স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়র কর্তৃক পাহাড়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকার তদন্ত করা অত্যাবশ্যক- স্থায়ী ফোরামে জেএসএস প্রতিনিধি

0
389

হিল ভয়েস, ২০ এপ্রিল ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রতিনিধি প্রীতিবিন্দু চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু করার জন্য আদিবাসী অধিকার বিষয়ক স্পেশ্যাল র‍্যাপোর্টিয়র এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ১৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২২তম অধিবেশনে বিকেলের সভায় এজেন্ডা আইটেম ৫(ডি) আদিবাসীদের অধিকার স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়র ও আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক এক্সপার্ট মেকানিজম-এর সাথে মানবাধিকার সংলাপকালে এক আলোচনায় জেএসএসের প্রতিনিধি কর্তৃক এই আহ্বান জানানো হয়।

আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২২তম অধিবেশন শুরু হয় ১৭ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদর দফতরে এবং তা ২৮ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত চলবে। প্রীতিবিন্দু চাকমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ২২তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন।

প্রীতি বিন্দু চাকমার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য নিম্নে দেয়া গেল:

আমরা, আদিবাসীরা ২০০৭ সালে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র গ্রহণ করার জন্য জাতিসংঘের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং জাতিসংঘের এই পদক্ষেপের কারণে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় ভালভাবে টিকে আছে।

বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্মদের স্বায়ত্বশাসন প্রদানের জন্য ১৯৯৭ সালে জনসংহতি সমিতির সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রকৃতপক্ষে, সরকার চুক্তিটি নিয়ে একটি প্রতারনামূলক ভূমিকা পালন করেছিল। যার কারনে সরকার ২৫ বছরেও এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। সরকার আগের মতো বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সামরিকভাবে সমাধান করতে চায়।

আরো

জাতিসংঘ আদিবাসীদের পাশে রয়েছে- জাতিসংঘ মহাসচিব

পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে সবচেয়ে সেনাবাহিনী পরিপূর্ণ অঞ্চল এবং সেনাবাহিনী প্রশাসন থেকে শুরু করে রাস্তা নির্মাণ, করপোরেট ব্যবসা, প্রতিটি জুম্ম আদিবাসীকে চেক করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন বা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা হচ্ছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী

আপনারা হয়তো অবগত আছেন যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশিদের প্রবেশের অনুমতি নেই। এমনকি যদি কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়, তবে তাকে (বিদেশী নাগরিককে) সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আদিবাসীদের সাথে কথা বলতে হবে। গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘের মাননীয় মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করেন, কিন্তু তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি যা প্রমাণ করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় নেই।

স্থায়ী ফোরামের মাধ্যমে জাতিসংঘের কাছে আমার আবেদন হল-

১) স্পেশ্যাল র‍্যাপোর্টিউরকে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু করা অত্যাবশ্যক।

২) ২০১১ সালে স্থায়ী ফোরামের সুপারিশ অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নেওয়া বন্ধ করা।

৩) বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থা (এক্সপার্ট মেকানিজম)-এর এমন উদ্যোগ নেয়া উচিত হবে যাতে কোনও দেশের সামরিক বাহিনী বিশ্বের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত হলে তাদেরকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় এবং সেই আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

আরো পড়ুন

স্পেশ্যাল র‍্যাপোর্টিউরকে অপরাধীকরণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে জনসংহতি সমিতি

তথাকথিত উন্নয়ন আমাদের জীবিকা, বন, পরিবেশ ধ্বংস করছে: জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে জেএসএস প্রতিনিধি