পার্বত্য চট্টগ্রামে একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়মের খবর

0
762
ছবি : রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্র

হিল ভয়েস, ৯ জানুয়ারি ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: গত পরশু (৭ জানুয়ারি) সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা আসনেও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে তিন আসনেই সরকারি দল আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচনে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও আদিবাসী জুম্মদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এবং দেশের বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচন বর্জনের কারণে প্রায় একতরফা, নিষ্প্রাণ ও জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় একতরফা নির্বাচন সত্ত্বেও সরকারি দল আওয়ামীলীগ ও নির্বাচনী প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক অনিয়ম ও জাল ভোটের খবর পাওয়া গেছে। বস্তুত ব্যাপক সাধারণ জুম্ম জনগণের মধ্যে এই নির্বাচনে ভোট দেয়া নিয়ে কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়নি।

জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার জেলা ও উপজেলা সদর এলাকায় কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেলেও অধিকাংশ কেন্দ্রে বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে ভোটারের উপস্থিতি ছিল নিতান্তই কম। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি আসনের ২৭টি কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দিতে আসেননি। অনেক কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ২০%-৩০% ভাগেরও নীচে। কিন্তু সরকারি দল ও নির্বাচনী প্রশাসন ভোটারের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে শেষ পর্যন্ত ব্যাপক অনিয়ম ও জালভোটের আশ্রয় নেয় এবং শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলাফল দেখায় প্রকৃত ভোট থেকে কয়েকগুণ। এছাড়াও একাধিক এলাকায় ভোটের আগের দিন নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক সাধারণ জনগণকে নৌকায় ভোট দিতে নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানা যায়। বিশেষ করে, রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক টহল অভিযানের সময় সাধারণ জুম্ম জনগণকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলা হয় বলে জানা যায়।

জানা গেছে, ২৬ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়া, ১৫ বছর ধরে একনাগাড়ে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সরকার ক্ষমতায় থেকেও চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা, উপরন্তু সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়িত করা, জেলে প্রেরণ, আটক, হত্যা ও চুক্তিপক্ষের জনগণকে নিপীড়ন, নির্যাতন, তল্লাসী, হুমকি, উচ্ছেদ ইত্যাদিসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির কারণে জনসংহতি সমিতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। অপরদিকে, চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ সেনামদদে সংগঠনের চার ছাত্র-যুব নেতাকে হত্যা ও সেনানিয়ন্ত্রণ-নিপীড়নের প্রতিবাদে নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়।

রাঙ্গামাটি:

এবার ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের সরকারি দল আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলেন দীপংকর তালুকদার, যিনি নৌকা প্রতীকে ২,৭১,৩৭৩ ভোটে পেয়ে বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী হন। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট এর অমর কুমার দে ছড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৪,৮৬৫ ভোট এবং তৃণমূল বিএনপি’র মোঃ মিজানুর রহমান সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছেন ২,৬৯৩ ভোট।

রাঙ্গাপানি, রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটি আসনের ২১৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দিতে আসেননি। রাঙ্গামাটি আসনের বাঘাইছড়ি উপজেলার ৫টি কেন্দ্রে এবং কাউখালী উপজেলার ৩টি কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি বলে নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঘাইছড়ির এক অধিকারকর্মী জানান, বাঘাইছড়িতে প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার দেখানো হচ্ছে প্রায় ৬০%। প্রকৃতপক্ষে প্রতি কেন্দ্রে গড়ে ভোটার উপস্থিত হয়েছে ১০%-১১% এর মত। কাজেই বাকীগুলো সব জাল ভোট। সিজকমুখ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সরকারি দলের প্রাপ্ত ভোট ঘোষণা করা হয়েছে ২৪৮০। কিন্তু প্রকৃত ভোটারের উপস্থিতি বড়জোর ৭০-৮০ জন হতে পারে।

সারোয়াতলী এলাকার অধিবাসী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুম্ম তরুণ জানান, কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি একদম কম। শতকরা হিসেবে বড়জোর ১০%। কিন্তু সরকারি দলের কর্মীরা পোলিং এজেন্টদের দিয়ে প্রতিজনে ২০০/৩০০ জাল ভোট দিয়েছে।

জুরাছড়ি উপজেলার হিল ভয়েস প্রতিনিধি জানান, ফকিরাছড়ি সেনা ক্যাম্পের জনৈক ওয়ারেন্ট অফিসার এর নেতৃত্বে ১২ জনের একটি টহল দল ৩নং মৈদং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ভুয়াতুলীছড়া গ্রামে গিয়ে সাধারণ জনগণকে ভোট কেন্দ্রে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তারপরও তেমন কোনো লোকজন ভোট কেন্দ্রে যায়নি। বিশেষত বগাহালী, ভুয়াতুলীছড়া, বরকলক, ফরেস্ট ভিলেজার, ফকিরাছড়ি, সোহেল পাড়া ইত্যাদি কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিলো একেবারে কম। এমন অবস্থা দেখে পরে সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টরা নিজেইরা জালভোট মেরে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

