পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন: সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো, সম্পাদক জগদীশ চাকমা

0
393

হিল ভয়েস, ২২ অক্টোবর ২০২২, ঢাকা: গতকাল (২১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’তে শহীদ মুনীর চেীধুরী মিলনায়তনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) ঢাকা মহানগর শাখার বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউন্সিলে ছাত্রনেতা রেং ইয়ং ম্রোকে সভাপতি ও জগদীশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা (মিল্টন) এবং সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো। পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক সতেজ চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ প্রমুখ।

কাউন্সিল ও সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিপেন চাকমা। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের জন্য। কিন্তু চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়নে অনীহা প্রকাশের মাধ্যমে সরকার বোকামির মত কাজ করেছে। চুক্তিকে বাদ দিয়ে পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের প্রক্রিয়া কোনো ভাবেই এগোতে পারে না। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে ছাত্র সমাজকে অধিকরতরভাবে সামিল হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

সংহতি বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এমন একটি সংগঠন যেটি পাহাড়ের ১৪টি জাতিগোষ্ঠীকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, অত্যাচার, গণহত্যা ও সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। পাহাড়ের মানুষ বাংলাদেশের অপরাপর জনগোষ্ঠীর মতো সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করার স্বপ্ন দেখেছে। তাইতো তারা অধিকার ছিনিয়ে আনতে দুই যুগেরও অধিক সশস্ত্র সংগ্রাম করে তৎকালীন সরকারের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বারংবার দাবি করে আসছে যে, পাহাড়ে কিছু জঙ্গী গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এতদিন কেউ বিশ্বাস করেনি। কিন্তু বিষয়টির সত্যতা সরকারের প্রশাসনিক মহল সাম্প্রতিক সময়ে নাটকীয়ভাবে স্বীকার করেছে।”
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “বান্দরবানে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আদিবাসীদের খাদ্যের উৎস ধ্বংস করে, হুমকি দিয়ে, জুম্মদের গ্রামের পর গ্রাম উচ্ছেদ করেছে।” তিনি পাহাড়ের ছাত্র সমাজকে আহবান জানিয়ে বলেন, “পাহাড়ের জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে, জুম্ম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আপনাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “চুক্তির মধ্যে মৌলিক বিষয়গুলো হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা পরিষদ নির্বাচন, আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন, ভূমি কমিশন কার্যকর করা, স্থানীয় পুলিশ বাহিনী গঠন করা ইত্যাদি। চুক্তির বিরোধী যে ষড়যন্ত্র চলছে, সেই ষড়যন্ত্রগুলো বিষয়ে আমাদের আলোকপাত করা দরকার।” তিনি সামগ্রিক স্বার্থে সরকারকে অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জোর দাবী জানান।

আঞ্চলিক পরিষদের বিধিমালা কার্যকর করা হয়নি দাবি করে তিনি আরো বলেন, “পার্বত্য চুক্তির আলোকে আঞ্চলিক পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সংস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো উন্নয়ন হতে গেলে, সেখানে সরকার প্রণীত কোনো আইন জুম্ম জনগণের পরিপন্থী হলে সে আইন বাতিল, সংশোধন, বিয়োজন, সেই আইন জুম্ম জনগণের সাথে যায় কিনা সেই উন্নয়নকে প্রশ্ন করা, বাতিল করার ক্ষমতা আঞ্চলিক পরিষদের রয়েছে। কিন্তু আজকে চুক্তির ২৫ বছর হতে চললেও আঞ্চলিক পরিষদের তেমন কোনো ক্ষমতা নেই। এইসব অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা (মিল্টন) তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আজকে জুম্ম ছাত্র সমাজ একত্রিত হয়েছে। যে ছাত্র সমাজকে নিয়ে আমরা গর্ব করছি। ৭০ দশকে আমি ছাত্র ছিলাম। আমরা সেই সময়ে যে কীভাবে সংগ্রাম করে পড়ালেখা করেছিলাম। এখন সেই বিষয়গুলোকে যদি আপনাদের সামনে তুলে ধরে মতবিনিময় করি হয়তো আপনাদের বিশ্বাস নাও হতে পারে। সেটা ছিল শিক্ষা আন্দোলনের একটা স্তর।”

পার্বত্য চট্টগ্রামকে শিক্ষায় আলোকিত করার জন্য সেই সময়টা ছিল একটা আন্দোলনের স্তর উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সেই লড়াইয়ে আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন যে অবস্থায় ছিল, আমাদের নেতৃবৃন্দ, যাদেরকে আমরা আমাদের নেতা হিসেবে চিনতাম তাদের অনেক সাধনা, পরিশ্রম করতে হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনেও ছাত্র সমাজকে আরো অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।”

জনসংহতি সমিতির এই নেতা আরো বলেন, “ব্যক্তিত্ব দুর্বল হলে নেতৃত্বও দুর্বল হবে। তাই পিসিপি’র নেতৃবৃন্দকে আরো অধিক ব্যক্তিবান হয়ে, দায়বোধ নিয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।”

পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো বলেন, “যে সিস্টেম ও শাসন ব্যবস্থা আমাদেরকে সাংগ্রাই এর আনন্দ উপভোগ করতে দেয় না, যে সিস্টেম আমাদেরকে বিঝুর সময় হই-হুল্লোরের আনন্দ থেকে বিরত রাখে, যে শাসন আমাদেরকে জুমঘরের ইজোরে বসে ভরা পূর্ণিমার জ্যোৎস্না থেকে বঞ্চিত করে সেই সিস্টেম ও শাসন’কে চ্যালেঞ্জ করতে হবে পিসিপি’র নেতৃবৃন্দকে।”

পরে রেং ইয়ং ম্রো’কে সভাপতি, জগদীশ চাকমা’কে সাধারণ সম্পাদক ও রিপেন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা। এছাড়াও ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপি বাসাবো শাখা, ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পলিটেকনিক শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জগদীশ চাকমা। অন্যদিকে পিসিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটিকে ঘোষণা করে শপথ বাক্য পাঠ করান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য সাবেক সভাপতি সতেজ চাকমা।