লংগদু গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে শোক র‍্যালি ও আলোচনা সভা

0
297

হিল ভয়েস, ৪ মে ২০২৩, রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলায় ৪ঠা মে ১৯৮৯ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় মুসলিম বাঙালি সেটেলারদের কর্তৃক সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) লংগদু থানা শাখার উদ্যোগে শোক র‍্যালি ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ৪ মে ২০২৩ সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপির লংগদু থানা শাখার সভাপতি রিকেন চাকমা এবং সভায় সঞ্চালনা করেন সহ সভাপতি সুদীর্ঘ চাকমা।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), লংগদু থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা, অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জেএসএস, লংগদু থানা কমিটির ভূমি ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বিনয় প্রসাদ চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, লংগদু থানা শাখার সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা। এছাড়াও পিসিপি, লংগদু থানা শাখার নের্তৃবৃন্দ এবং লংগদুর বিভিন্ন এলাকার জনগণ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিপির লংগদু থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিন্টু মনি চাকমা। শোক প্রস্তাব শেষে শহীদদের স্মরণে ২মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আরো পড়ুন

বর্বরোচিত লংগদু গণহত্যাঃ ৩৪ বছরেও বিচারহীন, অপরাধীরা শাস্তিহীন

প্রধান অতিথি মনি শংকর চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, আজ বর্বরোচিত লংগদু গণহত্যাকান্ডের ৩৪ বছর। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অনুপ্রেবশকারী সেটেলারদের কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের উপর সংঘটিত অন্যতম মানবতাবিরোধী ভয়াবহ গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ১৯৮৯ সালের আজকের এই দিনে গণহত্যাকান্ড ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা শুরু হয়ে ৬ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এই পাশবিক ধ্বংসলীলা। শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ মোট ৩২জন জুম্ম নিহত হয় এই গণহত্যায়, আহত হয় অন্তত ১১ জন এবং লংগদু সদরসহ লংগদুর আশেপাশের ৯টি গ্রামের ১০১১টি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়া হয় এবং লুটপাট চালানো হয়। এছাড়াও একটি সরকারি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং ৬টি বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধ্বংসলীলা চালানো হয়। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয় এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। সচেতন ছাত্র জনতা এই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকার রাজপথের মিছিল বের করে এবং ২০ মে জন্ম নেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। সুতরাং লংগদু ছাত্র সংগঠনকে আরো উদ্যোগী ও সচেতন হয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে।

বিশেষ অতিথি বিনয় প্রসাদ চাকমা বলেন, কোনো কিছু ভুলে যাওয়া কোনো অপরাধ নয়, তবে কিছু জিনিস ভুলে যাওয়া উচিত নয়। লংগদুর এই ঘটনা ভুলে যাওয়ার মতো নয়, যে ঘটনা পুরো জুম্মজাতিকে আঘাত করে বুকের তাজা রক্ত কেঁড়ে নিয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের উদ্দ্যেশে আহ্বান করে তিনি বলেন, বজ্র কঠিন শপথ নিয়েই চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

বিশেষ অতিথি তপন জ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর অতীত হয়ে গেল। কিন্তু চুক্তিটি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। হাজারো জুম্ম জনগণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে হলে ছাত্র-যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

সভার সভাপতি রিকেন চাকমা ছাত্র পরিষদের ভূমিকা ও গুরুত্ব তুলে ধরে, লেখাপড়ার পাশাপাশি কলেজ লেভেলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন

বর্বরোচিত লংগদু গণহত্যাঃ ৩৩ বছরেও বিচারহীন, অপরাধীরা শাস্তিহীন

রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটেলারদের সংঘবদ্ধ হামলায় সংঘটিত নান্যাচর গণহত্যার ২৭ বছর