রাবিতে পিসিপি’র অনুষ্ঠানে উপাচার্যঃ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে স্ব স্ব সংস্কৃতি ও ভাষা চর্চা করতে হবে

0
604

হিল ভয়েস, ২ এপ্রিল ২০২২, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ, বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২০২২-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার (তাপু) বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথ থেকে রক্ষা করতে হলে নিজেদের স্ব-স্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাষা বেশি বেশি চর্চা করতে হবে।

আজ ২ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাজশাহী মহানগর শাখা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার কর্তৃক যৌথ উদ্যোগে ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ খ্রি: শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ এবং ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৫-২০১৬ খ্রি: শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী স্বপ্নীল চাকমার সঞ্চালনায় এবং পিসিপির রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জীনিচ চাকমার সভাপতিত্বে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার (তাপু)। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, রাজশাহী জেলার পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লসমী চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা প্রমুখ।

নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী কঠিন কুমার ত্রিপুরা।
অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বরণমাল্য পাঠ করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রত্যাশা দেওয়ান এবং বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার বিভাগের শিক্ষার্থী স্বাগতা চাকমা। নবীন শিক্ষার্থীদের ও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট দিয়ে বরণ ও সংবর্ধিত করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমরা সবাই একেকজন মানুষ। আমাদের সবার আলাদা আলাদা পরিচয় রয়েছে। এই পরিচয়ের ভিত্তিতে একে অপরকে আলাদা না ভেবে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। বাংলাদেশকে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, এদেশ থেকে রাজবংশীরা বিলুপ্ত হয়ে হয়ে গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। বর্তমানে তাদের সবাই তাদের ভাষা, সংস্কৃতি হারিয়ে বাঙালি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথ থেকে রক্ষা করতে হলে নিজেদের স্ব-স্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা বেশি বেশি চর্চা করতে হবে। এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি জানান। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত তাদের শিক্ষাকে সমাজ, দেশের উপকারে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতের আশ্বাস দেন এবং প্রতিবছরের ন্যায় আগামী বছর ও ভর্তি পরীক্ষায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কোটার সিট বৃদ্ধির বিষয়ে সবরকম সহযোগিতা করা হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রফেসর ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় একটি অপরটির সাথে সম্পর্কিত। তিনি বিদায়ী শিক্ষার্থীদের তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অর্জিত জ্ঞানকে জাতির স্বার্থে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের লক্ষ্য স্থির করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো সমস্যা এবং পরিস্থিতিতে সর্বাত্মক পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা বলেন, দেশের অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই এদেশে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু, বিগত সময়ে সরকার ১ম ও ২য় শ্রেণির সকল সরকারি চাকরি থেকে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেয়। দিন দুয়েক আগে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হলো। কোটা ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার কারণে এবছর কোনো আদিবাসী পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তাই আমরা বলতে চাই, কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো এদেশে তৈরি হয়নি। আজ যদি সর্বস্তর থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পিছিয়ে পড়া যেসব আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে যেমন খুমি, চাক, বম, লুসাই; তারা কোনোদিন উঠে আসতে পারবে না। তাদের স্বপ্ন কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র একাডেমিক পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। চাকরির পেছনে ছুটলে হবে না। সমাজ ও জাতির প্রতি টান ও দায়বদ্ধতা সবসময় থাকতে হবে। বিংশ শতাব্দীর এই যুগে নিজেদের মেধা ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে সৃষ্টিশীল কাজে আজকের পাহাড়ের তরুণদের এগিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, আগামীর দিনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।

সংবর্ধনা শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বিভিন্ন আদিবাসী জাতিসত্তার নাচ ও গান পরিবেশন করেন।