আদিবাসীরা ক্রমাগত নিপীড়িত হয়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছেন: কক্সবাজারে আদিবাসী দিবসে বক্তাগণ

0
255

হিল ভয়েস, ১০ আগস্ট ২০২৩, কক্সবাজার: গতকাল ৯ আগস্ট ২০২৩ কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তাগণ বলেছেন, নানাবিধ কর্পোরেশন, নামস্বর্বস্ব নানা উন্নয়ন প্রকল্প, ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও মহল দ্বারা আদিবাসীরা ক্রমাগত নিজেদের বাস্তুভিটা হারাচ্ছেন এবং নিগৃহীত, নিপীড়িত হয়ে প্রান্তিক থেকে প্রান্তিকতর হয়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে।

গতকাল সকাল ১১ টায় কক্সবাজার পৌরসভা প্রাঙ্গণে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মং এ খেন মংমং এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর কক্সবাজার জেলার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি থোই অং এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মংথেনহ্লা রাখাইন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন, বাপা’র কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম, জনসংহতি সমিতির নাইক্ষ্যছড়ি উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কিরণ তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব চাকমা, আদিবাসী ফোরামের কক্সবাজার জেলা শাখার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মা টিন টিন, হাজং ছাত্র সংঘের নেতা আশীষ হাজং এবং মহেশখালী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছেন থেন।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বাংলাদেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগণ এখন এক কঠিন সংকট ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। দেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে এ বছরের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। কিন্তু বিগত সময়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় করা সমস্ত অঙ্গীকার কেবল মুখের বুলিতে পর্যবসিত হয়েছে। দেশের আদিবাসীদেরকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি তো দূরের কথা, গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার মসনদে বসে থাকা আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচনের পূর্বে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী জনগণের জন্য যে প্রতিশ্রুতিগুলো ব্যক্ত করেছিল সেগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়ন করেনি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সংঘাত নিরসনের লক্ষে ২৫ বছর পূর্বে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ স্থরিব রাখা হয়েছে। চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোসহ অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী মানুষের জীবন আরও কঠিন ও অনিশ্চিত বাস্তবতার সাথে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যদিকে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করার প্রসঙ্গগুলোও সরকার বেমালুম ভুলে গেছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা আদিবাসী তরুণরা বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর শতাব্দী ব্যাপি চলা রাষ্ট্রীয় শোষণ বৈষম্য বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিজেদের মেধা ও জ্ঞান এবং উদ্যোগ ক্ষমতাকে নি:স্বার্থভাবে কাজে লাগাবে এবং আদিবাসীদের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ়করণে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবে।

নেতৃবৃন্দ সরকার ও প্রশাসনের নিকট কক্সবাজারের দক্ষিণ হ্নীলা বড় বৌদ্ধ বিহারের জায়গা দখলদারমুক্ত করা এবং কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নিজস্ব জমিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অবৈধ প্রকল্প বাতিল করার দাবি জানান।