পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি: রক্তাক্ত শান্তির শ্বেত কপোত

0
533

বিজয় বিকাশ ত্রিপুরা

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জাতির অস্তিত্ব আজ চরমভাবে বিপদাপন্ন। জুম্ম জাতির অস্তিত্বের শেকড়ে টান পড়েছে। জুম পাহাড়ে সবাই এক অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন জীবন অতিবাহিত করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত না হওয়ায় জুম্ম জনমনে হতাশা, ক্ষোভ বিরাজ করছে। ২৪ বছরে শুধুই দীর্ঘশ্বাস! আর জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সন্দেহ-অবিশ্বাস।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র সুসংহত ও আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির প্রত্যাশা নিরর্থক। শান্তির সাথে মানবাধিকারের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আইন-শৃঙ্খলা, আইনের সুশাসন, সৌভ্রাতৃত্ব, সমঝোতা, বন্ধুত্ব, সুনাম, আন্তরিকতা, অনাগ্রাসন, অহিংস অবস্থান এসবই শান্তির প্রতিশব্দ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ অত্যন্ত সহজ-সরল ও শান্তি প্রিয়। তারা অশান্তি চায় না, শান্তি চায়। মনে প্রাণেই শান্তি চায়। সেই শান্তির প্রত্যাশাকে নস্যাৎ করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর পরই নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একটি বিশেষ কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল চায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা জিঁইয়ে থাকুক। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত থাকলে ওই কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের লাভ! কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আবার অশান্ত হয়ে উঠুক এটা দেশের কোন প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিকামী মানুষের কামনা হতে পারে না।

শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এবং আশি দশকে স্বৈরাচারী সামরিক শাসকরা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে সমস্যা সমাধানের ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। সামরিক শাসকরা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে সামরিক উপায়ে সমাধানের জন্য আশি দশকে সামরিক শাসন ‘অপারেশন দাবালন’ জারি করে অধিকারকামী জুম্ম জনগণের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন, দমনমূলক সমস্ত স্ট্রীম রোলার চালিয়েছিল। পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানার্থে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা দেশে-বিদেশে ‘শান্তি চুক্তি’ নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন। অবাক করা বিষয় হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের দুই যুগ হতে চললো কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অতীতের সামরিক শাসকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একইভাবে ভুল পথে হাঁটছে!

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরও ২০০১ সালে অপারেশন দাবানলের স্থলে ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামক সামরিক শাসন জারি করা হয়। প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু ঘটনা ঘটছে। কথা ছিল- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক অপারেশন উত্তরণসহ সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু আজ আমরা কি দেখছি? আমরা দেখছি ঠিক উল্টো! নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়ে পাহাড়ে আজ সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে নতুন করে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে! নতুন করে নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। অপরদিকে, সেনা অভিযানের নামে গভীর রাতে বাড়ি ঘেরাও- তল্লাসী, গ্রেফতার, ক্যাম্পে আটকে রেখে লোমহর্ষক নির্যাতনের বিষয়টি এখন নৈত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামক জারিকৃত সেনা শাসন জোরদার করা হয়েছে। অথচ ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- “পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটি রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক সমস্যাটিকে রাজনৈতিকভাবে মীমাংসা করতে হবে। মিলিটারি দিয়ে এর সমাধান হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে আর কোন সংঘাত নয়, যেন শান্তি বজায় থাকে। এই শান্তির পথ ধরে আসবে প্রগতি।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে হয় আপনার উল্লেখিত বক্তব্যের দৃশ্যমান কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখতে না পাওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আপনার এ বক্তব্য নিছক কথার কথা মনে হয়!

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মুনাফালোভী, পরিবেশ ধ্বংসকারী তথাকথিত উন্নয়ন, বাণিজ্যিক পর্যটন এখানকার প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসসহ জুম্ম জনগণের জীবন-জীবিকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহিরাগত সেটেলার মুসলিম ভূমি দস্যুদের দৌরাত্ম্যে জুম্ম জনগণ প্রতিনিয়ত নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, হামলাসহ নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। শুধু ভূমি আগ্রাসন নয়, সর্বত্র গ্রাম-এলাকা-স্থানের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে। ইসলামী সম্প্রসারণবাদ কায়েমের অপতৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। অপরদিকে সরকারের জোর জবরদস্তিমূলক টুঁটি চেপে ধরে গেলানো তথাকথিত উন্নয়ন জুম্ম জনগণের জীবন-জীবিকার হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। জুম্ম জনগণ যখন এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তখন তাদের সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয় যে, ওরা রাষ্ট্র বিরোধী, সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি ইত্যাদি। তাই সঙ্গত: কারণে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। জুম্ম জনগণ প্রতিমুহূর্ত চরম নিরাপত্তাহীন ও অস্তিত্ব সংকটে জীবন অতিবাহিত করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপনিবেশিক কায়দায় শাসনের মানসিকতা যেমন পরিবর্তন হওয়া দরকার তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতাগুলো কি কি সেটা চিহ্নিত করাটাও এখন অত্যন্ত জরুরী। সরকারকে এটা মনে রাখা দরকার যে- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে যতই কালক্ষেপণ করা হবে ততই স্থায়ী শান্তি ও সুষম উন্নয়নের অগ্রযাত্রাও ব্যাহত হবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানের সকল দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।