ঠেগা ‍হুগবাঙ, রাঙ্গামাটি

তিনি আরও জানান, বগাখালী কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তার নিজের পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা পুলিশের এসআই লাল নুন লি বমকে ঘুষ দিয়ে তারা জাল ভোট দিয়ে ১৪০টি ভোট কাস্টিং দেখিয়েছে। অথচ সেখানে সাধারণ জনগণের উপস্থিতি ছিলো একেবারে কম, সর্বমোট ২০/২৫ জনের মত। অন্যদিকে বরকলক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই। সেখানে মানুষের উপস্থিত ছিলো ১২০-১৫০ মত। কিন্তু সেখানে ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে ১০৪৮টি। ফরেস্ট ভিলেজার কেন্দ্রের অবস্থাও একই। সেখানে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৮০/৯০ জনের মত, কিন্তু ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে ৪৫৭টি। মোট কথা হচ্ছে সব কেন্দ্রেই জাল ভোট দেওয়া হয়েছে কম পক্ষে ৫০%। সদর এলাকা গুলোতে আরো বেশি করে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। বনযোগী ছড়া, ধামাই পাড়া, চকপতিঘাট, ডেবাছড়া, ভুবণজয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঘিলাতুলি, শিলছড়ি ইত্যাদি কেন্দ্রগুলোতেও ব্যাপক জাল ভোট দেওয়া হয়েছে।

বরকল উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধিকার কর্মী বলেন, বরকলেও সরকারি দল কর্তৃক ব্যাপক জাল ভোট দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল নগণ্য, ২০% এর অধিক নয়। অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্ট না থাকায় বা থাকলেও তারা নিশ্চুপ থাকায় বরুণাছড়ি কেন্দ্র, ধামাইছড়া কেন্দ্র, মাইচছড়ি কেন্দ্র, ভূষণছড়া কেন্দ্র, এরাবুনিয়া কেন্দ্র, বড় কুড়াদিয়া কেন্দ্র, নিস্কেন্দ্রা কেন্দ্র ইত্যাদি কেন্দ্রে ব্যাপক জাল ভোট প্রদান করা হয়েছে। বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের প্রায় কেন্দ্রে সরকারি দলের কর্মীরা দলবল নিয়ে জাল ভোট দিয়েছে।

বরকলের জগন্নাথ ছড়া ভোট কেন্দ্রের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা ২.৩০টার দিকে বরকল সদর থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগের অংছা ছিং এর নেতৃত্বে ১৪/১৫ জনের একদল কর্মী জগন্নাথ ছড়া ভোট কেন্দ্রে গিয়ে জালভোট দিতে চাইলে এলাকার মুরুব্বি ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধার মুখে পড়ে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন।

কাপ্তাই উপজেলা এলাকার হিল ভয়েসের প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনের ৫/৬ দিন আগে থেকে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা স্থানীয় মুরুব্বি ও এলাকাবাসীদের সাথে দফায় দফায় সভা করে জানিয়ে আসছিল যে, ভোট কেন্দ্রে এসে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। যে পরিবার ভোট দিতে না যায় তাহলে সেই পরিবারকে সরকারের সেবা থেকে বঞ্চিত করা হবে, যেমন- বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিডি চাউল, সরকারি ঘর, সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় সনদপত্র প্রদান ইত্যাদি সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। এমনকি হেডম্যানের স্থায়ী বাসিন্দা সনদসহ ভূমি বিষয়ক যাবতীয় সেবা থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। অন্যদিকে সেনাবাহিনী, মগবাহিনী, সংস্কার পার্টি ও স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মীদের থেকেও বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, সাজানো মামলা দায়ের, এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। তারপরও ভোটকেন্দ্রে কম সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রায় প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে ২০০-২৫০ জনের মতো উপস্থিত হয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আওয়ামীলীগ কর্মীরা সদলবলে এসে প্রশাসনের কোনো বাধা ছাড়াই কেন্দ্রে প্রবেশ করে হচ্ছে মত জাল ভোট দেয়।

রাঙ্গামাটি শহর এলাকার বাসিন্দা সুব্রত চাকমা নামে চাকমা গানের পরিচিত এক শিল্পী তার ফেসবুক পেইজে লেখেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে আমার ভোটটি দেওয়ার জন্য ১০ মিনিট আগে (এখন ৩.১০ টা বাজে) আমি আমার ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। তালিকা দেখে কর্মকর্তারা আমাকে বলেছিলেন এবং তালিকাটি আমি নিজেই দেখেছিলাম, দুর্ভাগ্যবশত আমার ভোটটি আগেই দেওয়া হয়েছিল। মনের কষ্টে বাড়িতে ফিরলাম।’

