কল্পনা চাকমা শুধু ১২ জুনের পাঠ নয়, প্রতিবাদী এক মশাল

0
322

হিল ভয়েস, ১২ জুন ২০২৩, রাঙামাটি: আজ ১২ জুন। কল্পনা চাকমা অপহরণের দিন। আজ থেকে ২৭ বছর আগে ১৯৯৬ সালে ১২ জুন নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন তৎকালীন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে জিইয়ে রাখতে হবে কল্পনাকে। কারণ কল্পনার লড়াই সংগ্রাম ও অপহরণের ঘটনা যদি হারিয়ে যায়, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়নের ইতিহাসও হারিয়ে ফেলবো। তাই কল্পনা থাকুক আমাদের স্লোগানে, জীবনযাপনে, লড়াই-সংগ্রামে।

দেশে-বিদেশে আলোচিত এই অপহরণ ঘটনার বিষয়ে হিল ভয়েসে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বাচ্চু চাকমা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হিল ভয়েসের প্রতিনিধি শ্রী প্রমান।

হিল ভয়েস: কারা অপহরণ করেছিল কল্পনা চাকমাকে?

বাচ্চু চাকমা: কল্পনা চাকমার বাড়ির পার্শ্ববর্তী কজইছড়ি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার লেঃ ফেরদৌস-এর নেতৃত্বে ভিডিপি সদস্য মো: নূরুল হক ও মো: সালেহ আহম্মদসহ একদল সশস্ত্র সেনাবাহিনীরাই কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাত আনুমানিক ১:৩০ টা হতে ২:০০ ঘটিকার মধ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউলাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আপোষহীন সংগ্রামী নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা একদল সশস্ত্র সেনাবাহিনীর দুর্বৃত্ত কর্তৃক নির্মমভাবে অপহরণের শিকার হয়েছেন। অপহরণকারীরা এসময় একই সাথে কল্পনার দুই বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা (কালীচরণ) ও লাল বিহারী চাকমা (ক্ষুদিরাম)-কেও বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।

হিল ভয়েস: ১৯ মার্চ কল্পনা অপহরণের আগে লে. ফেরদৌসের নেতৃত্বে নিউ ল্যাইল্যাঘোনায় ৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এই ঘটনায় ফেরদৌসের মুখোমুখি হয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেছিল কল্পনা। এই ক্ষোভ থেকেই কি ফেরদৌস কল্পনাকে অপহরণ করেছিল?

বাচ্চু চাকমা: হ্যাঁ, ১৯ মার্চ নিউ ল্যাইল্যাঘোনা গ্রামে ৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর লে. ফেরদৌস-এর মুখোমুখি হয়ে কল্পনা চাকমা তীব্র প্রতিবাদ করেন। তাকে অপহরণের পেছনে এটাও একটা অন্যতম কারণ হতে পারে। কিন্তু কল্পনা অপহরণের আরও অনেকগুলো কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনার একটা অন্যতম কারণ জড়িত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জাতির জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্বকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করা এবং পৃথিবীর মানচিত্র থেকে জুম্ম জাতিকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের উদ্দেশ্যে মূলত আপোষহীন সংগ্রামী নারী নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছে। কল্পনা চাকমাকে অপহরণের পেছনে শাসকগোষ্ঠীর উগ্র সাম্প্রদায়িক ও উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের জ্যাত্যভিমানের দাম্ভিকতার দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে বলে আমি মনে করি।

হিল ভয়েস: প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, অপহরণকারীকে তাঁরা চিহ্নিত করতে পেরেছে। তারপরও অপহরণকারী আড়ালে থেকে গেলেন কীভাবে?

বাচ্চু চাকমা: ঘটনার পর কল্পনার বড় ভাইয়েরা স্পষ্টতই টর্চের আলোতে কল্পনার অপহরণকারীদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। অথচ ২৭ বছরেও কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলাটির বিষয়ে কোনো অগ্রগতির কথা জানা যায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা বিভাগ ও বিচার বিভাগ কল্পনা চাকমার হদিশ দিতে পারেনি এবং কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার বিচার করতে ব্যর্থই কেবল নয়, তারা চরম দায়িত্বহীনতা, পক্ষপাতিত্বমূলক, সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী ভূমিকার পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে রাষ্ট্র ও সরকার এবিষয়ে সম্পূর্ণভাবে নির্লিপ্ত ও নির্বিকার ভূমিকা পালন করে আসছে। অপহরণ ঘটনার দোষী ব্যক্তিদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করার পরেও অপহরণকারীরা এযাবৎ ধরে পর্দার আড়ালে থেকে গেছেন।

হিল ভয়েস: মামলাটি আবার সামনে নিয়ে আসা কি সম্ভব?

