আলিকদমে আদিবাসী গ্রামবাসীর নির্মাণাধীন গির্জা, বসতঘর ভেঙ্গে দিলো বন বিভাগ

0
1208
ছবি: বনবিভাগের লোকদের কর্তৃক নির্মাণাধীন গির্জা ভাঙচুরের দৃশ্য

হিল ভয়েস, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন আলিকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়া গ্রামবাসীর অর্থায়নে নির্মাণাধীন আদিবাসী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় উপাসনালয় গির্জা ও ২টি বাড়ি লামা বন বিভাগ কর্তৃক ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সকাল ১১:৩০ টার দিকে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ার কার্বারি ও গ্রামবাসীর সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লামা বন বিভাগের স্পেশাল টহল বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আতিকুল ইসলাম ও মাতামূহুরী সংরক্ষিত বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মোঃ মিনার চৌধুরীর নেতৃত্বে ৮-১০ সদস্যের একটি দল হঠাৎ সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ায় এসে এই গির্জা এবং আরও দুটি বসতঘর ভেঙে দেয়।

গ্রামের মাইকেল ত্রিপুরা, আব্রাহাম ত্রিপুরা, জগৎ ত্রিপুরা, পিতর ত্রিপুরা ও কার্বারি সাথীরাম ত্রিপুরা বলেন, গ্রামবাসীর একমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির পুরাতন ভবনটি নতুনভাবে নির্মাণের কাজ চলছিল। ঐ সময় গ্রামের লোকজন পাহাড়ে জুম ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত ছিল। পাড়ায় যখন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকজন ছিলো না তখন বন বিভাগের লোকজন এসে আমাদের গির্জাটি ভেঙ্গে দিয়েছে।

গ্রামবাসীরা ইতোমধ্যে ভাঙচুরের বিষয়ে আলিকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সায়েদ ইকবাল, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মংব্রাচিং মার্মা ও জেলা পরিষদ সদস্য ধুংড়ি মং মার্মার নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

গ্রামের কার্বারি সাথীরাম ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যামনি ত্রিপুরা পাড়া ও সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ার লোকজনের একমাত্র গির্জা হলো এটি। দুই পাড়ার লোকজন গির্জায় এসে প্রার্থনা করে। আগে বাঁশের বেড়ার ছিলো গির্জাটি। সে কারণে আমরা দুইপাড়ার লোকজন দীর্ঘ ১৫ বছর অর্থ সঞ্চয় করে পাড়া থেকে দশহাত দূরে এ গির্জাটি তৈরী করছিলাম।

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ধুংড়ি মং মার্মা জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাড়াটি অনেক পুরাতন। তারা নির্মাণাধীন গির্জা ভেঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।

আলিকদম ত্রিপুরা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিলিপ ত্রিপুরা জানান, গির্জা ভেঙ্গে বন বিভাগ আমাদের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আমরা এই গর্হিত ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।

কুরুকপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বনবিভাগের নেতৃত্বে গির্জা ভাঙা কোন ভাবেই ঠিক হয়নি। তারা অন্যায় করেছে। তারা সঠিক স্থানে কাজ করছে না। মাতামহুরী রির্জাভ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পাথর উত্তোলন, বালু উত্তোলন হচ্ছে, সে দিকে অভিযান না চালিয়ে তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এসে অভিযানের নাম করে ভেঙ্গে দিলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে আলিকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সায়েদ ইকবাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নতুন করে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক আদিবাসী জুম্মদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বাধা প্রদান, ধর্মীয় কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি ও ধর্মীয় পরিহানির ঘটনা ঘটার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২৫ এপ্রিল ২০১৯ রাঙ্গামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলার সেনাবাহিনীর ২১ বীর রেজিমেন্টের মাইনী জোনের ক্যাপ্টেন খালেদ ও ওয়ারেন্ট অফিসার হাসমতের নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য বাঘাইছড়ি উপজেলার সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের শিজকমুখ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে এক সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে। এতে বিহারের ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদন ও পবিত্রতা রক্ষায় চরম প্রতিবন্ধকতা ও ধর্মীয় পরিহানি সৃষ্টি হয়।

গত ১৫ মে ২০২০ খাগড়াছড়ি জেলাধীন মাটিরাঙ্গা উপজেলায় মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের অভ্যা মৌজার জুম্ম অধ্যুষিত ৯নং ওয়ার্ড এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসীরা একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করার সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দেয় এবং বিজিবি সদস্যদের হুমকিতে গ্রামবাসীরা বিহার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।

গত ৩ আগস্ট ২০২০ সকাল প্রায় ১০:৩০ টার দিকে রাঙ্গামাটির রাজমনি পাড়া ক্যাম্প ও সুবলং ক্যাম্পের এক যৌথ সেনাদল রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বালুখালির কাইন্দা এলাকায় আষাঢ়ি পূর্ণিমা উপলক্ষে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে এক বৌদ্ধ বিহার ঘেরাও করে পূর্ণার্থীদের ডেকে নিয়ে হয়রানিমূলক জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করে।