রাবিতে আদিবাসী দিবস পালিত: যেকোনো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান

0
215

হিল ভয়েস, ১০ আগস্ট ২০২৩, রাজশাহী: গতকাল ৯ আগস্ট ২০২৩ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি’ শ্লোগানকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়েও আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভা ও র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। সভায় ছাত্র নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে তরুণদেরকে যেকোনো ধরনের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গতকাল বিকেলে প্রথমে বিশ্বিবদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র থেকে একটি র‌্যালি শুরু করা হয় এবং ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান জায়গা ঘুরে ডিন্স কমপ্লেক্স ভবনে গিয়ে র‌্যালিটি শেষ করা হয়। র‌্যালি শেষে ডিন্স কমপ্লেক্স মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা সুশান্তো মাহাতোর সভাপতিত্বে এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জেন্টল চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. সফিকুন্নবী সামাদী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম কনক।
এছাড়া এতে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি জীনিচ চাকমা, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ মুন্ডা, আদিবাসী ছাত্র সংঘ,বশেমুরপ্রবি এর সভাপতি তপন চাকমা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক বিজয় চাকমা এবং আদিবাসী বিষয়ক প্রমাণপত্র পাঠ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চেসি ত্রিপুরা।

আলোচনা সভার প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. সফিকুন্নবী সামাদী বাংলাদেশে বসবাসরত সকল আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আমিরুল ইসলাম কনক আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার আদায় করার লক্ষ্যে সকল আদিবাসী গোষ্ঠীকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান এবং সরকারকে আরও আন্তরিক হবার আহবান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে বিজয় চাকমা বলেন ‘জাতিসংঘ ১৯৯৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী পালনের স্বীকৃতি প্রদান করে এই মর্মে যে, যাহাতে প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র তাদের রাষ্ট্রে বসবাসরত আদিবাসীদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সুবিধাসহ মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে সোচ্চার হয় এবং পদক্ষেপ প্রহণ করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ‘দেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস নেই’ এই মর্মে নানা ধরনের ফাঁক-ফোঁকড়ের কথাবার্তা, প্রোপাগাণ্ডার আশ্রয় গ্রহণ করে প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তিনি তারুণ্যকে যেকোনো ধরনের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি জীনিচ চাকমা বলেন, ‘পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীনভাবে, নিজ আত্মপরিচয়ের মাধ্যেমে বাঁচবার অধিকার রয়েছে। নিজ আত্মপরিচয়, স্বাতন্ত্র্যবোধ, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রামে যুগে যুগে বিভিন্ন নিপীড়িত, শোষিত ও বঞ্চনার স্বীকার হওয়া জাতিগোষ্ঠীগুলো একদিন স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। তাই আমি বিশ্বাস করি পাহাড় এবং সমতলের যে সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠী আজ নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে তারা কোনো একদিন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হবে। আজ পাহাড় এবং সমতলের সকল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী একে-অপরের প্রতি সংহতি জোরদার করে আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামিল হওয়ার যথোপযুক্ত সময় এসেছে।

আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুন মুন্ডা তার বক্তব্যে বাংলাদেশে বসবাসরত সকল আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের স্বার্থে সবাইকে এক হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সভা শেষে বিকেল ৫ টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়।

আরো পড়ুন

বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় আদিবাসী যুবদের অধিকতর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে: ঢাকায় সন্তু লারমা

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের জীবন সংকটে: চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত

আদিবাসী বললে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে, এটা অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা: রাঙ্গামাটিতে ঊষাতন তালুকদার