পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক উপস্থিতি শান্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা: জেনেভায় এমরিপের সভায় জেএসএস প্রতিনিধি

0
518

হিল ভয়েস, ১৮ জুলাই ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চলমান জাতিসংঘের এক্সপার্ট ম্যাকানিজম অন দ্য রাইট্স অব ইন্ডিজেনাস পিপল্স (এমরিপ) এর অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অতিরিক্ত সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি শান্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে রয়েছে।

পিসিজেএসএস প্রতিনিধি আরও বলেন, সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিরাপত্তার ব্যাপারগুলো ছাড়িয়ে গেছে। তারা আদিবাসীদের স্বায়ত্তশাসন ও কল্যাণকে খর্ব করে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন কর্মসূচির অভ্যন্তরেও প্রবেশ করেছে। এটা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়নকে দমন করছে, যে চুক্তিতে তাদের ন্যায্য দুঃখ-দুর্দশাগুলো তুলে ধরার অভিপ্রায় ছিল।

গতকাল ১৭ জুলাই ২০২৩, জেনেভায় বিকেলের দিকে অনুষ্ঠিত এমরিপের ১৬শ অধিবেশনে এজেন্ডা আইটেম ৩: স্টাডি এন্ড অ্যাডভাইস অন দি ইমপ্যাক্ট অব মিলিটারাইজেশন অন দ্যা রাইটস অব ইন্ডিজেনাস পিপলস এর উপর বিবৃতি উপস্থাপন করার সময় জেএসএস প্রতিনিধি এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘের এমরিপের এই ১৬শ অধিবেশনটি গতকাল শুরু হয় এবং আগামী ২১ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানা যায়।

জেএসএস প্রতিনিধি মিজ অগাস্টিনা চাকমা তার বিবৃতি উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, আজ আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি বিষয়ে গভীর উদ্বেগ এবং আদিবাসী জুম্মদের দ্বারা সম্মুখীন চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি।

তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে ওই অঞ্চলে তিন দশক দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসান এবং সামরিক বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পসমূহ প্রত্যাহারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছিল। অথচ অগ্রগতি হয়েছে দুঃখজনকভাবে ধীর। ২৫ বছরে ৫০০ এর অধিক ক্যাম্প থেকে মাত্র ১০০টি সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে পুরনো ক্যাম্পের স্থলে নতুন ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। ইবগিয়া’র গবেষণা অনুসারে, সেখানে প্রতি ৪০ জন আদিবাসীর বিপরীতে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য রয়েছে।

তিনি বলেন, অধিকন্তু, আদিবাসী অধিকারকর্মীদের ‘সন্ত্রাসী’, ‘দুর্বৃত্ত’ ও ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে লেবেল লাগানোর কাজ কেবল তাদের দ্বারা সম্মুখীন বিভেদ ও প্রান্তিকীকরণকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। এই ধরনের আচরণ প্রত্যক্ষ করা হতাশাব্যঞ্জক যে, যখন একই সামরিক বাহিনী বিদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার কাজের জন্য সম্মানিত হচ্ছে।

জেএসএস প্রতিনিধি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ ও এক্সপার্ট মেকানিজমকে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অস্থায়ী সামরিক ক্যাম্পসমূহের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহার এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য একটি পুঙ্খানুপঙ্খ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার দাবি জানাই। তা করার মাধ্যমেই আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদাকে সম্মান করা হচ্ছে এবং বজায় রাখা হচ্ছে।

পরিশেষে, তিনি সকলের সংহতি কামনা করেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায়বিচার ও শান্তির জন্য আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।