বিলাইছড়িতে বমপার্টির গুলিতে নিহত ৪ ও আহত ২ নিরীহ গ্রামবাসীদের নাম পাওয়া গেছে

0
621
ছবি : প্রতিকী

হিল ভয়েস, ২২ জুন ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়া গ্রামে সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নৃশংস গুলিতে নিহত ৪ ও আহত ২ নিরীহ ত্রিপুরা গ্রামবাসীর নাম পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যা আনুমানিক ৬:০০ টার দিকে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকায় সংলগ্ন রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়া গ্রামে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৪ নিরীহ ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে হত্যা এবং ২ শিশুকে গুরুতর আহত করা হয়। আরো কয়েকজন পালিয়ে বেঁচে যান এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় খবর দিতে সক্ষম হন।

হামলায় নিহত গ্রামবাসীরা হলেন- ১। বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা (৫২), পীং-বাদলা ত্রিপুরা; ২। সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা (২৩), পীং-বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা; ৩। বীর কুমার ত্রিপুরা (২১), পীং-বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা এবং ৪। ধনরাম ত্রিপুরা (১৬), পীং-সিতারাম ত্রিপুরা।

গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হওয়ার পরও সন্ত্রাসীরা বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরাকে কুপিয়ে মাথা কেটে দিয়েছে বলে গ্রামবাসীর সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে আহত শিশুরা হলো- ১। অনন্ত ত্রিপুরা (৪), পীং-নিহত সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা ও ২। সুমনা ত্রিপুরা (১ বছর ৬ মাস), পীং-সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা। আহত শিশুদের পার্শ্ববর্তী গ্রামে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ঐ সময়ে সাইজাম পাড়া গ্রামের আদিবাসী ত্রিপুরা গ্রামবাসীরা যে যার বাড়িতেই অবস্থান করছিল ঠিক তখনি বম পার্টি সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দল সেখানে এসে গ্রামবাসীদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে।

জানা গেছে, সাইজাম পাড়া গ্রামে কিছু সময় পূর্বেও বেশ কিছু বম, পাংখোয়া, খুমি, মারমা ও ত্রিপুরা পরিবার মিলে বসবাস করেছিল। পরে বম, পাংখোয়া, খুমি ও মারমা পরিবারগুলো অন্যত্র চলে চায়। সর্বশেষ সেখানে মাত্র পাঁচটি ত্রিপুরা পরিবার পাশাপাশি অবস্থান করছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্শ্ববর্তী এলাকার স্থানীয় এক মুরুব্বি বলেন, কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়াই একেবারে ঠান্ডা মাথায় বম পার্টির সন্ত্রাসীরা পাগলের মত গ্রামবাসীদের উপর গুলি চালিয়ে এই কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ড চালিয়েছে। তিনি বলেন, এটি রীতিমত গণহত্যা।

বর্তমানে ওই গ্রাম ও আশেপাশের গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক যেমন বিরাজ করছে, তেমনি ক্ষোভও সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ঘটনার পরপরই Kuki-Chin National Front-KNF (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ) নামে বম পার্টির একটি ফেসবুক একাউন্টে লিখিত স্ট্যাটাসেও এই হত্যাকান্ডের দায় শিকার করা হয়েছে এবং এমনকি এই হত্যাকান্ডে একপ্রকার উল্লাস প্রকাশ করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের কাজটিকে তারা তাদের কমান্ডো হেডহান্টার টিম (মুন্ডুশিকারী দল) এর সফল অপারেশন বলে উল্লেখ করেছে।

তবে এতে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এবং নিজেদের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কাজকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য নিহত নিরীহ গ্রামবাসীদের জেএসএস’এর তথাকথিত জেএলএ বাহিনীর সদস্য হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
কেএনএফ এর উক্ত স্ট্যাটাসের শিরোনামে লেখা হয়েছে- “জাইজাম পাড়ায় সদ্য স্থাপিত জেএসএস-এর ক্যাম্পে কেএনএফ’র কমান্ডো হেডহান্টার টিম-এর সফল অপারেশন”।

এভাবেই বর্তমানে সেনাবাহিনী ও ইসলামী জঙ্গীদের মদদে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার ৯টি উপজেলাকে নিয়ে বমপার্টির কল্পিত কুকি-চীন ষ্টেট থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে উচ্ছেদে নেমেছে।