রাঙ্গামাটি সদর এলাকায় সেনাবাহিনীর বাড়ি তল্লাশি ও হয়রানি

0
833
ছবি: প্রতীকী

হিল ভয়েস, ১১ মার্চ ২০২১, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বালুখালী এলাকায় টহল অভিযান চালিয়ে অন্তত ১১টি জুম্ম বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি এবং জনগণকে হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় এলাকার জুম্মদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ ২০২১ রাত আনুমানিক ১১:৩০ টার দিকে বালুখালী ইউনিয়নের মরিচ্যা বিল সেনা ক্যাম্পের ২০ জনের একটি সেনাদল পার্শ্ববর্তী কাইন্দ্যা পাড়া জুনিয়র হাই স্কুলে যায় এবং সেখানে অবস্থান করে। পরদিন ৯ মার্চ ২০২১ ভোরে সেখান থেকে সেনা সদস্যরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একটি দল সাগরবান্দা গ্রামে এবং আরেকটি দল বাদলহাট গ্রামে যায়। তিন/চার ঘন্টা পর, সেনা সদস্যরা সেখান থেকে ফিরে এগুজ্যাছড়ি এলাকাস্থ ইউনিসেফের একটি পাড়াকেন্দ্র স্কুলে অবস্থান নেয়। এদিন বিকেলে সেনাদলটি আবার কাইন্দ্যা জুনিয়র হাই স্কুলে ফিরে আসে।

এদিকে এদিন (৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৬:০০ টার দিকে রাঙ্গামাটি সদর সেনা জোন হতে ১০ জনের আরেকটি সেনাদল কাইন্দ্যা জুনিয়র হাই স্কুলে অবস্থানকারী সেনাদলের সাথে যোগ দেয়। এরপর রাত ৭:৩০ টার দিকে সেনা সদস্যরা এলাকার হেডম্যান, কার্বারি ও কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সেখানে ডেকে আনে। এসময় সেনা সদস্যরা হেডম্যান, কার্বারি ও গ্রামবাসীদের নিকট সন্ত্রাসীরা কোথায় থাকে, এই এলাকায় থাকে কিনা, সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয় কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে হয়রানি করে।

এরপর সেনা সদস্যরা স্থানীয় ১২৫নং ফুলগাজীমা মৌজার হেডম্যান সন্তোষ চাকমা ও পূর্ণ চরণ কার্বারিকে সাথে নিয়ে দোজরীপাড়া গ্রামে যায় এবং রাত ১০:০০ টার দিকে তাদের দুজনকে স্ব স্ব বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

এরপরই সেনা সদস্যরা দোজরীপাড়া ও পার্শ্ববর্তী কাইন্দ্যাপাড়া গ্রামে একের পর এক জুম্মদের বাড়ি ঘেরাও করে এবং তল্লাশি চালায়। তল্লাশির শিকার বাড়িগুলি হল-
১. সাধন চাকমা বড়চেগা (৪০), পীং-কালাচান চাকমা, গ্রাম-দোজরীপাড়া;
২. কালা চান চাকমা (৭০), পীং-মৃত বিনোদ কুমার চাকমা, গ্রাম-ঐ;
৩. লক্ষণ চন্দ্র চাকমা লগ্ন (৬৫), পীং-মৃত বিনোদ কুমার চাকমা, গ্রাম-ঐ;
৪. ফুল মোহন চাকমা (৪২), পীং-সুবিধন চাকমা, গ্রাম-ঐ;
৫. ত্রিময় চাকমা (৩৫), পীং-মান চাকমা, গ্রাম-ঐ;
৬. সুবিধন চাকমা (৭১), পীং-মৃত ধনঞ্জয় চাকমা, গ্রাম-ঐ;
৭. সাধন চাকমা (৩৮), পীং-সূর্য্য ধন চাকমা, গ্রাম-ঐ;
৮. আচেন্তু চাকমা (৪৩), পীং-ইন্দ্র মোহন চাকমা, গ্রাম-ঐ;
৯. জয়সেন চাকমা (৪১), পীং-বক্ক্যা চাকমা, গ্রাম-ঐ;
১০. শুভ লাল চাকমা (৪৮), পীং-বিনন্দ কুমার চাকমা, গ্রাম-কাইন্দ্যা পাড়া;
১১. শান্তি রাম চাকমা (৪২), পীং-অন্দ লাল চাকমা, গ্রাম-ঐ।

উল্লেখ্য, ৯ মার্চ ২০২১ সকালের দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলার মৈদুং ইউনিয়নে শান্তি রঞ্জন চাকমা (২৫) ও রঞ্জন চাকমা (৩৫) নামের দুই অসুস্থ ও নিরীহ জুম্মকে আটক এবং গাছে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া যায়।

গত ৭ মার্চ ২০২১ রাত আনুমানিক ৮:০০ টার দিকে সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের ৬নং নাড়াইছড়ি ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য ভাগ্যলাল চাকমা (৪৭) আটক ও মারধরের শিকার হন।

এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসেও বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী কর্তৃক ব্যাপক টহল অভিযান পরিচালনা করার এবং বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি ও হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়।