২০১৯ সালে ৩১ হাজার হিন্দু নির্যাতিতঃ হিন্দু মহাজোট

0
730

হিল ভয়েস, ৬ জানুয়ারি ২০২০, ঢাকা:  আগের বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে দেশে হিন্দু নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েছে। এ সময় ১০৮ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়। জোরপূর্বক ৯ হাজার ৫০৭ একর জমি দখল করা হয়েছে। প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে ২৪৬ টি। ৪২ জন হিন্দু নারীকে ধর্ষণ এবং ১৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ৩৭৯টি পরিবারকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বাসা-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৪৩৪টি পরিবারকে।

গত  ২ জানুয়ারি ২০২০ সকাল ১০ ঘটিকায় সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে গত বছর হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকা, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে প্রকাশিত এবং হিন্দু মহাজোটের জেলা, থানার নেতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে। নির্যাতনে শিকার হয়েছেন ৩১ হাজার ৫০৫ জন এবং ৯ হাজার ৫০৭ একর জমি জবরদখল করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন হয়েছে। সেই নির্যাতনের বিষয়ে তৎকালীন সময়ে বিচার হয়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেই ন্যক্কারজনক ঘটনা বিশ্বব্যাপী প্রচার করে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা লাভ করেছে। হিন্দুরা আশা করেছিল, বর্তমান সরকার হিন্দু নির্যাতনের বিচার করবে। কিন্তু গত ১১ বছর দেশ পরিচালনা করলেও ২০০১ সালের ঘটনাসহ কোনো অপরাধের বিচার করেনি, ন্যক্কারজনক এসব ঘটনায় একজনেরও শাস্তি হয়নি। তাই হিন্দু সম্প্রদায় হতাশ।

এই বিচারহীনতার কারণেই অপরাধীরা বার বার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে।প্রতিদিনই নিরবে আতঙ্কিত হিন্দু সম্প্রদায় দেশ ত্যাগ করছে। পরিসংখ্যান বলে দেয় এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে এদেশ হিন্দু শূন্য হবে। অথচ সরকার এসব নিরসনে কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখে নাই। সরকার মঠ মন্দির প্রতিমা ভাংচুর ও বাড়ীঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগকারীদেরকে চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে অপরাধীরা অপরাধ করতে আরও উৎসাহিত হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন,সরকার দিন দিন মৌলবাদের প্রতি ঝুঁকছে। প্রশাসনেও হিন্দু বিদ্বেষ চরম আকারে। প্রতিনিয়ত হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করলেও আজ পর্যন্ত হিন্দু ধর্ম কটুক্তির অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করা হয় নাই। উপরন্তু ফেসবুক হ্যাক করে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে শতাধিক হিন্দু যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শত শত ঘরবাড়ী পুড়িয়ে, মঠ মন্দির ধ্বংস করে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে।

পাঠ্যপুস্তক অসাম্প্রদায়িক করার পাশাপাশি ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের জন্য জোড় দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

দুই দফা দাবি : হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে দুই দফা দাবি তুলে ধরেছে সংগঠনটি। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং হিন্দু সম্প্রদায় থেকে একজনকে পূর্ণমন্ত্রী করা।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনহিন্দু মহাজোটের সিনিয়র সহ সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল, প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, যুগ্ম মহাসচিব মনিশঙ্কর মন্ডল, আইন সম্পাদক সুব্রত হালদার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অমিও বাউল, মহিলা মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক সাগরিকা মন্ডল, উত্তরবঙ্গ সমন্বয়ক দুলাল কর্মকার, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ঘোষ, হিন্দু যুব মহাজোট এর সভাপতি কিশোর কুমার বর্মন, ছাত্র মহাজেটের সভাপতি সাজেন কৃষ্ণ বল, দপ্তর সম্পাদক তপু কুন্ডু, ডাঃ মনোরঞ্জন হালদার প্রমূখ।