রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন স্থানে পিসিজেএসএস’র সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান: বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান

0
250

হিল ভয়েস, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ (১৫ ফেব্রুয়ারি) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সুবর্ণ জয়ন্তী ও ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এসব আলোচনা সভায় আদিবাসী জুম্মসহ পার্বত্য অধিবাসীদের ন্যায্য অধিকারের সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে জনসংহতি সমিতির চলমান বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা

এইদিন এ উপলক্ষে সকাল ১০:০০ টায় বাঘাইছড়ির বটতলা কমিউনিটি সেন্টারে জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সভাপতি ও সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সুশীল তালুকদারের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি সুমতি রঞ্জন চাকমা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য পুলক জ্যোতি চাকমা, বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সদস্য ধন বিকাশ চাকমা। এছাড়া এতে প্রত্যাগত জেএসএস সদস্যদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন দীলিপ চাকমা, সারোয়াতুলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অমূল্য রতন চাকমা, খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জ্ঞান আলো চাকমা, বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দীলিপ চাকমা ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রাশিকা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সদস্য অনিক চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সদস্য মন্তু চাকমা।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি সুমতি রঞ্জন চাকমা বলেন, দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সংগ্রাম করে জনসংহতি সমিতি ও জুম্ম জনগণ সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে। এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে নেতাকর্মীগণকে সদা প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

লংগদু উপজেলা

সকাল ১১.০০ টায় জনসংহতি সমিতির লংগদু থানা কমিটির উদ্যোগে লংগদু উপজেলার বগাচতর এলাকায় এক কর্মী সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপজেলার জনসংহতি সমিতির প্রত্যাগত সদস্যবৃন্দ এবং থানা, ইউনিয়ন ও গ্রাম শাখার জেএসএস, মহিলা সমিতি ও যুব সমিতির সদস্যগণ ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন স্তরের জনগণ উপস্থিত হন।

জনসংহতি সমিতির লংগদু থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমার সঞ্চালনায় এবং ভূমি ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বিনয় প্রসাদ কার্বারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক যশু চাকমা। এছাড়াও সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির প্রত্যাগত সদস্য অয়ন্তি ময় চাকমা, থানা যুব সমিতির সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা ও মহিলা কার্বারি নতুনা চাকমা।

স্বাগত বক্তব্যে যশু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি মোটেও ভাল নেই। সরকারের একটি বিশেষ মহল চুক্তি বিরোধীদের ব্যবহার করে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। জনসংহতি সমিতির সাথে জড়িত সকল নেতাকর্মীদের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় জড়িয়ে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করেছে। জুম্ম জনগণ বর্তমানে খুবই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।

প্রত্যাগত সদস্য অয়ন্তি ময় চাকমা বলেন, চুক্তির আগে নানা ধরনের প্রতিকূলতার সাথে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, সরকার আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আজকে আমাদের পার্টির বয়স ৫১ বছর পূর্ণ হলো, অপরদিকে সরকারের সাথে পার্টি তথা জুম্ম জনগণের চুক্তির ২৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আজও পর্যন্ত চুক্তির মূল ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা চুক্তির আওতায় অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ জমা দেইনি। ছাত্র-যুব সমাজ তথা কর্মীদেরকে চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

যুব সমিতির সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য দেশের মানচিত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্ব অক্ষুণœ রাখতে হলে ছাত্র-যুব সমাজের কোন বিকল্প নেই। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য ছাত্র-যুবকদের পার্টির চলমান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।

মহিলা কার্বারী নতুনা চাকমা বলেন, পুরুষদের পাশাপাশি নারী সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করতে হলে পুরুষদের শতভাগ আন্তরিক সহযোগিতা দরকার, তা না হলে নারীদের এগিয়ে আসা সম্ভব নয়।

সভার সভপতি বিনয় প্রসাদ কার্বারি বলেন, আমাদের সবাইকে হতকারিতা ও পলায়নবাদী চিন্তা পরিহার করে মুখ্য শত্রু নির্ণয় করে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নিজেকে প্রস্তুত থাকার আহবান তিনি।

বরকল উপজেলা

বরকল উপজেলা সদরে জনসংহতি সমিতির কার্যালয়ে সকাল ১০:০০ টায় জনসংহতি সমিতির বরকল থানা কমিটির সদস্য অপূর্ব মিত্র চাকমার সভাপতিত্বে এই উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য ও বরকল উপজেলা চেয়ারম্যান বিধান চাকমা। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরকল উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য শ্যামরতন চাকমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুচরিতা চাকমা। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বরকল থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রিয় জ্যোতি চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বরকল থানা কমিটির সভাপতি কেতন চাকমা এবং অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্র নেতা নিউটন চাকমা, লক্ষীমন চাকমা প্রমুখ।

অপরদিকে, বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়নের জনসংহতি সমিতির জগন্নাথ ছড়া, আইমাছড়া মুখ, দীঘল ছড়ি গ্রাম কমিটি ও যুব সমিতির যৌথ উদ্যোগে জগন্নাথ ছড়ায়ও এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শুরুতে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। জনসংহতি সমিতির জগন্নাথ ছড়া গ্রাম কমিটির সভাপতি ভুবন বিজয় দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমিতির আইমাছড়া ইউনিয়ন শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক জ্ঞান রতন চাকমা (জ্ঞান) এবং বিশেষ অতিথি আইমাছড়া মুখ গ্রাম কমিটির সভাপতি ধন কুমার চাকমা, দীঘল ছড়ি গ্রাম কমিটির সভাপতি দয়াধন চাকমা। সভা শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।