করোনার দুর্যোগেও রোয়াংছড়িতে সেনা হয়রানি ও অবৈধ তথ্যসংগ্রহ

0
2408

হিল ভয়েস, ২৬ মে ২০২০, বান্দরবানকোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট লকডাউনের ফলে জনজীবনে যেখানে দুর্ভোগ ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে বান্দরবানের রোয়াংছড়ির গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক জুম্মদের হয়রানি এবং তাদের কাছ থেকে অবৈধ ও রহস্যজনক তথ্যসংগ্রহ জুম্ম গ্রামবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

সেনাবাহিনীর এইসব কর্মকান্ড স্থানীয় জুম্মদের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র কিনা সেই প্রশ্নও এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রায় ১১টি জুম্ম গ্রামে রোয়াংছড়ি সেনা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী বেশ কয়েকদিন ধরে গ্রামবাসীদের আইডি কার্ড, জন্মনিবন্ধন সনদ, পরিবারের আয়ের উৎস, পরিবারের সদস্যসংখ্যা, ছেলেমেয়েরা কী করে, কোন ক্লাশে পড়ে ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করছে। এমনকি সেনা সদস্যরা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদেরছবিও তুলে নিচ্ছে।

জানা গেছে, আজ ২৬ মে ২০২০ সকালের দিকেও রোয়াংছড়ি সেনা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী বিভিন্ন গ্রামে এসে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং গ্রামবাসীদের ছবি তোলে।ঐ দিন বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক জ্ঞান রঞ্জন চাকমা ও তার পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং ছবি তোলা হয়। তিনি বর্তমানে থাকেন রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ওয়াগয় পাড়া গ্রামে।

এছাড়া সেনাবাহিনীর অপর একটি দল ঐদিন সকাল ১০ ঘটিকায় রোয়াংছড়ির ব্যাঙছড়ি দোকান পাড়ায় ছবি তোলার কার্যক্রম শুরু করে। অপরদিকে সেনাবাহিনী কয়েকটি এলাকায় কার্বারীর মাধ্যমে নির্দেশনা পাঠায়, যাতে গ্রামবাসীরা স্কুলে এসে সেনাবাহিনীর নিকট ছবি তোলে।

গ্রামবাসীরা এই তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তোলার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে, সেনাবাহিনী গ্রামবাসীদের করোনার ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হবে বলে জানায়। কিন্তু ছবি তোলার কার্যক্রমে কোন সিভিল প্রশাসনের ব্যক্তি, স্বাস্থ্যবিভাগের কোন কর্মী না থাকায় গ্রামবাসীরা এই তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তোলার বিষয়ে ব্যাপক আতঙ্ক ও উদ্বেগ বোধ করছেন।

করোনার ত্রাণ দেয়া হবে বলে যে গ্রামগুলোতে তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তোলা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে সেগুলো হল- ওয়াগয় পাড়া, নাটিংঝিড়ি পাড়া, বটতলী পাড়া, চক্ষুলাল পাড়া, লক্ষীচন্দ্র পাড়া, ললিত মোহন পাড়া, সিরামনি পাড়া, বিনাঙ্গ পাড়া, রুরু পাড়া, তাইম্রংছড়া পাড়া, শুকনা ঝিড়ি পাড়া ইত্যাদি।

এছাড়া সেনাবাহিনী প্রায় সময় বিভিন্ন গ্রামের কার্বারিদের (গ্রাম প্রধান) ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে, তথ্য জানতে চেয়ে, অহেতুক বসিয়ে রেখে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

তার মধ্যে সেনাক্যাম্পে ডেকে নিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন ওয়াগয় পাড়া গ্রামের কার্বারি বিমল তঞ্চঙ্গ্যা, বটতলী গ্রামের কার্বারি লক্ষণ তঞ্চঙ্গ্যা, নাটিংঝিরি গ্রামের কার্বারি বিশ্বজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা, তুলাছড়ি ভিতর পাড়ার কার্বারি ক্যফা মারমা প্রমুখ।

করোনা ত্রাণসামগ্রী প্রদানের নামে এধরনের তথ্য ও পরিবারের ছবি নেয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকগ্রামবাসী।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেনাবাহিনী প্রায় নিয়মিত রাত ১১:০০টা হতে ৪:০০ টার মধ্যে নাটিংঝিড়ি, ওয়াগয় পাড়া, তাইম্রংছড়া, বটতলী, নোয়াপাড়া ইত্যাদি গ্রামে সন্ত্রাসী খোঁজার নাম করে জনগণকে হয়রানি করে।

এছাড়া রোয়াংছড়িতে যারা বিকাশ সার্ভিসে কাজ করেন, যেমন- বাবুল তঞ্চঙ্গ্যা, রুবেল সেন, আপন তঞ্চঙ্গ্যা, মাহফুজ প্রমুখকে আগামীকাল সেনাক্যাম্পে গিয়ে দেখা করার জন্য বলেছে সেনাবাহিনী।

গ্রামবাসী আরও জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় বান্দরবানের বালাঘাটাস্থ এবং রোয়াংছড়িতে দুটি সশস্ত্র সংস্কারপন্থী গ্রুপ রাতের আধারে প্রবেশ করে। এরপর থেকে সেখানে সাধারণ মানুষের উপর আতঙ্ক নেমে আসে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে এসব এলাকার জুম্ম গ্রামবাসীদের কাছ থেকেও বিভিন্ন তথ্য ও ছবি সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে।