পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্যাতনামা বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু উ চ হ্লা ভান্তে আর নেই

0
795

হিল ভয়েস, ১৪ এপ্রিল ২০২০, বান্দরবান: পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশের অন্যতম খ্যাতনামা বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু উপঞঞা জোত মহাথেরো (উ চ হ্লা ভান্তে) গত ১৩ এপ্রিল ২০২০ দুপুর আনুমানিক ১২:০০টায় চট্টগ্রাম ম্যাক্স হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর এবং ধর্মীয় গুরু হিসেবে ৩১ ওয়াহ্।

জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল ২০২০ সকালের দিকে হঠাৎ হৃদরোগের প্রকোপ বেড়ে গেলে তাঁকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ১৩ এপ্রিল তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। এর পরপরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

উ চ হ্লা ভান্তের মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও ভক্তরা ছাড়াও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। উল্লেখ্য, ভান্তে বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও তার ভক্তরা ছাড়াও ভিন্ন ধর্মের বহু মানুষের কাছেও তিনি শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।

ভান্তে ধর্মীয় সূত্র, ধর্মীয় বাণী ও ধর্মীয় দেশনা পরিবেশন ছাড়াও সামাজিক শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধি বিষয়েও মূল্যবান পরামর্শ দিতেন। তিনি ছিলেন মানবাধিকার সচেতন এক ধর্মীয় গুরু।

মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী খিয়ং ওয়া কিয়ং এর অধ্যক্ষ। তিনি বান্দরবানের বিখ্যাত বুদ্ধধাতু জাদি (স্বর্ণ মন্দির), রামজাদি মন্দির এবং অনাথ ও গরীব ছেলেমেয়েদের জন্য ‘বি হ্যাপী লার্নিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি ভারতে বুদ্ধগয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডেও বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়।

গৃহী জীবনে ভান্তে ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র, উচ্চ শিক্ষিত এবং বিচার বিভাগের এক কর্মকর্তা। ১৯৮১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) এবং ১৯৮২ সালে এলএলএম পাশ করেন। ১৯৮৩ সালে বিসিএস পাশ করার পর তিনি সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ১২ বছর চাকরি করার পর সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি ১৯৯৫ সালের ৭ জুন চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ উপন্ডিত মহাথেরোর নিকট গৃহজীবন ত্যাগ করে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন।

জানা যায়, উ চ হ্লা ভান্তে ১৯৫৫ সালের ২২ ডিসেম্বর বান্দরবান সার্কেলের বোমাং রাজ পরিবারে জন্মগ্রজহণ করেন।