কেএনএফ’র বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট বম-লুসাই-পাঙখোয়া জনগোষ্ঠী

0
739
ছবি : প্রতিকী

হিল ভয়েস, ৯ জানুয়ারি ২০২৪, বান্দরবান: সম্প্রতি বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বম, লুসাই ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠী অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে এ নিয়ে হতাশা ও চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে।

গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ করে বান্দরবানের বম, লুসাই ও পাংখোয়া এই তিন জনগোষ্ঠীর প্রতি পরিবারকে মাসে মাসে কেএনএফ’র চাঁদা সংগ্রাহকদের নিকট নিয়মিত চাঁদা তুলে দিতে হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এই জনগোষ্ঠীর সাধারণ জনগণের অবস্থা এখন ‘না পারছি বলতে, না পারছি সইতে’।

এই জনগোষ্ঠীভুক্ত একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এই তিন জনগোষ্ঠীর যারা সরকারি চাকরিজীবী তাদেরকে প্রতিমাসে ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা, যারা বেসরকারি চাকরিজীবী তাদেরকে প্রতিমাসে ৫০০ (পাঁচশত) টাকা এবং যারা সাধারণ জুমিয়া পরিবার তাদেরকে পরিবার প্রতি ৩০০ (তিনশত) টাকা করে বাধ্যতামূলকভাবে কেএনএফ’র নিকট জমা দিতে হচ্ছে।

শুধু বান্দরবান নয়, বান্দরবানের বাইরেও অন্যান্য পার্বত্য জেলায় এবং সমতল জেলায় এই তিন গোষ্ঠীর যারা রয়েছে তাদের কাছ থেকে তারা এই চাঁদা সংগ্রহ করছে বা করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, শুধু বম, লুসাই ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর কাছে চাঁদাবাজি নয়, সাম্প্রতিককালে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক অন্যান্য জনগোষ্ঠীর হাঁস-মুরগি ও গৃহপালিত পশু ও টাকা ছিনতাইসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডও বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল পৃথক ঘটনায় বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের ৬টি মোরগ, ১টি ছাগল ও এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছ থেকে ৫০০০ টাকা ছিনতাই এবং ৭ মারমা গ্রামবাসীকে বেদম মারধর করে।

একই দিন (১৬ ডিসেম্বর ২০২৩) কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ১২ জনের আরেকটি দল সকালে রুমা উপজেলার ২নং রুমা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডস্থ শৈরাতং পাড়ার সাতকিলো নামক স্থানে রুমা বাজারের কলা ব্যাবসায়ী মো: জামশেদ এর কাছ থেকে বাইক আটকিয়ে ৭০,০০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে বম সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীদের সাহায্যে উক্ত ৭০,০০০ টাকা দুই ঘন্টা পর ফেরত দেয় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। তবে টাকা ফেরত দেওয়ার সময় বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকার সময় বিকাশে ০১৫৭৫৪৪৩৭৫৫ এই নাম্বারে ৫,০০০ টাকা পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয় বলে জানান ভিকটিক মো: জামশেদ।

গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ রুমা-রোয়াংছড়ি সড়কের অবিচলিত পাড়া ও দুর্নিবার পাড়ার মাঝখানে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দুটি বাইক আটকিয়ে বাইক প্রতি ৫০০ টাকা করে মোট ১০০০ টাকা এবং ২টি জীপ গাড়ি আটকিয়ে গাড়ি প্রতি ৩০০০ টাক করে মোট ৬০০০ টাকা চাঁদা ছিনিয়ে নেয়।

উল্লেখ্য, শান্তি কমিটির সাথে মিটিংয়ের পর থেকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে গেছে বলে অনেকের অভিযোগ। গত ৫ নভেম্বর সভায় ঐক্যমতের অন্যতম বিষয় ছিল সংলাপ চলাকালীন কেএনএফ এবং সেনাবাহিনী পরস্পরের উপর আক্রমণ করবে না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা এখন এইসব চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীন গ্রামবাসী জানান যে, সেনাবাহিনী জেনেও না জানার ভান করে আছে৷ সেনাবাহিনী কেএনএফকে প্রকারান্তরে অবাধে এই চাঁদাবাজি ও গ্রামবাসীদের জুলুম চালিয়ে যেতে দিচ্ছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