‘আমাদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করতে দেব না’- ঢাকায় সংখ্যালঘুদের সমাবেশে রানা দাশগুপ্ত

0
393

হিল ভয়েস, ৮ জানুয়ারি ২০২৩, ঢাকা: গতকাল ৭ জানুয়ারি ২০২৩ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রতি পূরণসহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে শাসকগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘আপনারা আমাদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করবেন, এই ব্যবহার আমরা আর আপনাদের করতে দেব না। আমারা বলতে চাই, আপনারা আমাদের কী দেবেন, আমাদের থেকে কী নেবেন, এই সমঝোতা আজকে প্রয়োজন গণতন্ত্রের স্বার্থে।’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ৩২টি সংগঠনের ঐক্য মোর্চা সারা দেশব্যাপী রোডমার্চ শেষে ঢাকায় এই সমাবেশের আয়োজন করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ঐক্য মোর্চার পক্ষ থেকে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এছাড়া সমাবেশে বক্তব্য দেন ঐক্য মোর্চাভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ঘোষণাপত্রে ঐক্য মোর্চার পক্ষ থেকে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন তৈরি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন এবং সমতলের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমাবেশ থেকে এই দাবিগুলো তোলা হয়েছিল। পরে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দাবিগুলো পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়। যদিও তার পূরণ হয়নি।

অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত তাঁর ঘোষণাপত্রে আরও বলেন, ‘৭২-এর অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সংবিধান সাম্প্রদায়িক সংবিধানে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে সংবিধানে সন্নিবেশিত রাষ্ট্রধর্ম ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তায় ধর্মের ভিত্তিতে শুধু বিভাজনই তৈরি করেনি, এদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালধুদের রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে একটানা বঞ্চনা, বৈষম্য, নিগ্রহ, নিপীড়নের শিকার হয়ে এরই মধ্যে সংখ্যালধুদের অনেকে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। অস্বীকারের উপায় নেই যে রাষ্ট্র ও রাজনীতি এবং সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েছে।’

সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারের সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে আজও কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হওয়াকে খুবই হতাশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘আপনিই আমাদের শেষ ভরসাস্থল। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আপনারা যদি আমাদের দিকে ফিরে তাকাতে কুন্ঠাবোধ করেন, আমরা আপনাদের দিকে কতটুকু ফিরে তাকাব, সে ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করতে হবে।’

সমাবেশ শেষে ঐক্য মোর্চার ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে গিয়ে স্মারকলিপিটি প্রদান করেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তিন সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, অধ্যাপক জিনোবোধি ভিক্ষু ও মিলন কান্তি দত্ত এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ ও জয়ন্ত কুমার দেব।

ঐক্য মোর্চা তাদের দাবি আদায়ের জন্য সমাবেশ থেকে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সারা দেশের বিভাগীয় সদর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

উল্লেখ্য, বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি সংখ্যালঘু-আদিবাসী স্বার্থ-বান্ধব অঙ্গিকারসমূহ বাস্তবায়নের ধারাবাহিক আন্দোলনের চতুর্থ পর্যায়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু-আদিবাসী ঐক্যমোর্চা সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোড মার্চ কর্মসূচি শুরু করে।

গত ৬ জানুয়ারি ২০২৩ সারা বাংলাদেশের বিভাগীয় জেলা ও মহানগর এবং উপজেলাসমূহে একযোগে রোড মার্চ শুরু হয়। এদিন বেলা ২:০০ টায় চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন চত্বরে এ রোড মার্চের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।