ঢাকায় কল্পনা চাকমা অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ন্যায়বিচারের দাবিতে সংহতি সমাবেশ

0
330

হিল ভয়েস, ১২ জুন ২০২৩, ঢাকা: ঢাকায় আদিবাসী নারী, ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহের যৌথ উদ্যোগে কল্পনা চাকমা অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ন্যায়বিচারের দাবিতে এক সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কল্পনা চাকমা অপহরণের দীর্ঘ ২৭ বছর পার হলেও ঘটনার ন্যায্য বিচার না পাওয়ায় সংহতি সমাবেশের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আজ ১২ জুন ২০২৩ বিকাল ৩ টায় ঢাকায় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এই সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য তুলি লাবণ্য স্ট্রং এর সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য অ্যাডভোকেট লুনা নূর, বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল কবির। এছাড়া সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন আদিবাসী যুব ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপক শীল, কল্পনা চাকমার সহযোদ্ধা ইলিরা দেওয়ান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রীসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা তাঁর বক্তব্যে বলেন, কল্পনা চাকমাকে অপহরণের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে তাদের একটা বিশেষ পরিচিতি আছে। তারা হলো লেফটেনেন্ট। তাদের লিঙ্গীয় পরিচয় পুরুষ, আর কল্পনারা হলো নারী। শুধু নারী নয়, পাহাড়ি নারী, জুম পাহাড়ের নারী। রাষ্ট্রের মোতায়েন করা বাহিনীর বিরুদ্ধে যে লড়াই সংগ্রাম এবং এক নারীর যে সংগ্রাম সেটিকে রাষ্ট্র পছন্দ করেনি বিধায় রাষ্ট্র তার সর্ব শক্তি দিয়ে বাধা দিয়েছে। অপহরণের প্রতিবাদের পর বিশেষ বাহিনী হেলিকপ্টারের নাটক সাজিয়েছিলো দুই বার। ২৪ পদাতিক ডিভিশন হেলিকপ্টার দিয়ে লিফলেট দিয়ে ঘোষণা করা হচ্ছিলো কল্পনা চাকমার সন্ধান পেলে ৫০,০০০ টাকা প্রদান করা হবে। আরেকটা হেলিকপ্টার গিয়েছিলো যার নাম মানবধিকার হেলিকপ্টার। শান্তিবাহিনীর সাথে সেনাবাহিনীর যুদ্ধরত এলাকায় মানবাধিকার হেলিকাপ্টার উড়ানোর বিষয়টি না বোঝার মতো বোকা আমরা ছিলাম না। এবং সরকার যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করেছিলো সেটির বিচারককে অফিস বুথ দিয়েছে ঢাকায় সেগুনবাগিচায়। আমরা বারবার বললাম বাঘাইছড়ি যান, যেখান থেকে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছে সেখানে গিয়ে তদন্ত করেন। কিন্তু তদন্ত কমিটি সেখানে যান নাই। আজ ২৭ বছর হয়ে গেলো কিন্তু রিপোর্টের ফলাফলে এখনো অপহরণকারীরা চিহ্নিত হয় নাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম চৌধুরী সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সামরিক শাসনের যে দুঃশাসন পার্বত্য চট্টগ্রামে তা এখনো বহাল আছে। শান্তিচুক্তির পর অপারেশন উত্তোরণের নামে এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন বহাল রেখেছে। শুধু কল্পনা নয়, যুদ্ধকালীন বা পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৪টির মতো গণহত্যা করেছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী।

সমাবেশে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য অ্যাডভোকেট লুনা নূর বলেন, আজ ২৭ বছর হয়ে গেল কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার চাচ্ছি। কিন্তু কার কাছে বিচার চাচ্ছি আমরা? রাষ্ট্র যখন তার চরিত্রের জায়গা থেকে নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তখন নিপীড়ন করার জন্য রাষ্ট্র যাদেরকে শিকার হিসেবে চিহ্নিত করে তারা হলো রাষ্ট্রের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। অপহরণের পর তদন্ত কমিটির প্রয়োজন ছিলো না। কেন না প্রত্যক্ষদর্শী ছিলো। কল্পনা চাকমার ভাই স্বচক্ষে দেখেছিলো।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবাদের আওতা সীমিত হয়ে আসছে একটা সমাবেশে, পত্রিকায় একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে। কারণ প্রশাসন নিপীড়ন চালাতে চালাতে জনগণের বোধের জায়গায় একটা সহনশীলতা নিয়ে আসছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের গর্জে উঠতে হবে। আমরা শুধু চাই, আপনারা শুধু চুক্তিটাই বাস্তবায়ন করেন। পাহাড়ের মানুষ আজ অধিকারের লড়াই করছে না, তারা তাদের অস্তিত্বের লড়াই আছে।

বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল কবির বলেন, আপনারা হয়তো জানেন যে, কল্পনা চাকমা অপহরণের সময়কালে পাহাড়ের অবিসংবাদিত নেতা সন্তু লারমাকেও সরিয়ে দিতে চেয়েছিলো। জনসংহতি সমিতিকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র করেছিলো। এ প্রত্যেকটি তখনই করা হয় যখন রাষ্ট্র টের পায় যে, সাধারণ মানুষ জেগে উঠছে। রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য তুলি লাবণ্য স্ট্রং তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, তরুণ সমাজকে বলতে চাই, নারী সমাজকে বলতে চাই, কল্পনা চাকমার অপহরণ আমাদের কণ্ঠকে ছিড়ে দিতে পারেনি। আমাদের লক্ষ লক্ষ প্রতিবাদী কণ্ঠকে রুদ্ধ করতে পারেনি আজও। আমরা থামতে শিখিনি, আমরা এই বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিকে মেনে নিতে শিখিনি। তাই আজও আমরা এখানে দাড়িয়ে কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার চাই।