সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত চাপ, মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও জমির ধান নষ্ট করা হয়েছে: ঐক্য পরিষদ

0
379
রানা দাশগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত

হিল ভয়েস, ৭ জানুয়ারি ২০২৩, ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, গির্জা ও উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। কিছু এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেয়া হচ্ছে হুমকি-ধমকি। যাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা চরম নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

গতকাল শনিবার (৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত চাপ, নির্বাচন প্রচারণায় ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য এখন মন্দির পোড়ানো ও ফসলি জমির ধান নষ্ট করার পর্যায়ে পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী কিছুতেই রুখতে পারছে না এদের। নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সম্ভাব্য নির্যাতনের মাত্রা আরও কি কি হতে পারে এবং এর শেষই বা কোথায় তা নিয়ে ধর্ম নির্বিশেষে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আতংকিত ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ২০১২ সালের ন্যায় আবারও কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ বিহারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত ৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ দিবাগত রাত দুইটার দিকে চেরাংঘাটা রাখাইন সম্প্রদায়ের উসাইসেন (বড় ক্যাং) বৌদ্ধ বিহারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বিহারের বেশকিছু অংশ পুড়ে গেছে। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের জরুরী হস্তক্ষেপে বড় ধরনের অগ্নিকান্ড থেকে রক্ষা পায় কাঠের তৈরী দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন এ বৌদ্ধ বিহারটি। নির্বাচনের একদিন পূর্বে এ ঘটনায় স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সুনামগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তা’র কাঁচি প্রতীক সমর্থন করায় ও তাঁর জনসভায় যোগদান করায় গত ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ সকালে একদল দুর্বৃত্ত নৌকার শ্লোগান দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রয়াত রবীন্দ্র কুমার বৈষ্ণবের ছেলে রঞ্জন কুমার বৈষ্ণবের প্রায় এক হেক্টর রোপণকৃত বোরো জমিতে জোরপূর্বক মই দিয়ে কমপক্ষে ১০০ মণ উৎপাদিত ধানের ক্ষতি করেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করার জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম- ৮ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলকপি প্রতীকের বিজয় কুমার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গত ৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম, সরোয়াতলীর বেলাল ও আমুচিয়ার কাজল তাদের লোকজন দিয়ে এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সংখ্যালঘু ভোটারদের বলা হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদের কাছ থেকে বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সরকারি সুবিধাভোগী টিসিবির কার্ড কেড়ে নেয়া হবে।

ঝিনাইদহ- ১ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাসের সমর্থক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের ওপর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের অনুসারীরা গত ৩ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ রাতে তমালতলা বাজারে হামলা চালিয়ে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। পরে তাকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। শৈলকুপার বিভিন্ন গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য বল প্রয়োগ, হুমকি-ধমকি ও হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এতে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে।

স্থানীয় সন্ত্রাসী আদনান জাভেদের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রাসী সশস্ত্র অবস্থায় গত ৪ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ রাতে মুছাপুর, সন্তোষপুর, মগধরা, সারিকাইত ইউনিয়নের সংখ্যালঘু পল্লীতে ঢুকে মহিলাদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়। সন্ত্রাসীরা বলেছে, ‘তোমরা নৌকা মার্কার ভোটার এটা আমরা জানি, তোমাদের কষ্ট করে কেন্দ্রে যেতে হবে না। তোমাদের ভোট আমরা দিয়ে দেব, কেন্দ্রে গেলে তোমাদের জাল-নৌকা সবই যাবে’। সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় হকিস্টিক, লোহার রড দিয়ে সবার ঘরের টিনে আঘাত করে বেরিয়ে যায়।