দিঘীনালার মেরুং-এ জুম্মদের জমি দখল করে আশ্রায়ন প্রকল্প!

0
1102

হিল ভয়েস, ১২ ডিসেম্বর ২০২১, খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দিঘীনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে জুম্মদের জমি দখল করে সরকারি অর্থায়নে আশ্রায়ন প্রকল্পের কাজ চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত প্রকল্পটি ১ নং মেরুং ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বাচামরং গ্রামে গত ৬ জানুয়ারি ২০২১ থেকে চলমান রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো আরো বলেছে, গত ৩ জানুয়ারি ২০২১ কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়া দিঘীনালা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ উল্লাহ, স্থানীয় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, এসি ল্যান্ড (ম্যাজিস্ট্রেট), ইউপি চেয়ারম্যান মো: রহমান কবির রতন, সাবেক ইউপি সদস্য মো: আব্দুর রহমান সহ একদল লোক গিয়ে উক্ত জায়গায় পরিমাপ করে চলে আসে।

এরপর ৬ জানুয়ারি ২০২১ পরিমাপকৃত জায়গায় বুলডোজার নিয়ে যাওয়া হয়। উক্ত বুলডোজার দিয়ে বর্তমানে মাটি কাটার কাজ চলছে। উক্ত আশ্রায়ন প্রকল্পে সরকারি অর্থায়নে প্রাথমিকভাবে ৫০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে বলে স্থানীয়রা জানতে পেরেছেন। উক্ত ৫০ পরিবারের মাধ্যে ৩৫ টি বাঙালি পরিবার এবং ১৫ টি জুম্ম পরিবার রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানতে পেরেছেন।

এছাড়াও উক্ত আশ্রায়ন প্রকল্পের পাশেই রয়েছে জুম্ম গ্রাম। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, গত ৩ বছর আগে দিঘীনালা উপজেলায় ২০০ টি বাঙালি পরিবারকে পুনর্বাসনের যে চেষ্টা ছিল সেটা প্রতিবাদ করে কোনোমতে আটকানো গেলেও বর্তমানে নতুনভাবে এই কার্যক্রমটি শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই ৫০ পরিবারের পুনর্বাসন প্রকল্পে ৩৫ পরিবার বাঙালি পরিবারকে পুনর্বাসিত করার এই উদ্যোগটি বাকীদেরকেও পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসিত করার একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন স্থানীয় মুরুব্বীরা।

অন্যদিকে, প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জায়গায় দুইজন জুম্ম গ্রামবাসীর নামে জায়গা বন্দোবস্তী রয়েছে। উক্ত দুইজন ব্যক্তি হলেন, প্রমোদ চন্দ্র চাকমা এবং দুর্গ মোহন চাকমা। তাঁরা দু’জনই মৃত হলেও ওয়ারিশসূত্রে তাঁদের বর্তমান সন্তানরা এসব জায়গার মালিক।

উল্লেখ্য, উক্ত প্রকল্পের জায়গাগুলোতে ১৯৮৬ সালের আগে জুম্ম গ্রাম ছিল। তৎসময়ের চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সেটলার বাঙালি এবং সেনাবাহিনীর উৎপাত ও আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য স্থানীয়রা ভারতে ও বিভিন্ন জায়গায় শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত তাদেরকে আর নিজ জায়গায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

এই আশ্রায়ন প্রকল্পটি জুম্মদের জায়গা ও ভূমি বেদখলের আরেক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করছেন স্থানীয় জুম্মরা।