বিলাইছড়িতে নিরীহ ত্রিপুরা হত্যাকান্ডে টিএসএফ ও বাত্রিকস’এর নিন্দা, সমাবেশের উপর সেনা নিষেধাজ্ঞা

0
987

হিল ভয়েস, ২৪ জুন ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: সম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়া গ্রামে সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কর্তৃক গুলিতে নৃশংসভাবে ৪ নিরীহ ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে হত্যা ও ২ শিশুকে আহত করার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম বাংলাদেশ (টিএসএফ) ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বাত্রিকস)।

গতকাল ২৩ জুন ২০২২ টিএসএফ’এর পক্ষ থেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নয়ন ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক অঞ্জু লাল ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অপরদিকে আজ (২৪ জুন ২০২২) বাত্রিকস এর সভাপতি সুশীল জীবন ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত অপর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

টিএসএফ’এর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২১ জুন মঙ্গলবার আনুমানিক সন্ধ্যা ৬:০০ ঘটিকায় রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ৪নং বড়থলি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড, সাইজাম পাড়া গ্রামে এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে একই পািরবারের ৩ জনসহ মোট ৪ জন নিরীহ জুমচাষি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে হত্যাসহ ২জন শিশুকে গুরুতর আহত করে। এতে কয়েকজন পালিয়ে বেঁচে যান এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় খবর দিতে সক্ষম হন।

হামলায় নিহতরা হলেন- হামলায় নিহত গ্রামবাসীরা হলেন- বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা (৫২), পীং-বাদলা ত্রিপুরা, সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা (২৩), পীং-বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা, বীর কুমার ত্রিপুরা (২১), পীং-বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা এবং ৪। ধনরাম ত্রিপুরা (১৬), পীং-সিতারাম ত্রিপুরা। গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত পরও সন্ত্রাসীরা বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরাকে কুপিয়ে মাথা কেটে চলে যায়। অপরদিকে আহত শিশুরা হলো- ১। অনন্ত ত্রিপুরা (৪), পীং-নিহত সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা ও ২। সুমনা ত্রিপুরা (১ বছর ৬ মাস), পীং-সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা। আহতদের পার্শ্ববর্তী গ্রামে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐ সময়ে সাইজাম পাড়া গ্রামের আদিবাসী ত্রিপুরা গ্রামবাসীরা যে যার বাড়িতেই অবস্থান করছিল ঠিক তখনি বম পার্টি সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দল সেখানে এসে গ্রামবাসীদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এহেন সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি এবং এই নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটনার প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

টিএসএফ’এর প্রেস বিবৃতিতে উল্লিখিত চারটি দাবি হল- (১) ত্রিপুরা গ্রামে হামলা করে নিরীহ জুম চাষী ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীদের হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক। (২) নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক। (৩) আক্রান্ত গ্রামবাসীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। (৪) কেএনএফ’র সংগঠনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

বাত্রিকস’এর প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, বান্দরবান জেলা কমিটিসহ সারা বাংলাদেশের সকল আঞ্চলিক কমিটি এহেন কার্যকলাপে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বাত্রিকস’এর বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের নিকট দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, আহতদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোর দাবি জানানো হয়।

সমাবেশের উপর সেনা নিষেধাজ্ঞা

এদিকে, বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে যে, সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেডের পক্ষ থেকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিকে ফোন করে উক্ত হত্যাকান্ড এবং এ বিষয়ে কোনো সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী বান্দরবানের বিভিন্ন ছাপাখানায় উক্ত বিষয়ে যাতে কোনো প্রকার ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ছাপানো না হয় তার নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানা গেছে। কেউ যদি ছাপাতে আসে তাহলে সেনাবাহিনীকে খবর দিতেও বলেছে বান্দরবান ব্রিগেড।

সেনাবাহিনী আরও নির্দেশনা দেয় যে, ঘটনার বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি বা স্মারকলিপি প্রদান করা যাবে। তবে কেউ যেন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশ না করে।

এমতাবস্থায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।