শেরপুরে আদিবাসীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

0
241

হিল ভয়েস, ৯ জানুয়ারি ২০২৩,বগুরা: জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে বগুড়ার শেরপুরে আদিবাসীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল রোববার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আম্বইল গ্রামের শতবিঘা জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় আদিবাসী ও চার গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও চলছে। এর মধ্যে বিরোধপূর্ণ চার বিঘা জমি নিজের দাবি করে বসেন সোলায়মান আলী মাস্টার নামের এক গ্রামবাসী।

রোববার ওই জমিতে তিনি বেশ কিছু লোক নিয়ে বোরো ধানের চারা লাগাতে শুরু করলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বাধা দেন। উভয় পক্ষের মধ্যে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

সোলায়মান আলী বলেন, আদিবাসী নাম দিয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল মাদক কারবারি ও ভূমিদস্যুর অত্যাচারে আম্বইলসহ আশপাশের চার গ্রামের নিরীহ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি সরকারি খাস সম্পত্তি বলে নিজেরা জবরদখল শুরু করেছেন। তারও ১৫ বিঘা জমি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছিলেন। অথচ এসব জমি কিনে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। গতকাল চার বিঘা জমিতে বোরো চারা লাগানোর সময় কমল সিং ও সন্তোষ সিং তাঁদের লোকজন নিয়ে তীর-ধনুকসহ দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। তাঁরা বেধড়ক পিটিয়ে ২০-২৫ জনকে গুরুতর আহত করেছেন।

তবে আদিবাসী পরিষদের বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সন্তোষ সিং বলেন, তিন-চার দিন ধরে শতাধিক ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে তাঁদের মালিকানাধীন দখলীয় জমি হাফিজুর রহমান, সোলায়মান আলী ও স্বপন মিয়া জোরপূর্বক দখলে নিতে শুরু করেন। তাঁরা জমিতে পাওয়ারটিলার দিয়ে চাষ করে চারা লাগাচ্ছিলেন। নিষেধ করায় তাঁদের ২০-৩০ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন।

সন্তোষ সিং অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষ স্থানীয় বাজারে আদিবাসীদের দোকানঘরগুলোও ভাঙচুর করেছে। এমনকি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসার পথেও তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন তাঁরা। আইনের আশ্রয় নিতে থানায় যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন এই আদিবাসী নেতা।

সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন- আম্বইল গ্রামের নুরুন্নবী সরকার, আবু সাঈদ, ফজলুল হক, জুয়েল সরকার, নুর হোসেন, আব্দুল বারিক, জসিম উদ্দিন সরকার, হায়দার আলী, মিলন সরকার, ফারুক হোসেন, আসফদৌল্লা খান, টুটুল মিয়া, নাদু সিং, প্রদীপ সিং, জাম্পু মেম্বার, জিরেন সিং, শান্ত সিং, রফিক মেম্বার, সন্তোষ সিং, গজেন সিং, নয়ন সিং, অর্জন সিং, কৃষ্ণ সিং, পরী সিং, সুকুমার সিং, সোহানা সিং ও দিলীপ সিং। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ায় তাঁদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

শেরপুর থানার ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, সেখানে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এখনও কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: সমকাল