লামায় ম্রোপাড়ায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের

0
408

হিল ভয়েস, ৭ জানুয়ারি ২০২৩, বান্দরবান: বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো পাড়ায় হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় অবশেষে ছয় দিন পর মামলা হয়েছে।

গতকাল শনিবার (৭ জানুয়ারি) লামা থানায় পাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) রেংয়েন ম্রো বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রকল্প পরিচালক কামাল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ চারজনকে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে এবং কেয়াজুপাড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. নুরু, লাম্বাখোলা ফজর আলীপাড়ার দেলোয়ার হোসেন, কেয়াজু মাঝেরপাড়ার দুর্যোধন ত্রিপুরা ও হাজিরাম ত্রিপুরা, কেয়াজুপাড়ার এলাকার আবদুল মালেক ও মোহাম্মদ মহসিন প্রমুখদেরকে হামলায় নেতৃত্ব প্রদানকারী হিসেবে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০ থেকে ১৭০ জনকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি ২০২৩ গভীর রাতে ১৫০ থেকে ১৭০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে ছয়টি ছোট ট্রাকে করে রেংয়েন ম্রোপাড়ায় গিয়ে হামলা চালান। হামলাকারীরা ট্রাকে করে তাদের সঙ্গে ধারালো অস্ত্র ও কেরোসিন ট্যাংক নিয়ে আসেন।

এজাহারে আরো বলা হয়েছে যে, হামলা থেকে বাঁচতে পাড়াবাসীরা বনে-জঙ্গলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। হামলাকারীরা চামরুম ম্রো, রেংওয়ই ম্রো ও সিংচ্যং ম্রোর বাড়ির চলার ঢেউটিন খুলে নিয়ে বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে তিনটি বাড়িতে থাকা মূল্যবান কাগজপত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ), ১৮ হাজার ২০০ টাকা ও বিভিন্ন গৃহসামগ্রী পাওয়া যায়নি।

আরও পাঁচটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই পাঁচটি বাড়ির সৌরবিদ্যুতের প্যানেল, আসবাবপত্র, কাপড়, কৃষিজ সরঞ্জামসহ প্রায় আট লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, অগ্নিসংযোগ ও হামলার আগের দিন (৩১ ডিসেম্বর ২০২২) সন্ধ্যায় লামা থানার এস আই শামীম এসে রেংয়েন ম্রো পাড়াবাসীদের শাসিয়ে যান এবং এই এলাকায় কোন বাড়ি ঘর করা যাবে না ও সব ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়ে যান।

পুলিশের এই হুমকি ও নির্দেশের পরই রাতে লামা রাবার কোম্পানীর লোকজন হামলা চালায়। তাই আদিবাসীরা এতো অসহায়ত্বের মধ্যে থেকেও পুলিশের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিল। এখন দেখার বিষয়. মামলা দায়ের করার পর পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে কিনা।

বস্তুত ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে প্রায় একবছর ধরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে লামা রাবার কোম্পানী কর্তৃক লামার এই আদিবাসী ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীদের উপর একের পর এক নানা ধরনের হামলা ও সাজানো মামলা দায়েরসহ ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের তদন্ত কমিটি কর্তৃক হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীদের ভূমির অধিকারসহ জীবনের নিরাপত্তা বিধান এবং লামা রাবার কোম্পানির লিজ বাতিলের সুপারিশ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এভাবে লামার সরইয়ে ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীর উপর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে লামা রাবার কোম্পানী।