লংগদুতে সংঘবদ্ধ সেটেলার কর্তৃক জুম্মদের বোটে হামলা, আহত ৬

0
2502
ছবি: সংঘবদ্ধ মুসলিম সেটেলার

হিল ভয়েস, মে ২০২০, রাঙ্গামাটিআজ সকালের দিকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন লংগদু উপজেলার হাড়িকাবা সংলগ্ন হ্রদ এলাকায় একদল মুসলিম সেটেলার ফলজ পণ্যবাহী জুম্মদের দুটি ট্রলার বোটে হামলা চালিয়ে অন্তত ৬ জন জুম্মকে আহত করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ৯ মে ২০২০, শনিবার, সকালের দিকে লংগদু উপজেলার লংগদু সদর ইউনিয়নের ধুধুকছড়ি গ্রামের একদল জুম্ম গ্রামবাসী বিভিন্ন মৌসুমী ফলমূল নিয়ে দুইটি ট্রলার বোট যোগে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

এক পর্যায়ে সকাল ৭:৩০ টার দিকে বড় হাবিকাবা এলাকায় পৌঁছলে আশেপাশের সেটেলাররা সংঘবদ্ধ হয়ে বোট ঘেরাও করে জুম্মদের উপর হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ৬ জন জুম্ম আহত হয় বলে জানা যায়।

আহত ব্যক্তিরা হলেন- ১. দয়াল চন্দ্র চাকমা (৫২), পিতা-মৃত কান্তমনি চাকমা, ২. প্রসিত চাকমা ওরফে ধনবান (৪৫), পিতা- নুয়া মঙ্গল চাকমা, ৩. ধনমনি চাকমা (৩০), পিতা- জুরেন্দ্র চাকমা, ৪. সুমতি চাকমা ওরফে নাগা (৪৭), পিতা- মৃত ভক্তমনি চাকমা, ৫. ভগিরথ চাকমা (৩৫), পিতা- মনি চাকমা এবং ৬. ধনবান চাকমা।

হামলার সময় মুসলিম সেটেলাররা জুম্মদের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং ফলমূল হ্রদের পানিতে ফেলে দেয় বলে জানা যায়।

ঘটনার পর হামলাকারী সেটেলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বড়হাড়িকাবা জুম্ম গ্রামে গিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কার্বারীদেরকে ক্যাম্পে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জুম্ম গ্রামবাসীরা জানান।

উল্লেখ্য যে, লকডাউন হওয়ার আগে হারিহাবা গ্রামে স্কুল ঘর নির্মাণ করতে যাওয়া কিছু সেটেলার জনৈক বাক প্রতিবন্ধী নারীক ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বড় বোন থানায় জিডি করে। কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় বলে জানা যায়।

এরপরে লকডাউন চলাকালীন সময়ে সেটেলারদের পাহাড়িদের গ্রামে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে তেমন কোন কড়াকড়ি ছিল না। তারই ধারাবাহিকতায় কয়েকদিন আগে আবু বকর নামে এক সেটেলার আবারো একটি পাহাড়ি মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং ১০,০০০ হাজার টাকার বিনিময়ে সেটির সমাধান করা হয় বলে জানা যায়।

এর আগেও সেটেলাররা গরু চড়ানোর নাম করে পাহাড়িদের জমির ধান গরুকে খাইয়ে দিত, ঘাস কাটার নাম করে পাহাড়িদের ধান কেটে নিয়ে আসত এবং তরকারি খোঁজার নাম করে পাহাড়ি এলাকায় অনুপ্রবেশ করে এবং প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায় যে, সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের অংশ হিসেবে লংগদুর জুম্ম গ্রামগুলোতেও লকডাউন জারি করা হয় এবং গ্রামে বহিরাগত কাউকে প্রবেশে বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়।

কিন্তু কিছুদিন আগে জনৈক এক সেটেলার লকডাউনকে অমান্য করে এক জুম্ম গ্রামে গরুর ঘাস কাটতে গেলে তাকে জুম্ম গ্রামবাসীরা বাধা দেয়। অনেক চেষ্টা করে বুঝিয়ে বলার পরও কাজ না হওয়ায় গ্রামবাসীরা জোরপূর্বক গ্রাম থেকে বের করে দেয়।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর লংগদু ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার অজয় বিকাশ চাকমা সেটেলার পাড়ায় বিষয়টিকে সুরাহা করার জন্য গেলে উল্টো সেটেলাররা তাকে মারধর করে এবং জুম্ম গ্রামবাসীদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে।

পরে বিষয়টি স্থানীয় ক্যাম্পের সেনাবাহিনী অবহিত হলে তারা ইউপি মেম্বারকে মারধরের সাথে জড়িত সেটেলারদের শাস্তি প্রদান করে বলে জানা যায়।

এভাবে সেটেলারদের মধ্যে ক্ষোভ পুষে রাখে এবং তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে জুম্মদের আক্রমণ করার জন্য। সেটেলাররা হারিহাবা গ্রামে যেতে যে খাল দিয়ে প্রবেশ করতে হয়, সেই খাল দিয়ে যাতায়ত করতে পাহাড়িদের বাধা প্রদান করতে শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে আজ সেটেলাররা হামলা করেছে বলে স্থানীয় এক জুম্ম গ্রামবাসী জানান।