পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে সরকারকে চাপ দিতে জাতিসংঘকে আহ্বান জেএসএস প্রতিনিধির

0
504

হিল ভয়েস, ২০ এপ্রিল ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি চঞ্চনা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

২০ এপ্রিল ২০২৩ জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২২তম অধিবেশনে সকালের সভায় এজেন্ডা “আইটেম ৪: আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র এবং ২০৩০ এর টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা বিষয়ে স্থায়ী ফোরামের ৬টি অর্পিত দায়িত্বের ক্ষেত্র (অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার) বিষয়ে আলোচনা” এর উপর বক্তব্য প্রদান করার সময় জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি কর্তৃক এই আহ্বান জানানো হয়।

আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২২তম অধিবেশন শুরু হয় ১৭ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে এবং তা ২৮ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত চলবে। প্রীতি বিন্দু চাকমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২২তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন।

জসংহতি সমিতির প্রতিনিধি চঞ্চনা চাকমা তার বক্তব্যে এই বিষয়গুলি আদিবাসীদের নিজেদের টিকে থাকার লক্ষ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে স্থায়ী ফোরাম কর্তৃক ছয়টি অর্পিত দায়িত্বের ক্ষেত্র নির্ধারনের জন্য জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রকৃতপক্ষে, এই বিষয়গুলিতে স্থায়ী ফোরামের উদ্যোগের ফলে বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের অগ্রগতিসাধনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

স্থায়ী ফোরামের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জাতিগোষ্ঠীও অনুপ্রাণিত হয়েছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বাকি পাঁচটি ক্ষেত্রের অগ্রগতিসাধনেও বাধাগ্রস্ত হয়। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন বাংলাদেশ সরকারের এজেন্সিসমূহ নিজেরাই সংঘটিত করে থাকে।

জনসংহতি সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ২৩৫টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এই সমস্ত ২৩৫টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাষ্ট্রীয় ও অ-রাষ্ট্রীয় মহল দ্বারা, যার মধ্যে ছিল নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী-সমর্থিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার, ভূমি বেদখলকারী ইত্যাদি এবং এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ২০২২ সালে ১,৯৩৫ জন জুম্ম জনগণ ক্ষতির শিকার হয়েছিলেন।

আরো

জুম্মরা সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নৃশংসতার শিকার হচ্ছে: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি উদাহরণ হল, ৯ আগস্ট ছিল বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের আন্তর্জাতিক দিবস এবং আমরা আমাদের অধিকার সংক্রান্ত অনেক প্রত্যাশার সাথে এ দিবসটি উদযাপন করি। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা, সদর দপ্তর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিচালকের গত ৪ জুলাই, ২০২২ তারিখে গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে একটি আদেশ জারি করে যে, ৯ আগস্ট উদযাপনের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করা যাবে না। এই নির্দেশনা হলো একটি ষড়যন্ত্র এবং আমাদের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন।

আরেকটি উদাহরণ হল, গত ৫ জুলাই, ২০২২ প্রায় ২০০ জন বাঙালি সেটেলারের একটি দল মহালছড়ির মাইসছড়ি ইউনিয়নের জয়সেন পাড়া এলাকায় জুম্ম গ্রামবাসীর অন্তত ৩৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ। সেটেলাররা এ সময় আদিবাসীদের সম্পত্তি লুটপাট করে এবং সবকিছু ভাংচুর করে। এ ঘটনার সময় সামরিক বাহিনী সেটেলারদের বিরুদ্ধে কিছুই করেনি, বরঞ্চ তারা সবসময় সেটেলারদের সমর্থন করে।

বাংলাদেশ সরকার আদিবাসী জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য গত ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭-এ জনসংহতি সমিতির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নামে পরিচিত একটি চুক্তি করেছিল, কিন্তু এটি আশ্চর্যজনক যে, সরকার বিগত ২৫ বছরেও চুক্তির সকল ধারাসমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পূর্বের মতো বর্তমানে জুম্ম জনগণকে পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে উচ্ছেদ বা আমাদের নিজেদের বাসভূমিতে জুম্ম জনগণকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে জঘন্য অপচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য চুক্তির এসব মূল ধারাগুলি বাস্তবায়নে হাত দেয়নি।

চঞ্চনা চাকমা এই বলে শেষ করেন, “জাতিসংঘ, এর সংস্থাগুলি, বিশেষ করে স্থায়ী ফোরাম, সেসব সরকার মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে বিশ্বাস করে তাদের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ, চুক্তিতে প্রদত্ত অঙ্গীকারসমূহ সম্মান জানাতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করাই হবে একমাত্র সমাধান। বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারলে, আমরা জুম্ম জনগণ ২০৩০ সালের মধ্যে কিছুটা হলেও স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন অর্জনে সুনিশ্চিত হবে।”

আরো পড়ুন

তথাকথিত উন্নয়ন আমাদের জীবিকা, বন, পরিবেশ ধ্বংস করছে: জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে জেএসএস প্রতিনিধি

পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান