বমপার্টি সন্ত্রাসী কর্তৃক ৬ জন গ্রামবাসীকে অপহরণ, ১ জনকে গলাকেটে হত্যা

0
721
বম পার্টির সদস্যদের ফাইল ফটো

হিল ভয়েস, ২১ অক্টোবর ২০২২, রাঙ্গামাটি: বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়া থেকে ৬ জন তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীকে অপহরণ এবং তাদের মধ্যে একজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) বমপার্টি সন্ত্রাসী ও ইসলামী জঙ্গীরা বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়া থেকে ৬ জন তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীকে অপহরণ করে এবং তাদের সাথে আটকে রাখে।

সেই আটকাবস্থা থেকে প্রথমে একজন গ্রামবাসী ও পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে আরো ৪ জন গ্রামবাসী পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু রাঙ্গোয়া তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) নামে একজন গ্রামবাসী পালিয়ে আসতে পারেননি।

গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) গ্রামবাসীরা রাঙ্গোয়া তঞ্চঙ্গ্যাকে খুঁজতে গেলে বড়থলি ইউনিয়নের উলুছড়া এবং গঙ্গাছড়া পাড়ার মধ্যবর্তী এক স্থানে তার গালাকাটা লাশ উদ্ধার করে। তিনি সাইজাম পাড়ার যুগমোহন তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে বলে জানা যায়।

সন্ত্রাসীরা রাঙ্গোয়া তঞ্চঙ্গ্যার গলা কেটে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

উল্লেখ্য যে, গত ৩ অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনী ও র‌্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) রেইংখ্যং ভ্যালীর বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক এলাকা হিসেবে বিবেচিত জুম্মদের গ্রাম এবং ব্যাপক জনপদে কম্বিং অপারেশন শুরু করে। ৬ অক্টোবর র‌্যাবের সংবাদ ব্রিফিং-এর মাধ্যমে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়’ নামক জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ ও আশ্রয় প্রদানের তথ্য প্রকাশিত হলে অপারেশনের মোড় ইসলামী জঙ্গী এবং জঙ্গীদের আশ্রয়প্রদানকারী বমপার্টির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ায়।

অপারেশনের ১৯ দিনের মাথায় আজ শুক্রবার (২১ অক্টোবর) র‌্যাব ঘোষণা করেছে যে, অপারেশনে ৭ জন ইসলামী জঙ্গী ও ৩ জন বমপার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীসহ মোট ১০ জনকে আটক করেছে।

জেএসএস ইসলামী বিরোধী বলে বমপার্টির অপপ্রচার:

গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) এক ভিডিও বার্তায় বমপার্টির একজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দাবি করেন যে, “জেএসএস সন্ত্রাসীদের অভিযোগ ইসলাম ধর্ম সম্প্রসারণ করার জন্য এই পাহাড়ের বুকে ইসলাম প্রচার করছে এবং কেএনএফ ক্যাম্পে ইসলামী গ্রুপ বা বিদেশি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এমন মিথ্যাজাত তথ্য দিয়েই মূলত আমাদের ক্যাম্পে যৌথবাহিনী হামলা চালানোর ফন্দি আঁটে। কেএনএফ-এর সাথে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা নাই।”

এ বিষয়ে হিল ভয়েসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে জনসংহতি সমিতির অগাষ্টিনা চাকমা বলেন, বমপার্টির এই অভিযোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীর সাথে বমপার্টির সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমরা প্রথমে জেনেছি স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ নিউজপোর্টাল ‘হিল ভয়েস’-এ প্রকাশিত পর পর কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে। এরপর এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় গত ৬ অক্টেবার ২০২২ ঢাকায় র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। উক্ত সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায়, পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বমপার্টির গোপন আস্তানায় ইসলামী জঙ্গীদের অবস্থান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথা স্বীকার করেছে র‌্যাব কর্তৃক ধৃত ১২ জন ইসলামী জঙ্গী। তখন থেকেই ইসলামী জঙ্গী ও জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কাজেই জেএসএসের উস্কানীতে নয়, বমপার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হঠকারি কর্মকান্ডের কারণে আজ তাদের এই পরিণতি বলে অগাষ্টিনা চাকমা উল্লেখ করেন।

উক্ত ভিডিও বার্তায় বমপার্টি আরো অভিযোগ করে যে, “জেএসএস সন্ত্রাসীরা ইসলাম বিরোধীতা করে আসছে, সেই শান্তি চুক্তির আগ থেকে। …জেএসএস-এর মূল দাবি ছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামের সামরিকায়ন এবং ইসলাম সম্প্রসারণ বন্ধ করা।” এ প্রসঙ্গে অগাষ্টিনা চাকমা বলেন, “জেএসএস কখনোই ইসলাম বিরোধী কিংবা মুসলমান বিদ্বেষী নয়। ইসলাম বিরোধী নয় বলেই অনেক গণতন্ত্রপন্থী ও মানবতাবাদী মুসলমান ব্যক্তি জেএসএসের নেতৃত্বাধীন জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে চলেছে।”

অগাষ্টিনা চাকমা আরো বলেন, “তবে জেএসএস জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামী সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম স্মরণাতীত কাল ধরে জুম্ম অধ্যুষিত একটি অঞ্চল। অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পরিণত করার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান ও অধুনা বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। অর্থাৎ ইসলামী আগ্রাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে।” বিশ্বের কোনো সভ্য রাষ্ট্রে এ ধরনের জাতিগত ও ধর্মীয় আগ্রাসন গ্রহণযোগ্য নয় বলে মিজ চাকমা জানান।

“বরঞ্চ বমপার্টিই আর্থিক সহায়তা লাভের বিনিময়ে ইসলামী জঙ্গীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামী সম্প্রসারণবাদের সাথে যুক্ত হয়ে স্বজাতির ধ্বংসে মেতে উঠেছে, যা নিজের পায়েই নিজে কুড়াল মারার সামিল” বলে অগাষ্টিনা চাকমা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।