করোনাকালে আদিবাসীদের মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি বিপন্নঃ কাপেং ফাউন্ডেশন

0
653

হিল ভয়েস, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি : আগস্ট মাস জুড়ে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের উপর সংঘটিত নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে আজ  কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারী মধ্যে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল এবং ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে আদিবাসীদের উপর সংঘবদ্ধ হামলা অভ্যাহতভাবে চলছে। আগস্ট মাসে ভূমিদস্যুরা মৌলভীবাজার ও সিলেটে দুটি পান জুমে পান গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির কমপক্ষে ১০০০টি গাছ কেটে দিয়েছে। রাজশাহীর জেলার ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্শপল্লিতে আবাসন প্রকল্পের ফলে ১৩০টি আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদে্র মুখে পড়েছে। কক্সবাজারে আদালতের আদেশ অমান্য করে আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে এবং চকরিয়ায় ভূমি অফিসের স্টাফ পরিচয় দিয়ে ছরওয়ার কামালের নেতৃত্বে মামুনুর রশিদ ও মোঃ রিয়াজ একদল সশস্ত্র দল কর্তৃক এক রাখাইন পরিবারের প্রায় ৩৬ কড়া জমি জবর-দখল করা হয়েছে। অপরদিকে সুনামগঞ্জের সীমান্তে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কবলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে আদিবাসীদের কৃষিজমি।

প্রতিবেদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার বিষয়ে বলা হয়, আগস্ট মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের বরকলে একজন আদিবাসী জায়গা দখলে করে সেটেলার কর্তৃক বাড়ি নির্মাণ, লংগদুতে প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে একজন সেটেলার কর্তৃক জুম্ম ভূমি মালিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের এবং নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩টি ম্রো গ্রামবাসীকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য রাবার কোম্পানী কর্তৃক হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ৮ জন গ্রেফতার ও ২১ জনকে সাময়িক আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়া ৯ জন ব্যক্তিকে মারধর, হয়রানি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং ২টি দোকানসহ ১৭টি বাড়ি তল্লাসি ও তছনছ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ইউএনডিপির করোনাকালে সহায়তা হিসেবে প্রদেয় চাল বিতরণে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে পানছড়ির চেঙ্গী ইউনিয়নে ও লোগাং ইউনিয়নে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত দুটি বাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ভাঙচুর ও উচ্ছেদ করেছে। ২৩ আগস্ট বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়িতে বিমুং মারমা নামে এক মারমাকে আরসা কর্তৃক হত্যা। এছাড়াও প্রতিবেদনে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে আয়োজিত মানববন্ধনে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বাধা দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, আগস্ট  মাসে করোনার সময়ে আদিবাসী সহ আদিবাসী নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা উদ্দেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মাসে আদিবাসী নারীর উপর যৌন সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা, মারধর ও হামলার শিকার হয়েছেন ২ জন পুরুষসহ ১৫ জন আদিবাসী নারী। তার মধ্যে ১ জন গণধর্ষণসহ ৩ জন নারীকে ধর্ষণ, ২ জন নারী ধর্ষণের চেষ্টা ও ইভটিজিংয়ের শিকার, ১ জনকে বিয়ের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা  ও ১ জন নিখোজ এবং ২ জন পুরুষসহ ৮ জন নারী মারধরের শিকার হন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার একজন আদিবাসী কলেজ্ ছাত্রী থেকে ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের মধুপুর ও শেরপুরের ঝিনাইগাজীতে একজন নারীসহ ৩ জন হামলার শিকার হয়েছে।

মাসিক প্রতিবেদনে  ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলাপমেন্ট সার্ভিসেসের  (আই পি ডি এস)  বরাত দিয়ে বলা হয়েছে,  কোভিড -১৯ এর কারণে সমতলে ৬২% আদিবাসীকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।  ৯২% সমতলের আদিবাসী আয় রোজগার কমেছে । করোনা মহামারির কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন চাকুরি ও কাজ হারিয়ে নতুন করে কমপক্ষে ৫ লক্ষ আদিবাসী “নতুন দরিদ্র” মানুষ হিসেবে পরিণত হয়েছে।