বান্দরবানে মগ পার্টিকে দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠক!

0
1117
ছবি: মগপার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসী

হিল ভয়েস, ১৩ মার্চ ২০২২, বান্দরবান: সম্প্রতি বান্দরবান পার্বত্য পার্বত্য জেলায় সেনামদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল ‘মগ পার্টি’কে কিভাবে আরও ধ্বংসাত্মক সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট মহলকে নিয়ে একাধিক ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠক করেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, অতি সম্প্রতি বান্দরবান সদরে বান্দরবান সেনা জোন, রুমা সেনা জোন ও রাঙ্গামাটি সেনা ব্রিগেডের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখটি জানাতে না পারলেও এই সপ্তাহের মধ্যে যে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে তা নিশ্চিত করে সূত্রটি।

অপরদিকে, গত ১১ মার্চ ২০২২, শুক্রবার থানচি উপজেলায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে আরও একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। এই বৈঠকে সেনাবাহিনীর থানচি উপজেলা সদর জোন, রুমা সদর জোন, বিজিবি’র থানচি জোনের কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রুমা সেনা জোনের কম্যান্ডার মেজর বদরুল নেতৃত্ব দেন বলে জানা যায়।

উক্ত বৈঠকে সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী ও বিজিবি’র কর্মকর্তাগণ ছাড়াও, জেলা আওয়ামীলীগ, মগ পার্টি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (সেটেলার সংগঠন) এর প্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনীর আজ্ঞাবাহী কিছু জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান ও ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। বৈঠকে মগ পার্টির পক্ষে সেনাবাহিনী ও মগ পার্টি’র মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বপালনকারী মো: রনি নামে এক বাঙালি এবং বর্তমানে মগ পার্টির সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড সবুজ মারমা ওরফে উথোয়াইচিং মারমা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর বান্দরবান জেলা সভাপতি মংপু হেডম্যান এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা’র প্রতিনিধি হিসেবে তিন হেডম্যান উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী মারমাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

বৈঠকে বান্দরবান সদর ও এর আশেপাশের এলাকায় যাতে পার্বত্য চুক্তির পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কোনো প্রকার আনাগোনা এবং কার্যক্রম না থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। মগ পার্টির সশস্ত্র তৎপরতার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেনা অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উক্ত গোপন বৈঠকের বিষয়টি যাতে গোপন থাকে এবং সিদ্ধান্তগুলো যাতে বাইরে প্রকাশ না পায় এজন্য উপস্থিত সকলকে হুশিয়ার করা হয় এবং কারো দ্বারা প্রকাশ পেলে অসুবিধা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

উক্ত আলোচনায় সেনা প্রশাসন কর্তৃক মারমা লিবারেশন পার্টি (মগ পার্টি) এর সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলা, হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানা যায়। এজন্য মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের দুই দলে ভাগ করে দুই এলাকায় তাদের সশস্ত্র তৎপরতা জোরদার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

এর মধ্যে মগপার্টির একটি দল মোতায়েন করা হবে বান্দরবান সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলা ও এর আশেপাশের এলাকায়। অপর একটি দল বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় স্থায়ীভাবে অবস্থান করে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় কার্যক্রম জোরদার করবে।

উল্লেখ্য, মগ পার্টি হচ্ছে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ এর সৃষ্ট ও মদদপুষ্ট একটি সন্ত্রাসী দল। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট ও আশ্রয়-প্রশ্রয়প্রাপ্ত আরও দুই সন্ত্রাসী দল হল সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দল। সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ তাদের কায়েমী স্বার্থে এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং অধিকার কর্মীদের দমন, পীড়ন, অপহরণ ও হত্যার মত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার করে থাকে।

শুধুমাত্র বিগত দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২২) এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ৩ ব্যক্তি খুন, ১৫ ব্যক্তি সাময়িক অপহরণ ও অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, ৪ জন হুমকি ও মারধরের শিকার, ১ জনকে হত্যার চেষ্টা এবং ৪টি বাড়ি তল্লাসীর শিকার হওয়ার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ গত ৫ মার্চ ২০২২ সকাল আনুমানিক ১১:০০ টার দিকে মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নে উনুমং মারমা নামে এক নিরীহ গ্রামবাসী হত্যার শিকার হন।

তবে, ঐ দিনই দুপুর ২:০০ টার দিকে প্রতিপক্ষের গুলিতে রোয়াংছড়ি-রুমা সীমানার সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী ফালংক্ষ্যং নামক জায়গায় মগ পার্টির অন্তত ৪ হতে ৬ জন সশস্ত্র সদস্য নিহত হয় বলে জানা যায়।

বস্তুত এভাবেই সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্ব পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস প্রতিরোধের নামে সংঘাত ও সন্ত্রাস উস্কে দিয়ে চলেছে।