গানে গানে সংহতিতে অসহায় আদিবাসীদের সহযোগিতার আহ্বান পাহাড়ি শিল্পীদের

0
862

হিল ভয়েস, ৯ মে ২০২০, ঢাকা: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো পৃথিবী জুড়ে লকডাউনিং চলছে। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সংকটের। পাহাড়ে সেই সংকটের মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য সংকট। সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম  বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পাহাড়ের দিনমজুর, যানবাহনের চালক, জুম চাষী, দোকানদার তথা চাকুরীবিহীন জুম্ম আদিবাসীরা।

পাহাড়ের  প্রত্যন্তে যে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে তা মোকাবিলায় বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পাহাড়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে “বনফুলের জন্য জুম্ম তারুণ্যের ভালোবাসা” নামে একটি মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের ইভেন্ট পরিচালিত হচ্ছে গত এক সপ্তাহ ধরে। একই নামের পেইজ থেকে খোলা এই ইভেন্টটি পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্নভাবে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে। এই ক্যাম্পেইনের মধ্যে অন্যতম হল পাহাড়ী শিল্পীদের গানে গানে সংহতি। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন শিল্পী এই তরুণদের উদ্যোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে নিজেদের গলা মিলিয়ে।শিল্পীদের গানের ভিডিও একে একে এই পেইজ এর মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে মানবতাবাদী মানুষদের কাছে।কেবল গান নই, গানের সাথে মানবতাবাদী মানুষদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন সহায়তার  হাত বাড়ানোর।

এই্ উদ্যোগের সাথে সংহতি জানানো পাহাড়ের স্বনামধন্য শিল্পী পার্কি চাকমা হিল ভয়েসকে জানান, এই করোনা মহামারীতে আমাদের সবার স্ব স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিত। যুগে যুগে আমরা দেখেছি গান মানুষকে সকল সংকটে পথ দেখিয়েছে।তাই আমাদের মত শিল্পীদের এই সময়ে গলা নিয়ে মানবতাবাদী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে এই সংকট উত্তোরণে ভূমিকা নেওয়া উচিত। সে জন্যই আমাদের এই সংহতি।

তিনি আরো জানান, সময়টি আসলেই একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর। আমাদের মত শিল্পীদের তো আর সেরকম পয়সা কড়ি নেই যে অগণিত মানুষকে সহযোগীতা দেওয়ার। কিন্তু আমার সাধ্যে যা আছে সেটা হলো গলা মিলিয়ে অগণিত মানুষের কাছে মানবতার সুর পৌঁছে দেয়া। সে কাজটিই করে যাচ্ছি। এই সংকটে পাহাড়ের প্রত্যন্তে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান এই কন্ঠশিল্পী।

এদিকে তরুণ ব্যান্ড রেমিনিসেন্সও নিজেদের ব্যান্ড দলের পক্ষ থেকে একটি গানের ভিডিওর মাধ্যমে এই তরুণদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যান্ডের ভোকাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কস্মিন চাকমা জানান, গান যদি হয়মানুষের জন্য তবে মানুষের সংকটে এই গান নিয়ে হাজির হওয়াটাই তো শিল্পীর কাজ বলে আমি মনে করি। সেজন্যই আমরা আমাদের ব্যান্ড দলের পক্ষ থেকে গানে গানে মানবতাবাদী মানুষদের আহ্বান জানিয়েছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

এই তরুণ শিল্পী হিল ভয়েসকে আরো জানান, করোনা সতর্কতায় এখন সবাই যে যার বাসায় অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন ধরেঘরে বাধ্যগত অবসরে থাকার কারণে অনেকের মানসিক একঘেয়েমিও লাগতে পারে। এই নিদারুণ সময়ে আমরা শিল্পীরা যদিগানে গানে তাঁদের মননেও সুস্থতা জাগিয়ে তুলে এই অসহায় মানুষের জন্য কিছু অবদান রাখতে পারি তবে আমি মনে করবোআমাদের গান গাওয়াটা কিছুটা হলেও সার্থক।

এদিকে প্লুং ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যতম গিটারিষ্ট মিলন চাকমা হিল ভয়েসকে জানান, প্রত্যেকটি সংকটে সংস্কৃতির ইতিবাচক চর্চা অবশ্যই সংকট উত্তোরণে ভূমিকা রাখে। এই গান কেবলমাত মনোরঞ্জনের জন্য তো নই।আমাদের গান চর্চার সারার্থ যদি খুঁজি তবে তার মধ্যে আছে- ‘মানুষ’। যার  জন্য আমরা গান করি সে মানুষের সংকটে গান নিয়ে পাশে দাঁড়াবো সেটাই তো স্বাভাবিক। তিনি বনফুলের জন্য জুম্ম তারুণ্যের ভালোবাসা ইভেন্টের উদ্যোক্তাদের উদ্যোগের  প্রশংসাও করেন।

তিনি আরো বলেন, প্লং ব্যান্ডের যে গান চর্চার চেষ্টা করে তার মধ্যে পাহাড়ের হাহাকার আছে। তাই পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসীদের এই সংকটে প্লুং ব্যান্ড সর্বদা মানবতার জয়গান গেয়ে পাহাড়ের প্রত্যন্তে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চায়। উল্লেখ্য প্লুং হচ্ছে ম্রো আদিবাসীদের একটি ঐতিহ্যবাহী বাঁশি।

উক্ত শিল্পীরা বাদেও বিভিন্ন শিল্পী তাঁদের সংহতি জানিয়েছেন এই জুম্ম তরুণদের সাথে। সংহতি জানানো শিল্পীদের মধ্যে আছেন পাহাড়ের বিশিষ্ট শিল্পী রঞ্জিত দেওয়ান, কালায়ন  চাকমা, প্লূং ব্যান্ডের নারী ভোকাল জয়ন্তী চাকমা প্রিয়াংকা, মাদল ব্যান্ডের রিটন চাকমা, ভারতের চাকমা শিল্পী নভোনীল চাকমা, অষ্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বিশিষ্ট নারী শিল্পী বনশ্রী চাকমা কচি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কন্ঠশিল্পী নবনীতা হৃদি, বান্দরবানের নবকুমার তঞ্চঙ্গ্যা, সুজানা চাকমা (কেকা), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সারকিউ চাকমা সহ আরো অনেক কন্ঠ শিল্পী।