পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা সামরিকায়ন ও প্রচন্ড দমনের সম্মুখীন: এমরিপের সভায় এমআরজি’র প্রতিনিধি

0
520

হিল ভয়েস, ১৮ জুলাই ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চলমান জাতিসংঘের এক্সপার্ট ম্যাকানিজম অন দ্য রাইট্স অব ইন্ডিজেনাস পিপল্স (এমরিপ) এর অধিবেশনে মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল (এমআরজিআই) প্রতিনিধি জেনিফার ক্যাসেলো (Jennifer Castello) বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী তাদের স্বতন্ত্র আদিবাসী পরিচিতি, ভূমি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করে আসছেন, কিন্তু একের পর এক সরকারসমূহ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার পরিবর্তে তারা সামরিকায়ন ও প্রচন্ড দমনের সম্মুখীন হয়েছেন, যা এক ব্যাপক সামরিক সংঘাতের সৃষ্টি করেছে।

গতকাল ১৭ জুলাই ২০২৩, জেনেভায় বিকেলের দিকে অনুষ্ঠিত এমরিপের ১৬শ অধিবেশনে এজেন্ডা আইটেম ৩: স্টাডি এন্ড অ্যাডভাইস অন দি ইমপ্যাক্ট অব মিলিটারাইজেশন অন দ্যা রাইটস অব ইন্ডিজেনাস পিপলস এর উপর বিবৃতি উপস্থাপন করতে গিয়ে এমআরজি প্রতিনিধি এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘের এমরিপের এই ১৬শ অধিবেশনটি গতকাল শুরু হয় এবং আগামী ২১ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানা যায়।

এমআরজি প্রতিনিধি জেনিফার ক্যাসেলো আরও বলেন, বেসামরিকীকরণ এবং আদিবাসী প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি বিষয়ে ১৯৯৭ সালে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অথচ ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার উভয় বিষয় সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করেছে এবং আদিবাসীদের অস্বীকৃতি ও প্রান্তিকীকরণের আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করছে।

এমআরজি প্রতিনিধি বলেন, সামরিক বাহিনী সেনা তৎপরতা থেকে অব্যাহতি না নিয়ে, দেশের জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ অধ্যুষিত এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন দেশের এক তৃতীয়াংশ সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। সামরিক বাহিনী আগ্রাসীভাবে অর্থনীতি ও ভূমিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে, এবং অনির্বাচিত বেসামরিক সরকার সরাসরি তাদের নিয়ন্ত্রণের আওতায় রয়েছে। আদিবাসীরা জোরপূর্বক উচ্ছেদের শিকার হয়, কেবলমাত্র ৪০০ সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য নয়, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অনৈতিক বাণিজ্যিক বিনিয়োগ এবং বাঙালি নাগরিকদের বসতি প্রদানের জন্য। এসবকিছু করা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে আদিবাসীদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতির অধিকারকে লংঘন করে, ক্রমবর্ধমানভাবে জোরপূর্বক নিজেদের পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে হাজার হাজার আদিবাসীর বাস্তুচ্যুতি ও অভিবাসন ঘটিয়ে এবং ব্যাপক প্রাণ-পরিবেশগত ও আদিবাসী জ্ঞানের ক্ষতি ঘটিয়ে বন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস সাধনের নিয়ে পরিচালিত করে।

জেনিফার ক্যাসেলো আরও বলেন, এই পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অধিকারকর্মীদের জোরপূর্বক অন্তর্ধান, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনসহ এক ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সুরক্ষাকারীরা যারা সাহসের সাথে অবিচারকে প্রতিরোধ করেছে তারা সামরিক বাহিনীর হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছে। আদিবাসী নারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যৌন আক্রমণ, ধর্ষণ ও অন্যান্য ধরনের যৌন সহিংসতার অনেকগুলিই সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আদিবাসী ও তাদের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাসমূহ তুলে ধরতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং স্বাধীন তদন্ত ও জবাবদিহির উন্নয়নে মানবাধিকার সুরক্ষাকারী ও সংগঠনগুলোকে প্রবেশাধিকার প্রদান করা বাংলাদেশ সরকারের জন্য অত্যাবশ্যক।