কুড়িগ্রামে সংখ্যালঘু পল্লীকবি রাধাপদ রায়ের ওপর দুই মুসলিম যুবকের হামলা, উদীচীর নিন্দা

0
281

হিল ভয়েস, ২ অক্টোবর ২০২৩, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ‍উপজেলার পল্লীকপি রাধাপধ রায় (৮০) পূর্বশত্রুতার জেরে দুই মুসলিম যুবকের দ্বারা হামলার শিকার হন। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

গত শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩) উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মাধাইখাল গ্রামে রাধাপদ রায়কে মারধর করে রক্তাক্ত করেন স্থানীয় কদু মিয়া (৪২) ও তার ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম (৩৬)। তারা ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বচুয়ারপাড় গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

এ হামলার ঘটনায় কবি রাধাপদ রায়ের ছেলে জুগল রায় গত রবিবার (১ অক্টোবর) হামলাকারী পাশের এলাকার অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নাগেশ্বরী থানায় মামলা করেছেন। গত শনিবারের ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত দুই ভাই পলাতক রয়েছে। মামলার ৩ দিন অতিক্রম হয়ে গেলেও এখনো পলাকত দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে পথরোধ করে গত শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে পল্লীকবি রাধাপদ রায়ে ওপর  আক্রমণ চালায় মো. রফিকুল ইসলাম ও কদুর আলী নামের দুই ভাই। এসময় তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কবির শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে।

কবি রাধাপদ সরকারের ছেলে জুগল রায় বলেন, ‘পারিবারিক পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে রফিকুল ইসলাম ও কদুর আলী আমার বাবার ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় থানায় মামলা না করার জন্য আমাদের হুমকিও দেন। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি রাধাপদ সরকার মুঠোফোনে বলেন, ‘রফিকুলের সঙ্গে আমার পূর্বের কোনো শত্রুতা ছিল না। রফিকুলের ভাই কদুর আলীর সঙ্গে ছয় মাস আগে একবার কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কদুর আলী তাঁর ভাই রফিকুল ইসলামকে দিয়ে আমার ওপর আক্রমণ করেন। ছয় মাস আগের ওই ঘটনা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। তাঁরা আমাকে একা পেয়ে এভাবে আমার ওপর হামলা চালাবেন, আমি কল্পনাও করতে পারিনি। যেভাবে আক্রমণ শুরু করেছিলেন, এলাকাবাসী না থাকলে সেদিন তাঁরা আমাকে জানেই মেরে ফেলতেন। ভগবানের কৃপায় আমি কোনোরকমে জানে বেঁচে আছি।’

উল্লেখ্য, রাধাপদ রায় জীবনে বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি। পড়েছেন মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। নিজের লেখা গান, কবিতা মানুষকে শুনিয়ে সামান্য উপার্জনে চলে তার সংসার। আঞ্চলিক ভাষায় তার লেখা গান ও কবিতাগুলো বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার লেখা ‘কেয়ামতের আলামত জানি কিন্তু মানি না’ কবিতাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ পর্যন্ত রাধাপদ সরকারের নিজের লেখা আঞ্চলিক ভাষায় শতাধিক গান ও কবিতা রয়েছে।

এই ন্যাক্কার জনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গত সোমবার (২ অক্টোবর ২০২৩) এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, একজন বর্ষীয়ান পল্লীকবির ওপর এ ধরনের হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা অবিলম্বে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।