বাচ্চু চাকমা: হ্যাঁ, মামলাটি আবারও সামনে নিয়ে আসা সম্ভব বলে আমি মনে করি। এক্ষেত্রে আমার যে অভিমত তা হল, জনগণ পারে না এমন কোন কাজ নেই। জনগণ যদি মামলা বিষয়ে তীব্রভাবে চাপ সৃষ্টি করে তাহলে কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার অবশ্যই হবে। আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, “Of the people, By the people, For the people”-এর অর্থ হল গণতন্ত্র হল এক ধরনের সরকার যেখানে শাসকগণ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়। দেশের নাগরিকরা দেশ শাসনের জন্য সরকারকে নির্বাচিত করে এবং নির্বাচিত সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করে। তার মানে জনগণের আন্দোলন সংগ্রাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান থাকলে মামলাটি অবশ্যই সামনে নিয়ে আসা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

হিল ভয়েস: দেশে-বিদেশে তুমুল প্রতিবাদের পরও এই মামলার বিচার হলো না কেন?

বাচ্চু চাকমা: আমরা দেখেছি যে, কল্পনা অপহরণ ঘটনার প্রতিবাদে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পিসিপির উদ্যোগে ডাকা ২৭ জুন ১৯৯৬ অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ চলাকালে আবার বাঘাইছড়ি সেনা কর্তৃপক্ষের মদদে স্থানীয় ভিডিপি ও সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক হামলায় বাবুপাড়া ও মুসলিম ব্লক এলাকায় গুলি করে রূপন চাকমাকে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুকেশ চাকমা, মনোতোষ চাকমা ও সমর বিজয় চাকমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই রূপন, সুকেশ, মনোতোষ ও সমর বিজয়কে হত্যাকারীদের আজও কোন বিচার হয়নি। কল্পনা অপহরণ ঘটনাটি দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে, এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র প্রতিবাদের মুখোমুখি হয় এবং নিন্দিত হয়। দেশের ও বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী ও জাতীয়ভাবে প্রগতিশীল শিক্ষক, সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে কল্পনা চাকমাকে দ্রুত উদ্ধার ও ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।

সেই সময় প্রথমে তৎকালীন সেনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অত্যন্ত নির্লজ্জের মতোই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ঘটনাটিকে ‘গুজব’, ‘প্রেমঘটিত ব্যাপার’ বলে, ‘ত্রিপুরায় দেখা গেছে’ বলে ইত্যাদি অপপ্রচারের চেষ্টা চালানো হয়েছে। অপহরণ ঘটনার পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখে সরকার কিছুদিনের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও বিগত ২৭ বছরেও সরকার সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে পারেনি।

কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনাটি একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু। ২৭ বছরেও এই রাষ্ট্র, সরকার, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ, সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কেউই কল্পনা চাকমার হদিশ দিতে পারেনি, অভিযুক্ত অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারেনি, তথা এই রাষ্ট্র কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সুবিচার নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ, এই সরকার জনগণের সরকার নয়, এই রাষ্ট্র জনগণের রাষ্ট্র নয়- এই সরকার নিপীড়ক ও লুঠেরাদের সরকার, এই সরকার সাম্প্রদায়িক সরকার, এই রাষ্ট্র অপহরণকারীদের প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র। তাই, দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের পরেও কল্পনা চাকমার বিচার হয়নি।

হিল ভয়েস: কল্পনা চাকমা কোথায়? ২৭ বছরেও কোনো হদিস বের করতে পারলোনা কেন রাষ্ট্র? এই লজ্জা রাষ্ট্র কোথায় ঢাকবে?

বাচ্চু চাকমা: কল্পনা চাকমা কোথায় সরকার এখনও তার হদিস পায়নি। গত ২৭টি বছরেও রাষ্ট্র কল্পনা চাকমার অপহরণের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। কেননা এই রাষ্ট্র কোন মানবিক নয়, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক নয়। এই রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দরা পুরোপুরি গণবিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত থাকে। কাজেই এই সরকার উগ্রজাতীয়তাবাদী, চরম সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ক্রিয়াশীল থাকায় কল্পনার অপহরণের যথাযথ বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি এবং রাষ্ট্র কল্পনার হদিস এখনও দিতে পারেনি। যতদিন কল্পনা চাকমার মতো অসংখ্য অপহরণকারীর যথাযথ বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে না, ততদিন এই রাষ্ট্র লজ্জা মুছতে পারবে না।

হিল ভয়েস: কল্পনা অপহরণের ঘটনা কি কোনো জাতিগত নিপীড়নের কৌশল?

