হিল ভয়েস, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, বান্দরবান: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বান্দরবান পার্বত্য জেলার বান্দরবান সদর উপজেলাধীন কুহালং ইউনিয়নে পৃথক দুটি ঘটনায় এক বৌদ্ধ বিহারের জায়গা বেদখল করে নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের চেষ্টা এবং এক নিরীহ জুম্ম নারীকে হেনস্থাসহ বাড়ি তল্লাসি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০:০০ টার দিকে বান্দরবান সদর সেনা জোনের ২৫ জনের একটি সেনাদল ২০ জন বাঙালি শ্রমিক নিয়ে কুহালং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের থোয়াই গ্য পাড়া এলাকায় আসে। এর পরপরই সেনাদলটি কোনো প্রকার কথাবার্তা ব্যতিরেকেই শ্রমিক ও সেনা সদস্যরা মিলে থোয়াই গ্য পাড়া বৌদ্ধ বিহারের আশেপাশের ঝোঁপ ও গাছ পরিষ্কার করে সেনা ক্যাম্প স্থাপন শুরু করে।
ঘটনার খবর পেয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং বিহারের অধ্যক্ষ ও এলাকাবাসী মিলে সেনাবাহিনীর এই কাজের প্রতিবাদ জানায় ও তৎস্থলে সেনা ক্যাম্প স্থাপনে বাধা প্রধান করে। এতে বিহারের অধ্যক্ষ ও এলাকাবাসীর সাথে সেনা সদস্যদের বাকবিতন্ডা হয়।
এসময় সেনা সদস্যরা জানায়, ‘উপরের নির্দেশ আছে। তাই এলাকাবাসী যতই বাধা প্রদান করুক তারা এখানে থাকবে।’
ইতোমধ্যে এলাকাবাসী ঘটনার বিষয়ে খবর দিলে এলাকার চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং অপর একটি সেনাদল নিয়ে বান্দরবান সদর জোনের জনৈক ক্যাপ্টেন ঘটনাস্থলে আসেন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপস্থিত সবাইকে ঘটনাটি খুলে বললেও সেনাবাহিনী সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করতে চায়।
এসময় এলাকাবাসী দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা যদি এখানে ক্যাম্প বসাতে চান, তাহলে আমাদের বুকে গুলি চালিয়ে ক্যাম্প বসাতে হবে।’ এসময় সেনা জোনের ক্যাপ্টেন এলাকাবাসীকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘আমরা এখানে থাকবো। আপনারা যা করার করেন।’
সেনাবাহিনী ও এলাকাবাসীর মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে, আগামী ৫ দিন তারা (সেনাদলটি) এই বৌদ্ধ বিহারের জায়গায় থাকবে বলে অঙ্গীকার করে সন্ধ্যা ৫:৩০ টার দিকে সেনা সদস্যরা সেখান থেকে চলে যায়। এসময় সেনা সদস্যরা এলাকাবাসীর দুটি মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়ে যায় বলে জানা যায়।
জুম্ম নারী হেনস্থা
গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ বান্দরবান সেনা জোনের জনৈক জোন কম্যান্ডারের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের সেনা ও পুলিশের একটি দল কুহালং ইউনিয়নের পুরাতন চড়ুইপাড়া গ্রামে গিয়ে এক মারমা নারীকে হেনস্থা করে, হুমকি প্রদান করে এবং তার বাড়িতে হয়রানিমূলক তল্লাসি চালায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঐদিন বিকাল ৩:০০টা দিকে উক্ত সেনা ও পুলিশের দলটি পুরাতন চড়ুইপাড়া গ্রামে যায়। এসময় সেনা সদস্যরা ঘুমন্ত টিটিপ্রু মারমা (২৪), স্বামী-পাইমংউ মারমা’কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে বাড়ি তল্লাসি করতে চায়। এসময় টিটিপ্রু মারমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। টিটিপ্রু মারমা বাড়িতে কিছু নেই বলে সেনা সদস্যদের বাড়ি তল্লাসিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে সেনা সদস্যরা বাড়িতে লাঠি মেরে টিটিপ্রু মারমাকে রাগ ও ভয় দেখায়।
সূত্রটি আরো জানায়, এসময় সেনা সদস্যরা টিটিপ্রু মারমাকে তাদের সাথে ধরে নিয়ে যেতে চায়। এতে এলাকার নারী-পুরুষ এগিয়ে এসে সেনা সদস্যদের হাত থেকে টিটিপ্রু মারমাকে ছিনিয়ে নেয়।
এরপর সেনাদলটির কম্যান্ডার গ্রামবাসীকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে চলে যায়।