বিলাইছড়িতে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন বৃদ্ধির অভিযোগ

0
875
ছবি: প্রতীকী

হিল ভয়েস, ২৭ আগস্ট ২০২২, রাঙ্গামাটি: সম্প্রতি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলায় সাধারণ ও নিরীহ আদিবাসী জুম্ম জনগণের উপর সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাধারণভাবে সন্ত্রাসী দমনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকার ন্যায় বিলাইছড়িতেও জনসংহতি সমিতি ও এর সহযোগী সংগঠন এবং পার্বত্য চুক্তির সমর্থক জনগণের উপর সেনাবাহিনীর নিয়মিত নজরদারি, তল্লাসি ও কর্তৃত্ব থাকলেও সম্প্রতি নিরীহ জনগণের উপর এই নিপীড়নের মাত্রা আরো বেড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিশেষ করে সম্প্রতি বিলাইছড়িতে সেনাবাহিনীর বীর ৩২ রেজিমেন্ট আসার পর এলাকায় আবারও সেনা অভিযান, বাড়ি তল্লাসি, নিরীহ জনগণকে মারধর, আটক ও হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক অধিকারকর্মী জানান, বীর ৩২ রেজিমেন্টের কম্যান্ডিং অফিসার আহসান হাবিব রাজিব এর কথাবার্তা ও কর্মকান্ড অনুসারে বোঝা যায় যে, তিনি একজন মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ।

তিনি জানান, সেনাবাহিনী বর্তমানে বিলাইছড়ি এলাকায় গাছ-বাঁশের ব্যবসা বা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। নিজের বাগানের বা বাড়ির আশেপাশের গাছ-বাঁশও পারমিট ছাড়া বিক্রি করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী বলছে যে, বনবিভাগের সমস্ত এলাকা সরকারের। তারা (সেনাবাহিনী) সরকারি লোক, সুতরাং এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে রয়েছে। অনুমতি না নিলে ব্যবসা দূরে থাক, ঘরবাড়ি তৈরি করতেও কোনো গাছ, বাঁশ কাটতে দেবে না তারা।

ফারুয়া এলাকার এক গ্রামবাসী জানান, ফারুয়া এলাকার মানুষ প্রতি বছর ফরাস শিম চাষ করে যথেষ্ট আয় উপার্জন করে যা তাদের জীবিকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঐ শিম চাষ করার জন্য গাছ বা বাঁশের ঝোঁপের দরকার হয়, যেটাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘গীল’। সম্প্রতি সেনা সদস্যরা এই শিম চাষের জন্য গীল পর্যন্ত কাটতে দিচ্ছে না। অথচ শিম চাষ ফারুয়া এলাকাবাসীর জীবিকা নির্বাহের অন্যতম অবলম্বন বলা চলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক গ্রামবাসী জানান, গত ১৭ আগস্ট ২০২২ ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা এক জুম্ম ব্যবসায়ীর ক্রয়কৃত ৬০০০ (ছয় হাজার) মুলি বাঁশ জব্দ করে এবং সেগুলো এখন সেনা ক্যাম্পের কাজে ব্যবহার করছে। উদজয় তঞ্চঙ্গ্যা নামে স্থানীয় ওই ব্যবসায়ী ঐ বাঁশগুলো কিনেছিলেন ৯৬ হাজার টাকায়। উক্ত বাঁশ কর্ণফুলী পেপার মিলে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। সেনা সদস্যরা ওই ব্যবসায়ীকে একটা টাকাও দেয়নি।

ওই গ্রামবাসী আরো জানান, কিছু গাছ, বাঁশ বিক্রি করে স্থানীয় লোকজন কিছু উপার্জন করে থাকে। এখন সেটাও বন্ধ। বর্তমানে ফারুয়া এলাকায় অথনৈতিক দূরবস্থা চলছে।

ফারুয়া ইউনিয়নের তক্তানালা গ্রামের বাসিন্দা নোয়া মেলা চাকমা নামে এক বিধবা মহিলা জানান, তক্তানালা সেনা ক্যাম্পের নীচে ৩.০০ কানি পরিমাণ তার এক জমি আছে, সেখানে তিনি ফরাস শিমসহ নানা শাক-শবজির চাষ করে থাকেন। বর্তমানে সেনা সদস্যরা তাকে ঐ জমিতে চাষাবাদের কাজ করতে দিচ্ছে না। উক্ত জায়গা ব্যতীত চাষ করার আর কোনো জায়গা নেই বলে জানান নোয়া মেলা চাকমা। তাই তিনি এখন নিরুপায়।

বিলাইছড়ির আরেক অধিকারকর্মী জানান, সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই সেনামদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের একটি দল বিলাইছড়ি উপজেলা এলাকায় আনার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার জন্য গত ১৭, ১৮ ও ২১ আগস্ট ২০২২ ডিজিএফআই’এর সদস্য নজরুল বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কেংড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রাসেল মারমা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি অংসা খৈ মারমার সাথে ৩ দফা গোপন বৈঠক করে। ডিজিএফআই’এর সদস্য নজরুল ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী দলের বিলাইছড়ি উপজেলা শাখা কমিটি গঠন করিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাও চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, চেয়ারম্যান রাসেল মারমা ও অংসা খৈ মারমা ইতোপূর্বে জনসংহতি সমিতির ন-কাবা ছড়া গ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক থুই মং মারমাকে একবার বিলাইছড়ি বাজারে ডেকে আটক করে রাখে এবং এক পর্যায়ে জনসংহতি সমিতির কাজ করবে না বলে থুই মং মারমার কাছ থেকে জোরপূর্বক অঙ্গীকার আদায় করে। জনসংহতি সমিতির কাজ করলে থুই মং মারমাকে মেরে ফেলা হবে বলেও চেয়ারম্যান রাসেল মারমা ও অংসা খৈ মারমা হুমকি প্রদান করে। পরে থুই মং মারমা ভয়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যান।

উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ২০২২ বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিলাইছড়ি সেনা জোনের ৩২ বীর ইস্ট বেঙ্গল রেমিমেন্টের জনৈক ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে ২১ জনের একটি দল কর্তৃক দুই নিরীহ গ্রামবাসীকে বেঁধে অমানুষিক মারধর ও সেনা ক্যাম্পে আটক রাখা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সেনাবাহিনী দুই গ্রামবাসীকে মারধরের পর বিলাইছড়ি সেনা জোনে ৫ ঘন্টার অধিক আটক রাখার পর ছেড়ে দেয়।

মারধর ও আটকের শিকার দুই গ্রামবাসী হলেন- মিন্টু চাকমা (৪০), পীং-মৃত হীরালাল চাকমা, গ্রাম-বাঙালকাটা, কেংড়াছড়ি ইউনিয়ন ও সন্তু চাকমা (৩৫), পীং- মৃত হীরালাল চাকমা, গ্রাম-ঐ। তারা দুই আপন ভাই।