বাচ্চু চাকমা: কল্পনা অপহরণের ঘটনাটি অবশ্যই একটা জাতিগত নিপীড়নের কৌশল। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক জুম্মদের উপর জাতিগত নিপীড়ন ও সহিংসতারই এক জঘন্যতম সাম্প্রদায়িক অসংখ্য ঘটনা সংগঠিত করে আসছে। স্বাধীনতার পর থেকে সরকারের উগ্র জাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী নীতির কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সেটেলার বাঙালীদের কর্তৃক এ পর্যন্ত শত শত জুম্ম নারী খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, অপহরণের পর জোরপূর্বক বিবাহ, হয়রানিমূলক মামলা ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের কঠিন পরিস্থিতি ও বাস্তবতায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কল্পনা চাকমার অপহরণের ঘটনাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত নিপীড়নেরও একটা সুগভীর ষড়যন্ত্র।

হিল ভয়েস: কল্পনা চাকমা শুধুই কি ১২ জুনের পাঠ? নতুন প্রজন্মের উদ্দিশ্যে আপনার মতামত?

বাচ্চু চাকমা: নিঃসন্দেহে কল্পনা চাকমা শুধুমাত্র ১২ জুনের পাঠ নয়, কল্পনা চাকমা আমাদের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অগ্নি-মশাল হয়ে জ্বলে উঠতে শিক্ষা দেয়। কল্পনা একটা চেতনা-যার চেতনার কোন মৃত্যু নেই। কল্পনা চাকমা শুধুমাত্র ১২ জুনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তিনি সমগ্র জুম্ম জাতির মুক্তির সংগ্রামের অগ্নি মশাল হয়ে সব সময় জেগে থাকেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারী জাগরণের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। উল্লেখ্য যে, কল্পনা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রামী আদিবাসী জুম্ম নারী সমাজের এক অগ্রসেনানী। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিগত সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বৈষম্য, বঞ্চনা, নারী ধর্ষণ, অপহরণ ও হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক কন্ঠস্বর ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল আদর্শে বিশ্বাসী এবং স্বজাতির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিবেদিত একটি প্রাণ। তাই কল্পনার চেতনার মৃত্যু নেই। কেননা তিনি ন্যায়ের পক্ষে, ন্যায্য অধিকারের পক্ষে ও প্রগতির পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়েই এই অপহরণের শিকার হয়েছেন।

কল্পনা অপহরণ ঘটনার প্রতিবাদে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে ডাকা ২৭ জুন ১৯৯৬ অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ চলাকালে আবার বাঘাইছড়ি সেনা কর্তৃপক্ষের মদদে স্থানীয় ভিডিপি ও সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক হামলায় বাবুপাড়া ও মুসলিম ব্লক এলাকায় গুলি করে চারজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কল্পনা অপহরন এবং তার পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী তথা শাসকশ্রেণী জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজ, নারী সমাজ তথা আপামর জুম্ম জনগণের প্রতিবাদী কণ্ঠ ও সংগ্রামী চেতনাকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী তথা শাসকগোষ্ঠীর সেই উদ্দেশ্য সফল হতে পারেনি। কল্পনাকে অপহরন করলেও এবং তার পরবর্তীতে ৪ জন ছাত্রকে হত্যা করলেও ছাত্র-যুব-নারী সমাজ তথা আপামর জুম্ম জনগণ দমে যায়নি, আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে তারা সরে যায়নি। বরং অধিকতর দুর্বার গতিতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যা এখনো অব্যাহত আছে। কল্পনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আত্মবলিদানেও জুম্ম ছাত্র-যুব-নারী সমাজ বদ্ধপরিকর। বিগত ২৭ বছরেও কল্পনার ন্যায় বিচার পায়নি জুম্ম জনগণ। তাই ছাত্র-যুব-নারী সমাজকে অধিকতর সংগ্রামী চেতনা নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

আমি বিশ্বাস করি, ছাত্র-যুব-নারী সমাজের কেউই কখনোই কল্পনার বিচারহীনতাকে মুখ বুজে সহে যেতে চায় না। কল্পনা অপহরণের ঘটনায় সঠিক বিচারে তারা থেমে থাকতে চায় না। তাই ছাত্র-যুব-নারী সমাজকে আন্দোলন জারী রাখতে হবে, জনগণকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার করে তুলতে হবে। চিহ্নিত অপহরণকারী লে: ফেরদৌসের দোসরদের কালো হাত গুড়িয়ে দিতে হবে। দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তথা জুম্ম জনগণের ন্যায়সঙ্গত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে কল্পনার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। জুম্ম জনগণের ন্যায়সঙ্গ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে। এই অপহরণের ঘটনার প্রতিবাদে সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সংগঠিতভাবে শক্তি ও সাহস নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।