চিম্বুকে আদিবাসী ম্রোদের উচ্ছেদ করে পাঁচতারা হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মণের উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস ফোরামের উদ্বেগ ও প্রতিবাদ

0
788

হিল ভয়েস, ১৯ নভেম্বর ২০২০, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের বুকে আদিবাসী ম্রোদের জায়গা-জমি দখল ও উচ্ছেদ করে সিকদার গ্রুপ এবং সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক যৌথভাবে পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস্ ফোরাম বাংলাদেশ উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি অবিলম্বে উক্ত পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ বন্ধ এবং প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে।

গতকাল ১৮ নভেম্বর ২০২০ ফোরামের আহ্বায়ক গোলাম মনোয়ার কামাল স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ ও প্রতিবাদের কথা জানানো হয়। এছাড়া হিউম্যান রাইটস্ ফোরাম বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে ৩ দফা সুপারিশ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার চিম্বুক-থানচি সড়কে ম্রো অধ্যুষিত কাপ্রু পাড়া, দোলা পাড়া ও শোং নাম হুং এলাকায় সিকদার গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন ‘আর অ্যান্ড আর হোল্ডিং লিমিটেড’-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট ‘ম্যারিয়ট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস’ নামে একটি পাঁচ তারকা স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ৮০০ থেকে এক হাজার একর জমি ব্যবহার করে এই পাঁচ তারা হোটেল ও অ্যামিউজমেন্ট পার্ক করা হবে। এই স্থাপনার প্রয়োজনে ইতোমধ্যে পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে। যার একটি বিশাল এলাকাজুড়ে আছে ম্রো জাতিগোষ্ঠীর মৌজা বন, জুম পাহাড়, পাড়া, বনজ ও ফলজ বাগান, শ্মশান, পাহাড়, বন ও পানির উৎস। এতে একইভাবে মার্কিনপাড়া, লংবাইতংপাড়া, মেনসিংপাড়া, রিয়ামানাইপাড়া ও মেনরিংপাড়া উচ্ছেদের মুখে পড়বে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে সেখানকার ভূমি অধিকার ও ভূমি ব্যবস্থাপনা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ তথা তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ তদারকি করে থাকে। চুক্তিতে পাহাড়িদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই চুক্তিতে বেদখল হওয়া জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত বিষয়কে আমলে না নিয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রায় ১০ হাজার নাগরিককে প্রত্যক্ষভাবে উচ্ছেদ ও সমগ্র জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ধ্বংস করে দিয়ে এই নির্মাণ কখনোই সমর্থযোগ্য নয়। এটা বাংলাদেশের সংবিধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির লঙ্ঘন। এটা শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে অনুস্বাক্ষর করা আইএলও কনভেনশন নম্বর ১০৭ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস্ ফোরাম বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি ও সুপারিশ জানানো হয়-

১। অবিলম্বে পাঁচতারা হোটেলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করা ও এ প্রকল্প সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা।
২। ম্রো জাতিসহ সকল আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা-ভূমি, সম্মান, মর্যাদা, মানবাধিকার, ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রথা, সংস্কৃতি ইত্যাদি রক্ষা করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকরসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করা।