রাবিতে পিসিপি ও রাবি জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের উদ্যোগে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা

0
227

হিল ভয়েস, ১৮ নভেম্বর ২০২৩, রাজশাহী : গতকাল শুক্রবার ( ১৭ নভেম্বর) “উজ্জীবিত হোক সকল তরুণ প্রাণ, চেতনাতে মিশে যাক জুম পাহাড়ের ঘ্রাণ” স্লোগানকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের উদ্যোগে নবীন বরণ, বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- ২০২৩ সম্পন্ন হয়েছে।

অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ণরত ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ এবং ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়ণরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-২০২৩ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়৷

অনুষ্ঠানের মূল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমিত চাকমা, রমেন প্লাস কোচিং সেন্টারের পরিচালক রমেন্টু চাকমা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী ত্রিপিকা চাকমা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি জীনিচ চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুরেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অতিশ চাকমা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে নবীনদের উদ্দেশ্যে বরণমাল্য পাঠ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুইরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মার্টিনা দেবী তঞ্চঙ্গ্যা এবং বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী সুস্মিতা চাকমা। এসময় আলোচনা সভায় নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জেমি সাইলুক এবং বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল চাকমা এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অনাবিল চাকমা।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ একটি বহুজাতির বহুসংস্কৃতির দেশ। এদেশে বাঙালি জনগোষ্ঠী ছাড়াও ভিন্ন ভাষাভাষীর বহু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে৷ এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী থেকে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক আদিবাসী শিক্ষার্থী আমাদের এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে৷ আমি প্রত্যাশা করি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত এ সকল আদিবাসী শিক্ষার্থী তাদের মেধা-মনন এবং সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে তাদের নিজ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করবে।

তিনি আরো বলেন,আদিবাসী যে সকল শিক্ষার্থী রয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রধানত আবাসন সংকটের সম্মুখীন হয়ে থাকে৷ আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যতটা সম্ভব আদিবাসী শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের পাশাপাশি অন্যান্য যেসকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান করার।

এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কোটার সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা সহ যেকোনো সমস্যার সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশা ব্যক্ত করেন৷

বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রমিত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক আদিবাসী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে৷ তার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান৷ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত সকল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নিজ শেকড়ের টানে, নিজ জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কাজ করার আহ্বান জানান৷ এছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত বিদ্যায় সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবতার নিরিখে যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কথা বলেন।

তিনি তার বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকৃত ৫% আদিবাসী কোটা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রমেন্টু চাকমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন সবারই থাকে৷ কিন্ত সবাই উচ্চশিক্ষার যে স্বাদ তা পায় না৷ আজকে আপনারা যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন এবং যারা চলে যাবেন আপানারা খুবই ভাগ্যবান৷ আমি আশা করবো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আপনাদের অর্জিত জ্ঞান অবশ্যই দেশ ও জাতি গঠনের ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান রাখবে৷

এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা থাকলেও চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়েছে। আদিবাসীরা সংখ্যায় তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে এবং দুর্গম প্রান্তিক অঞ্চলে বসবাস করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে রয়েছে৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রে ও আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা পূণর্বহাল করার দাবি জানান৷

সমাপনী বক্তব্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি জীনিচ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ জন্ম থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার রক্ষার আন্দোলনের পাশাপাশি আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে৷ আজকে এই নবীন বরণ, বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তারই একটি অংশ। আজকে এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনারা যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য এসেছেন আপনাদের সকলকে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মুক্তির সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান৷

পরিশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনার মাধ্যমে নবীন বরণ, বিদায়ী সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-২০২৩ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়৷