের পূর্ণ সম্মতি ছাড়া কোনো বাণিজ্যিক খনন, প্রকল্প, বিনোদনকেন্দ্র বা উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলা যাবে না

১১. সমন্বিত ভূমি অধিকার আন্দোলন: আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয়ভিত্তিক সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সুরক্ষার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সেখানে মানবাধিকার ও সামাজিক আন্দোলনসহ সকল আন্দোলনে আদিবাসীরা নেতৃত্ব দিবেন।

——————————————–

*জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ৯ দফা দাবীর ৯(খ) নম্বর দাবী। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সমতল আদিবাসীদের ৯-দফা দাবী নিয়ে ১৯৯৩ সাল থেকে লড়াই সংগ্রাম করছে।
**খোকন সুইটেন মুরমু জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও তিনি বর্তমানে কাপেং ফাউন্ডেশনে প্রকল্প সম্বন্বয়কারী হিসেবে কর্মরত।

হোসেন, আইয়ুব; হক, চারু ও রিস্তি, রিজুয়ানা। ২০০৯, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, হাক্কানী পালিশার্স, ঢাকা, পৃ. ৩৭-৩৯
Kamal, Mesbah. 2000, Baseline survey on indigenous peoples of Northwest Bangladesh, RDC, Dhaka
আলম, একেএম মুকসুদুল। ২০০৬, পরিশ্রমি সাঁওতাল জাতির বর্তমান অবস্থা, প্রান্তস্বর পত্রিকা, ২য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, সমুন্নয়, ঢাকা, ৬
জাহান, ফারহাত। ২০০৮, বাংলাদেশের সাঁওতাল ও ভূমি সম্পর্ক, সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আন্দোলন প্রকাশিত বিশেষ স্মরণিকা ‘হুল’ থেকে লেখাটি নেয়া হয়েছে
Gazette Ministry of Cultural Affairs: Date: 19 March 2019, S.R.O. No- 78/Act/2019