কাউখালীতে সেনা ক্যাম্প স্থাপন বন্ধের দাবিতে সেনাপ্রধানের নিকট গ্রামবাসীর স্মারকলিপি প্রেরণ

0
1009

হিল ভয়েস, ২২ ডিসেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন কাউখালী উপজেলার ফটিকছড়ি ইউনিয়নের দোবাকাবা ও নভাঙা এলাকার জুম্ম গ্রামবাসীরা তাদের এলাকায় সেনা ক্যাম্প স্থাপন বন্ধের দাবিতে সেনাপ্রধানের নিকট স্মারকলিপি প্রেরণ করেছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার পাইক্রামা মারমার নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট গ্রামবাসীদের একটি প্রতিনিধি দল কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শতরূপা তালুকদারের কাছে স্মারকলিপিটি পেশ করেন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শতরূপা তালুকদার স্মারকলিপিটি গ্রহণ করলেও রিসিভ কপি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর আগে ২৫ নভেম্বর ২০২০ একই দাবিতে গ্রামবাসীরা তার মাধ্যমে সেনাপ্রধানের নিকট স্মারকলিপি প্রেরণ করলে তিনি ঊর্ধ্বতন মহল থেকে নানা চাপের সম্মুখীন হন বলে তার অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, দোবাকাবা-নভাঙা এলাকাবাসী জীবন-জীবিকার জন্য গাছ-বাঁশ তথা বনের উপর নির্ভরশীল। সেনা ক্যাম্পটি যে জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে সেখানে ৯ জন গ্রামবাসীর সৃজিত বাগান-বাগিচা ও জমি রয়েছে। ক্যাম্প স্থাপিত হলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, উক্ত জমি ও বাগানের ভোগদখল থেকে বঞ্চিত হবেন।

এতে আরও বলা হয়, সেনা ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে ভূমি-বাগান মালিকগণ ছাড়াও অন্যান্য গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, গৃহ নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ, জ্বালানী কাঠ আহরণ, বন্য তরি-তরকারী, ফলমূল ও ঔষধপত্র সংগ্রহসহ আরও বিবিধ প্রয়োজনে তাদেরকে বনে যেতে হয়। ক্যাম্প স্থাপিত হলে ভূমি মালিকের জমি বা বাগান এবং তার আশেপাশের বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে আমাদের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হবে, জীবনধারণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ক্যাম্প স্থাপন করা হলে বন ও পরিবেশেরও ক্ষতি হবে। কারণ ক্যাম্প নির্মাণের জন্য প্রচুর গাছ-বাঁশ ধ্বংস ও পাহাড় কাটতে হবে।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গ্রামবাসীরা কয়েক বছর আগে নিজেরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে দোবাকাবা ছড়ায় (নদীতে) একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। এতে একটি জলাশয় সৃষ্টি হয়। যেখানে ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে তার সাথে লাগোয়া। গ্রামবাসীরা এই জলাশয়ে মাছ চাষ করার পাশাপাশি এর পানি ব্যবহার করে প্রতি সপ্তাহে বর্মাছড়ি বাজারে গাছ ও বাঁশ পরিবহণ করে থাকে। ক্যাম্পটি স্থাপিত হলে সেটা করা সম্ভব হবে না। বাজারে গাছ-বাঁশ বিক্রয় করতে না পারলে তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ বহন করতে সক্ষম হবেন না। সন্তানদের শিক্ষাজীবন অকালে শেষ হয়ে যাবে।

নতুন করে সেনাক্যাম্প স্থাপনকে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী আখ্যায়িত করে তারা বলেন, চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করার শর্ত লিখিত রয়েছে। তবুও সরকার সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করছে না। স্মারকলিপিতে দুই গ্রামবাসীর পক্ষে ৩০ জন নারী-পুরুষ স্বাক্ষর ও টিপসই প্রদান করেন।

স্মারকলিপির অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, রাঙ্গামাটি ডেপুটি কমিশনার, রাঙ্গামাটি ব্রিগেড কমান্ডারকে ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে ২৪ নভেম্বর ২০২০ জুম্মদের ভূমিতে সৃজিত বাগানের গাছ কেটে নতুন এই ক্যাম্প নির্মাণ কাজ তদারকি ও তত্ত্বাবধানকারী সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেনের কাছে ক্যাম্প স্থাপন বন্ধের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন ভূমির মালিকরা।

উল্লেখ্য, ২২ নভেম্বর ২০২০ তারিখ হতে দোবাকাবা ও নভাঙ্গা এ দুই গ্রামের সীমান্তবর্তী স্থানে জোরপূর্বক জমি দখল করে ও বাগানের গাছ কেটে সেনাবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থান করছে। এ নিয়ে এলাকায় জনমনে অসন্তোষ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।