দেশে আমলাতন্ত্রের দুর্দান্ত দাপট বেড়েই চলছে। আওয়ামী লীগ টানা এক যুগের অধিক সময় ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। ফলে আজ রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সরকার একাকার হয়ে গেছে। শাসন ব্যবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রাম তার অনন্য দৃষ্টান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামের নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকাও নি:সন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে চলছে কোটিপতি হওয়ার প্রতিযোগিতা! স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতি, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ঘুষ, অবৈধ ব্যবসা, চাকুরী বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ করার কারণে তারা জনসংহতি সমিতিকে প্রতিপক্ষ মনে করে! তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে ভুলভাল বুঝিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ষড়যন্ত্র দীর্ঘ দিনের। তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সমর্থক ও জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানির মাধ্যমে এলাকা ছাড়া ও কোনঠাসা করার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বহু নেতা-কর্মী-সমর্থক আজ স্থানীয় আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রে মিথ্যা মামলায় ফেরারী জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব-সংঘাতকেও জনসংহতি সমিতির উপর দায় চাপানোর ঘটনা দেখা যায়। ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে কথিত সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি দমনের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা প্রবাহ জুম্ম জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা জুম্ম হলেও তারা জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে জনসংহতি সমিতি তথা জুম্ম জনগণের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে ও বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালাচ্ছে যা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী কার্যকলাপ হিসেবে নি:সন্দেহে বলা যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে কারা অশান্তি সৃষ্টি করছে? পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলে কেন তাকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হয়রানি করা হবে? পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এমন ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করাও যেন অপরাধ! হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের কিছু ভাড়াটিয়া সাংবাদিক এনে জনসংহতি সমিতির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার নাটকও মঞ্চস্থ করা হচ্ছে! জনগণকে বোকা মনে করে এসব অপপ্রচারের নাটক মঞ্চস্থ করতে গিয়ে নিজেরাই জনগণের কাছে হাসির খোরাক হয়েছে। নাটকের পরিচালকরা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিজেদের অবস্থান ও প্রয়োজনীয়তাকে জাহির করতে গিয়ে সন্ত্রাসী এলাকা হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে! এতে করে দেশে-বিদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টিসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ও প্রশাসনের ব্যর্থতায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নানা তালবাহানায় দুই যুগের অধিক সময় ধরে কার্যত: অচলাবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ব পরিস্থিতির মতো সামরিকায়নে নিরাপত্তাবাহিনীর মহড়া দেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আর কোন আন্তরিক ও স্বদিচ্ছা আছে বলে মনে হচ্ছে না। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা-কর্মীদের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানির মাধ্যমে এলাকা ছাড়া ও কোনঠাসা করে দেয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দাবি-দাওয়া নিয়ে কোন কর্মসূচি পালন করার মতো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। বিগত সময়ে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কাজে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এসকল ঘটনা প্রবাহ জুম্ম জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে।

ক্ষমতালিপ্সু, চরম সুবিধাবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল, দালালরা বিশেষ বাহিনীর মদদে গাঁটছড়া বেঁধে জুম্ম স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জুম্ম জাতীয় অস্তিত্বকে আজ এক কঠিন সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আরাকান লিবারেশন পাটি(এএলপি) থেকে দলচ্যুত একটি গ্রুপ মারমা লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) বা মগ পার্টি নামে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় আজ ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করে চলেছে। মগ পার্টি নামক সন্ত্রাসী গ্রুপটির অবস্থান এক সময় বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি ছিল। স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মদদে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মগ পার্টিকে রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানা যায়। মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রদানে জনগণকে বাধ্য করেছিল। এখন মগ পার্টি’র সন্ত্রাসীরা রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছে। মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা হিসেবে জেলা ও উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নামও শুনা যায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মগ পার্টি, সংস্কারপন্থী জেএসএস, ইউপিডিএফ(গণতান্ত্রিক) নেতাদের বেশ দহরম-মহরম! মগ পার্টিসহ নানা সন্ত্রাসী গ্রুপের মাধ্যমে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, হত্যা, গুম, চাঁদাবাজির এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দালের জের ধরে মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে একপক্ষ-অন্যপক্ষকে হত্যা করে জনসংহতি সমিতি নেতা, কর্মী, সমর্থকদের ওপর এ ঘটনার দায় চাপানো হচ্ছে। জনসংহতি সমিতি নেতা, কর্মী, সমর্থকদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা চালাতে গিয়ে অনেক পরিবার নি:স্ব হয়ে গেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন ছাঁই চাপা আগুনের মতো রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ দুই যুগ হতে চললো এখনও রক্তাক্ত শান্তির শ্বেত কপোত! সামরিক শাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্তি ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কার্যকর করে জুম্ম জাতির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার একমাত্র পথ হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন। তাই আত্মত্যাগের মহান আদর্শে বলিয়ান হয়ে জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে ইস্পাত কঠিন ঐক্য ও সংগ্রামী চেতনা নিয়ে পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। বলা বাহুল্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে জুম্ম জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গতিপথ শেষাবধি শাসকগোষ্ঠী কোন পথে ঠেলে দেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।