বান্দরবানের নোয়াপতং-এ সেনাবাহিনী কর্তৃক সন্ত্রাসী ধরার নামে গ্রাম ঘেরাও, ছাত্রসহ নিরীহ জুম্মদের মারধর

0
1327
ছবি: প্রতীকী

হিল ভয়েস, ২৮ এপ্রিল ২০২১, বান্দরবান: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশাল দল সন্ত্রাসী ধরার নামে বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন বান্দরবান সদর উপজেলার নোয়াপতং ইউনিয়নের নোয়াপতং মুখ উপর পাড়া নামে এক জুম্ম গ্রাম ঘেরাও করে গ্রামের নিরীহ ছাত্রসহ গ্রামবাসীদের বেদম মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেনা সদস্যরা এসময় গ্রামের অন্তত ১০ জন ছাত্রসহ প্রায় ১৫ নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে লাঠি-সোটা ও কিল-ঘুষি দিয়ে মারধর করে বলে জানা গেছে।

আজ ২৮ এপ্রিল ২০২১ ভোর সকাল ৪:০০ টা হতে ৫:০০ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং নোয়াপতং মুখ উপর পাড়াসহ আশেপাশের জুম্ম গ্রামে উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, এই ঘটনাটিকে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ধরা এবং সন্ত্রাসীদের পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করার ঘটনা দাবি করলেও কেউ কেউ এটাকে সেনাবাহিনীর নাটক বলে অভিহিত করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোর ৪:০০ টার দিকে সেনাবাহিনীর বান্দরবান সদর সেনা জোন, রোয়াংছড়ি সেনা ক্যাম্প ও বেতছড়ি সেনা ক্যাম্প এর প্রায় ৪০০ জনের একটি সেনাদল সন্ত্রাসী এসেছে এমন তথ্য পেয়ে নোয়াপতং মুখ উপর পাড়া গ্রামে আসে। তাদের মধ্যে একটি দল পায়ে হেঁটে এবং আরেকটি দল ৯ টি গাড়ি নিয়ে সেখানে আসে। আসার সাথে সাথে সেনা সদস্যরা নোয়াপতং মুখ উপর পাড়াসহ আশেপাশের এলাকা ঘেরাও করে।

একপর্যায়ে সেনা সদস্যরা ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে নোয়াপতং মুখ উপর পাড়া গ্রামের ছাত্রসহ জুম্ম গ্রামবাসীদের ধরে ধরে মারধর করতে শুরু করে বলে জানা যায়। এসময় সেনা সদস্যরা ১০ জন জুম্ম ছাত্রকে প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং মারধর করে। এছাড়া কয়েকজন মধ্যবয়সী জুম্মকে মারধর করে।

মারধরের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- উশৈসিং মারমা (২০); মংসিংঅং মারমা (১৯); উহ্লাঃ মারমা (২১); হ্লাউমং মারমা (২০); চথুই মারমা (৪৫); উচিংঅং মারমা (৪০); ক্যয়ডমং মারমা (৪৮), হ্লাসিংমং মারমা (৩৮) ও ক্যচিংউ মারমা (২৩)।

এসময় সেনা সদস্যরা নোয়াপতং মুখ উপর পাড়ার পার্শ্ববর্তী একটা স্থানে অবস্থিত পরিত্যক্ত একটি জুমঘর থেকে একটি পিস্তল, ২৫৮ রাউন্ড গুলিসহ কিছু সাজসরঞ্জাম পায় বলে দাবি করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী, সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে এবং পিস্তল ও গুলি উদ্ধারের এই দাবিকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করছেন। তাদের দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা অভিযান, সেনাশাসন এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ জুম্ম জনগণের উপর চলমান অমানবিক দমন-পীড়ন ও নির্যাতনকে জায়েজ করার জন্যই সেনাবাহিনী এসব নাটক সাজিয়ে থাকে। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও সেনাবাহিনী কর্তৃক সময়ে সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী ধরার সাজানো নাটক করার অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনীর এই অভিযানের সময় সেনাদলের সাথে সেনা পোশাক পরিহিত অবস্থায় সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের দুই সদস্যকেও দেখতে পাওয়া যায়।

জানা গেছে, বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় জনগণ এখনও গভীর উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্কে অবস্থান করছেন।

ঘটনার পর সেনাবাহিনী নোয়াপতং মুখ উপর পাড়া থেকে সরে আসলেও আশেপাশে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।