সাংবাদিক হিমেল চাকমা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমরা সবাই জানতাম দীপংকর তালুকদারের জয়টি শুধু ঘোষণা বাকী ছিল। কারণ রাঙামাটির নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়নি।’

খাগড়াছড়ি:

২৯৮ পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনে সরকারি দল আওয়ামীলীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নৌকা প্রতীকে ২২,০৮,২৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন বলে জানা গেছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিথিলা রোয়াজা লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১০,৯৩৮ ভোট। রাঙ্গামাটি আসনের মত এই আসনেও প্রকৃত ভোটারের উপস্থিতি কম এবং সরকারি দলের কর্মী ও প্রশাসনের লোকদের কর্তৃক ব্যাপক জাল ভোট দেওয়া হয় বলে জানা যায়।

দক্ষিণ খবংপজ্জি, খাগড়াছড়ি সদর

একদিকে অব্যাহতভাবে সরকারের স্বৈরাচারী কায়দায় জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সরকারি দলের লোকদের অবাধ দুর্নীতির কারণে, অপরদিকে চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফের ভোট বর্জন ও হুমকি-ধামকির মুখে সাধারণ জুম্ম ভোটাররা ভোট দানে বিরত থাকেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে উপজেলার কেন্দ্রে কেন্দ্রে আওয়ামীলীগের কর্মীদের উপস্থিতি ও আনাগোনা দেখা গেলেও সাধারণ ভোটাররা অত্যন্ত সামান্য অংশই ভোট দিয়েছেন।

জানা গেছে, এই আসনের ১৯৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি কেন্দ্রই ছিল ভোটশূন্য। পানছড়ি, দীঘিনালা ও লক্ষীছড়ি উপজেলার অন্তর্গত এসব ভোটশূন্য কেন্দ্রগুলো জুম্ম অধ্যুষিত। পানছড়ি উপজেলার ২৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ভোট পড়েনি ১১টিতে, দীঘিনালা উপজেলার ২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩টিকে এবং লক্ষীছড়ি উপজেলার ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫টিতে।

পুজগাঙ মুখ, খাগড়াছড়ি, পানছড়ি

দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রের জুম্মদের বাড়িতে গিয়ে আওয়ামীলীগ ও সেনামদদপুষ্ঠ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক গ্রামবাসীদের ভোট প্রদানের জন্য চাপ দিতে দেখা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবুও যেখানে সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি অত্যন্ত কম সেখানে আওয়ামীলীগ কর্মীদের জোরপূর্বক ব্যাপক হারে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খাগাছড়িতে নৌকার পক্ষে ব্যাপকভাবে জাল ভোট দেওয়ার একটি নজির হল- দীঘিনালার ছোট মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। সেখানে ভোটারের চেয়ে ভোট বেশি কাস্টিং হতে দেখা গেছে। খোদ আওয়ামীলীগের প্রার্থী নিজেও প্রকৃত ভোটার সংখ্যার চেয়েও বেশি ভোট পান। যা প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত ভোট গণনার বিবরণীতে দেখা গেছে। সেই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১৭৮৪। কিন্তু ভোট শেষে গণনায় আপত্তিকৃত ভোট সহ প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা মোট ২৪৯২, অপরদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী একাই পেয়েছেন ২২৯৫, যা প্রকৃত ভোটের চেয়ে বেশি।

বান্দরবান:

এবার ৩০০ পার্বত্য বান্দরান আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বীর বাহাদুর নৌকা প্রতীকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষিত হয়েছেন ১,৭২,২৪৩ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১০,০৪৩।

জানা গেছে, বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায়ও বিশেষত সাধারণ জুম্ম ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন কোন উৎসাহ ছিল না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জুম্ম অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। দিনের শেষ দিকে বেলা ২টা থেকে ৪ টার মধ্যে আওয়ামীকর্মীরা কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যাপক জাল ভোট প্রদান করে ভোটের হার বাড়িয়ে দেয় বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

এছাড়া স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বীর বাহাদুরের অনুসারী অনেক আওয়ামীলীগ কর্মী কর্তৃক জুম্ম ভোটারদের মধ্যে প্রচার করতে শোনা গেছে যে, বেশি বেশি ভোট দিতে হবে, ভোট কম পেলে বীর বাহাদুর মন্ত্রী হতে পারবে না। তখন দীপংকর তালুকদার মন্ত্রী হয়ে যাবে।
ইউপিডিএফের ফাঁকা গুলি ও অপহরণ

ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা ভোটের আগের দিন রাতে ১১টার দিকে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের কলাপাড়া এলাকায় ৩ রাউন্ড এবং একইদিন রাতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার গভামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১ম দফায় ২ রাউন্ড, নির্বাচনের দিন ২য় দফায় সকালে ৯টার দিকে আরও ২ রাউন্ড এবং ৩য় দফায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে বলে স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়। অপরদিকে, নির্বাচনের দিন সকালে ইউপিডিএফের সশস্ত্র একটি দল মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মংমাইপ্রু মারমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।