হরিজন ঐক্য পরিষদের সমাবেশ, উচ্ছেদকৃত হরিজনদের পুনর্বাসন করা না হলে কঠোর আন্দোলন

0
189

হিল ভয়েস, ২২ জুলাই ২০২৩, বিশেষ প্রতিনিধি: গোপীবাগ (টি‌টিপাড়া) হ‌রিজন কলোনীতে আবা‌রও বসতবা‌ড়ি উচ্ছেদের প্রতিবাদে ও যথাযথ পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে গোপীবাগ হরিজন ঐক্য পরিষদ।

গোপীবাগ হ‌রিজন ঐক‌্য প‌রিষদের রাজীব চন্দ্র দাস কর্তৃক ২১ জুলাই প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, আজ শুক্রবার ২১ জুলাই সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গোপীবাগ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি পারদ লালের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হৃদয় চন্দ্র গুপ্ত, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মতিলাল রায়, সূত্রাপুর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল দাস, রামপুরা থানা কমিটির সভাপতি মলয় কান্তি সমাদ্দার, পূজা উদযাপন পরিষদের ওয়ারী থানা সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ দাস, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মধুমিতা বড়ুয়া, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ লাল, মহাসচিব নির্মল চন্দ্র দাস, ঢাকা মহানগর হরিজন ঐক্য পরিষদের সহ সভাপতি রাজেন লাল, গোপীবাগ হরিজন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস, রাজীব চন্দ্র দাস প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দুইশ’ বছর আগে পরিচ্ছন্নতা ও রেলওয়ের কাজের জন্য ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের বাংলাদেশে আনা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হরিজনদের উচ্ছেদ, বসতবাড়ি ভাঙচুর, চাকরিচ্যুত করা, নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়ও হরিজন কলোনী ভাঙচুর ও উচ্ছেদ করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য গোপীবাগ টিটিপাড়া হরিজন কলোনীতে ২০১৯ সাল থেকে দফায় দফায় উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথমে ১১২টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। সে সময় উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর তালিকা প্রণয়ন করা হলেও তাদের এই চার বছরে পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়‌নি।

উপরন্তু পরবর্তী‌তে আরো ২৭‌টি প‌রিবার‌কে উচ্ছেদ করা হয়। গতমা‌সে রেলমন্ত্রীর সা‌থে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক‌্য প‌রিষ‌দের সাধারণ সম্পাদক এ‌্যাড. রাণা দাশগুপ্ত সাক্ষাৎ কর‌লে রেলমন্ত্রী আর কো‌নো বসতঘর ভাঙ্গা হ‌বে না ব‌লে ঘোষণা দেন। একইসা‌থে উচ্ছেদকৃত সকল হ‌রিজন প‌রিবার এবং ক‌লোনীর বর্তমান বা‌সিন্দা‌দের সবাইকে বহুতল ভবন নির্মাণ ক‌রে পুনর্বাস‌নের ঘোষণা দেন। কিন্তু রেলমন্ত্রী তার প্রতিশ্রু‌তি রা‌খেন‌নি। গত শুক্রবার ১৪ জুলাই জোরপূর্বক আরো ১৫‌টি প‌রিবার‌কে উচ্ছেদ ক‌রে তা‌দের বসতঘর ভে‌ঙ্গে ফেলা হয়।

বক্তারা ব‌লেন, উচ্ছেদকৃত প‌রিবারগু‌লো ক‌লোনীর অন‌্যান‌্য প‌রিবা‌রের সা‌থে কো‌নোম‌তে গাদাগাদি ক‌রে মান‌বেতর জীবনযাপন কর‌ছে। আজ‌কে যখন সারা‌দে‌শে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন‌দের গৃহ নির্মাণ ক‌রে দি‌চ্ছেন, তখন হ‌রিজন‌দের সা‌থে রা‌ষ্ট্রের এই বৈরী আচরণ মে‌নে নেওয়া যায় না। এই অমান‌বিকতার অ‌বিল‌ম্বে অবসান কর‌তে হ‌বে।

সমা‌বে‌শে নেতৃবৃন্দ ব‌লেন, হ‌রিজনরা য‌দি প‌রিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধ ক‌রে‌ দেন, তাহ‌লে এই নগরী অচল হ‌য়ে যা‌বে। হ‌রিজনরা চাইলে কমলাপুর রেল‌স্টেশন অচল ক‌রে দি‌তে পা‌রেন। এমন‌কি ট্রেনগু‌লো প‌রিষ্কার প‌রিচ্ছন্ন না কর‌লে পু‌রো দে‌শের রেল যোগা‌যোগ ভে‌ঙ্গে পড়‌বে। আমরা এমন কো‌নো ক‌ঠোর আন্দে‌াল‌নের ঘোষণা এখনই দি‌তে চাই না। কিন্তু পুনর্বাসন করা না হ‌লে এবং আর কো‌নো ঘর ভ‌াঙ্গা হ‌লে ক‌ঠোর আন্দে‌াল‌নের দি‌কে যাওয়া ছাড়া হ‌রিজন‌দের সাম‌নে কো‌নো পথ খোলা থাক‌বে না।

মানববন্ধন ও সমা‌বেশ শে‌ষে এক‌টি বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল বের হ‌য়ে বি‌ভিন্ন সড়ক প্রদ‌ক্ষিণ ক‌রে পুরানা পল্টন মো‌ড়ে এসে শেষ হয়।