পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় শান্তি ফিরে আসেনি: চট্টগ্রামে চুক্তির বর্ষপূর্তির সভায় বক্তাগণ

0
234

হিল ভয়েস, ১ ডিসেম্বর ২০২৩, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়িদের জীবনে শান্তি ফিরে আসেনি। এ চুক্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে একটি ঐতিহাসিক অর্জন ছিল। পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।”

আজ ১ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চট্টগ্রামে র‌্যালি, গণসংগীত পরিবেশন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজিত অনুষ্ঠানটি নগরের জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে বিকেল ২:০০ ঘটিকায় শুরু হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক তাপস হোড়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল মোমেন বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়িদের জীবনে শান্তি ফিরে আসেনি। এ চুক্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে একটি ঐতিহাসিক অর্জন ছিল। যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ শান্তিতে থাকতে চেয়েছিল তখন একটি স্বার্থান্বেষী মহল এটিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পায়তারা চালায়।

তিনি আরো বলেন, এরশাদের আমলে সমতল এলাকা থেকে বাঙালি এনে পার্বত্য অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করানো হয়। এর ফলে পার্বত্য এলাকার জনগণ তাদের অস্তিতের সংকটে পড়ে যায় এবং তাদের জায়গা জমি হারায়। জুম চাষের উপযোগী জমিগুলো দখল হয়। পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যাকে স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারকে চুক্তির বাস্তবায়ন করা জরুরি। এভাবেই কেবল আদিবাসীদের জীবনে শান্তির সুবাতাস মিলবে।”

এছাড়াও উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, “বাংলাদেশে বাঙালি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। কিন্তু এসব আদিবাসীদের সরকার যথাযথ স্বীকৃতি ও তাদের নায্য অধিকার বাস্তবায়ন করেনি। ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত চুক্তি পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার সুযোগ থাকলেও অধিকাংশ মৌলিক ধারা বাস্তবায়িত হয়নি।

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিকায়ন নীতি চুক্তি বাস্তবায়নে অন্যতম বাধা। এজন্য এই নীতিও অতিদ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়াও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও বুদ্ধিজীবীদের চুক্তি বাস্তবায়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রামের সভাপতি অশোক সাহা, কবি ও সাংবাদিক হাফিজ রশিদ খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা, ঐক্য ন্যাপ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. প্রদীপ কুমার চৌধুরী, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নরেশ চাকমা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিশান তঞ্চঙ্গ্যা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সভাপতি বিনিময় চাকমা।

অনুষ্ঠানে গণসংগীত পরিবেশনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।

আলোচনা সভার আগে নন্দনকানন থেকে প্রেসক্লাব হয়ে জে এম সেন হল পর্যন্ত র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।